বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) মহানগর স্পেশাল জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালতে এ মামলা দায়ের করেন রুবি বেগম নামে এক নারী।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- আকবরশাহ থানার ওসি জসিম উদ্দিন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলাউদ্দিন ও মো. আশহাদুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক ( এএসআই) সাইফুল ইসলাম ও আবু বক্কর সিদ্দিক এবং কনস্টেবল মো. নুরুল আলম।
বাদির আইনজীবী ফজলুল করিম ভু্ঁইয়া বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অ্যাডভোকেট ফজলুল করিম ভু্ঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে আকবরশাহ থানার ওসি জসিম উদ্দিনসহ ছয় পু্লিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মহানগর স্পেশাল জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালতে মামলা দায়ের করেছেন রুবি বেগম।
মামলায় ওসি জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ এর ৫(২) এর দণ্ডবিধির ১৬১ ও ১২০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদি রুবি বেগম উল্লেখ করেন- গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সন্ধ্যায় আকবরশাহ থানার ফিরোজশাহ কলোনী এলাকায় মো. ইব্রাহিম নামে এক লোক বিদ্যুৎস্পৃষ্টে গুরুতর আহত হন। পরে বাদি রুবি বেগমের স্বামী মো. আবুল কাশেম প্রকাশ আলমগীর, আহত ইব্রাহিমের স্ত্রী বিবি রাবেয়া, আহতের ভাইয়েরা মিলে ইব্রাহিমকে স্থানীয় আল আমিন হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তারা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ইব্রাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এসময় চমেক হাসপাতাল থেকে মো. আবুল কাশেম প্রকাশ আলমগীরকে আটক করেন এক পুলিশ সদস্য। তাৎক্ষণিক জানানো হয় ইব্রাহিম মারা যাওয়ার ঘটনায় আকবরশাহ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে এবং এ মামলায় ইব্রাহিমকে আটক করা হয়েছে।
সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে মো. আবুল কাশেম প্রকাশ আলমগীরকে চমেক হাসপাতাল থেকে আকবরশাহ থানায় নিয়ে আসেন এসআই আশহাদুল ইসলাম। আলমগীরকে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত আকবরশাহ থানায় আটকে রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে আলমগীরের পরিবারের কাউকে থানায় আলমগীরের সঙ্গে দেখাও করতে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয় এজাহারে।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার বাদি থানায় গেলে আলমগীরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা দাবি করা হয় এবং এ টাকা দেওয়া না হলে আলমগীরকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে দাবি করা হয়। বাদি পরে জানতে পারেন তার স্বামী মো. আবুল কাশেম প্রকাশ আলমগীরকে একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
আকবরশাহ থানা সূত্রে জানা গেছে, ২৮ সেপ্টেম্বর মো. আবুল কাশেম প্রকাশ আলমগীর ও তার স্ত্রীর ভাই মো. নুরে আলম প্রকাশ নুরুর নামে অস্ত্র উদ্ধারের একটি মামলা দায়ের করেন আকবরশাহ থানার এসআই মো. আলাউদ্দিন। উক্ত মামলার এজাহারের কপি বাংলানিউজের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এজাহারে দেখা যায়, ২৮ সেপ্টেম্বর ভোররাত ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে আকবরশাহ থানার এসআই মো. আলাউদ্দিন, এএসআই সাইফুল ইসলাম, এএসআই আবু বক্কর ছিদ্দিক ও কনস্টেবল নুরুল আলম আকবরশাহ থানার লেকসিটি এলাকা হতে ১ নম্বর ঝিলে যাওয়ার পথে ডিউটি করার সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুইজন লোক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে মো. আবুল কাশেম প্রকাশ আলমগীরকে আটক করে এবং তার দেহ তল্লাশি করে একটি এলজি ও দুইটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ হেফাজতে থানায় আটক থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে কীভাবে ২৮ সেপ্টেম্বর ভোররাতে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়? এমন প্রশ্ন রাখেন অ্যাডভোকেট ফজলুল করিম ভু্ঁইয়া।
আলমগীর শীর্ষ সন্ত্রাসী: ওসি জসিম
এদিকে আকবরশাহ থানার ওসি জসিম উদ্দিনসহ ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে মো. আবুল কাশেম প্রকাশ আলমগীরকে ওই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে দাবি করেছেন ওসি জসিম উদ্দিন।
তিনি বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন- মো. আবুল কাশেম প্রকাশ আলমগীর ও তার স্ত্রীর ভাই মো. নুরে আলম প্রকাশ নুরু আকবরশাহ এলাকার ভূমিদস্যু। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
রুবি বেগমের দায়ের করা মামলা পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেন ওসি জসিম উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০১৮
এসকে/টিসি