ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিপিসির তেল আমদানির এলসিতে অনীহা ব্যাংকের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
বিপিসির তেল আমদানির এলসিতে অনীহা ব্যাংকের

চট্টগ্রাম:  রূপালী ব্যাংক লিমিটেডে ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার এফডিআর এবং শর্ট নোটিশড ডিপোজিট (এসএনডি) রাখার পরও জ্বালানি তেল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে বিড়ম্বনায়  পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

বিপিসি প্রতি মাসে ১২ থেকে ১৯টি এলসি খোলে, লেনদেন হয় ৩০০-৫০০ মিলিয়ন ডলার। একটি জাহাজ জ্বালানি তেল নিয়ে আসার ১০ দিন আগে এলসি খুলতে হয়।

আগামী ২৭ অক্টোবর যে জাহাজটি আসছে সেটির এলসি নিতে প্রথমে অপারগতা জানায় রূপালী ব্যাংক। এরপর এলসিটির ব্যাপারে আরেকটি ব্যাংকের অনুমোদন নেয় বিপিসি।
পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে রোববার (২১ অক্টোবর) বিকেলে এলসিটি খোলার সিদ্ধান্ত জানায় বিপিসিকে।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিপিসি ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ৬৮ লাখ টন পরিশোধিত-অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। এর বিপরীতে ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করেছে ৯ হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিপিসি লোকসানে থাকলেও এরপর ঘুরে দাঁড়ায়। একসময় ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের এলসি খুলত বিপিসি। এর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী ব্যাংকের বাইরে বিদেশি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, সিটি ব্যাংক (এনএ), এইচএসবিসি এবং বেসরকারি ব্যাংক ব্র্যাক, ওয়ান ও প্রাইম। ডলারের এট অ্যাকচুয়াল রেট দাবি করায় বিদেশি ও বেসরকারি ব্যাংকে এলসি খোলা একপ্রকার বন্ধ করে দেয় বিপিসি। কিন্তু জানুয়ারি থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও ডলারের মার্কেট রেইট বা ফরওয়ার্ড রেইট দাবি করে আসছে। সোনালী ব্যাংক মাসে ৭০ মিলিয়ন ডলারের ৩টি এলসি করবে বলে জানায় বিপিসিকে।

বিষয়টি স্বীকার করে বিপিসির পরিচালক (অর্থ) মো. আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে বিপিসি। সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত যে চারটি ব্যাংকে তেল আমদানির এলসি খোলা হয় সেগুলো মূল্য পরিশোধের সময় মার্কেট রেইট বা ফরওয়ার্ড রেইট চাইছে। রূপালী ব্যাংক তো চিঠি দিয়েছে বিপিসিকে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের রেইট কার্ডের বাইরে ডলারের মূল্য দিতে পারি না। এতে মূল্যস্ফীতি যেমন বাড়বে তেমনি অডিট আপত্তির মুখে পড়তে হবে। কারণ শুধু বিপিসি এলসি খুলছে তা নয়, অনেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এলসি খুলছে।

তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের মতো যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মুনাফার কথা চিন্তা করে তাহলে তো হবে না। জাতীয় স্বার্থে জ্বালানি তেলের এলসি খোলার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এখানে লাভ-লোকসানের বিষয়টি মুখ্য নয়।  

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর দেশে ভর্তুকিমূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বর্তমানে দৈনিক ৩০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিসি। অন্যদিকে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিপিসির ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের (৬৮৬৪ কোটি টাকা) এলসি খুলেছে রূপালী ব্যাংক। এর মধ্যে চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৪০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে ব্যাংকটির। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত অঙ্কে (রেইট) বিপিসি ইউএস ডলারের মূল্য পরিশোধ করায় এ লোকসান হয়েছে। তাই ব্যাংকটির মহাব্যবস্থাপক খান ইকবাল হোসেন বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) চিঠি দিয়ে তিনটি এলসির বিপরীতে বাকি থাকা প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলারের বিলমূল্য পরিশোধে আর্থিক ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী বলে জানিয়েছেন। চিঠিতে মার্কেট রেইট বা ফরওয়ার্ড রেইটে ডলার কেনার সম্মতি দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিপিসির এলসি খোলা হয়। দুইটিই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ৬০০ কোটি টাকার এফডিআর, ৯০ কোটি টাকার এসএনডি, লালদীঘি শাখায় ১২০০ কোটি টাকার এফডিআর, ১০৩ কোটি টাকার এসএনডি এবং ঢাকার লোকাল অফিসে ৫০ কোটি টাকার এফডিআর ও ৭৯৭ কোটি টাকার এসএনডি রেখেছে বিপিসি।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৮
এআর/টিসি          

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।