প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবেন চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড লাইনের মাধ্যমে মিলবে ইন্টারনেট সংযোগ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সমুদ্রের তলদেশে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ভূ-পৃষ্ঠ হতে ১০ থেকে ২০ ফুট গভীরতায় দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যাবল নেটওয়ার্ক সমুদ্র তীরবর্তী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড অংশে ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে যুক্ত করা হয়েছে।
সন্দ্বীপে ১৬ ও সীতাকুণ্ডে ১০ কিলোমিটার হেডলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। ৩৩ হাজার ভোল্টের ২টি ক্যাবল বসানো হয়েছে। প্রতিটি ক্যাবলে ৩টি কোর ও একটি অপটিক্যাল ফাইবার আছে। একটি ক্যাবলের মাধ্যমে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হবে। অন্য ক্যাবলটি বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধি পেলে এই ক্যাবলের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই দুটি ক্যাবলের মাধ্যমে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা যাবে। এগুলোর স্থায়িত্বকাল ৫০ বছর। প্রকল্পের আওতায় একটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন ও ২টি ট্রান্সফরমার বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি ১ হাজার ৮০০টি পোল বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৫০০টি পোল বসানো হয়েছে।
সন্দ্বীপে বর্তমানে ২ হাজার গ্রাহককে জেনারেটরের মাধ্যমে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গড়ে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় সন্দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুত পাবেন। প্রথমে দৈনিক ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও পরবর্তীতে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দেয়া যাবে। বিদ্যমান লাইনের আওতায় সর্বোচ্চ ৩০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। পাশাপাশি অপর একটি ওভারহেড লাইন বসানো হলে সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
তিনি বলেন, সন্দ্বীপ চ্যানেলে স্রোত বেশি থাকায় ক্যাবল স্থাপন কার্যক্রম কিছুটা বিলম্বিত হয়। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও মূলত ২১ ডিসেম্বর থেকে সমুদ্রে ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করা হবে।
সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বাংলানিউজকে বলেন, সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হলে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন ও জেগে ওঠা চরগুলোতে শিল্পাঞ্চল স্থাপন করা যাবে। বিদ্যুৎ পেলে বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, যেখানে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজও সহজ হবে।
তিনি বলেন, কাজ প্রায় শেষ। আশা করছি নভেম্বর মাসের মধ্যেই সন্দ্বীপবাসী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বিদ্যুৎ পাবে।
২০০৫ সালে দেশ প্রথমবারের মতো সাবমেরিন ক্যাবল ‘এসএমডব্লিউ-৪’এ যুক্ত হয়, যার মাধ্যমে ২৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যায়।
২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চালু হয় দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন। এ ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে সেকেন্ডে ১৫০০ গিগাবাইট গতির ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে আগামী বছরই দেশে প্রতি সেকেন্ডে ২ টেরাবিট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ চাহিদায় পৌঁছাবে। এজন্য তৃতীয় একটি সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
এসি/টিসি