মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) সকালে দেখা যায় নগরের বাকলিয়া ক্ষেত্রচর ও সৎসঙ্গ বিহার সংলগ্ন এলাকায় ড্রেজিং করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ই-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের জন্য হল্যান্ড থেকে ১৩০ কোটি টাকার ড্রেজার ও সরঞ্জাম আনা হয়েছে।
নদীর কিনারে ড্রেজিংয়ের কাজে নিয়োজিত ৩৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকার জন্য ২ কোটি টাকায় নারায়ণগঞ্জের রেডিয়েন্ট শিপ ইয়ার্ডে বানিয়ে আনা হয়েছে ‘হাউস বোট’। আরেকটি ওয়ার্ক বোটে আনা হয়েছে ২ কোটি টাকায়। ফাইবারে তৈরি ২টি রেসকিউ বোটও রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, চার বছরে সম্পূর্ণ কাজটি শেষ হবে। শাহ আমানত সেতুর পশ্চিম পাশে আমাদের অধীনে ড্রেজিং করবে চায়না হারবার লিমিটেড। বর্তমানে ৫০ জন কর্মী কাজ করছেন। পর্যায়ক্রমে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ানো হবে। পলির ধরন, পাথর, পলিথিন, ইট-কংক্রিটের কাঠামো, ডুবে থাকা ছোট ছোট নৌযানের অংশবিশেষ ইত্যাদির কারণে কাজে বিঘ্ন ঘটে। আবহাওয়ার বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত। তারপরও আমরা ড্রেজারগুলো দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছি।
সার্ভেয়ার মো. সিরাজ বাংলানিউজকে জানান, ভাটা শেষে সবচেয়ে কম যে লেভেলে পানি থাকে সেটিকে ‘শূন্য লেবেল’ বা ‘মিন সি লেবেল’ ধরা হয়। এর নিচে চার (মাইনাস ফোর) মিটার পর্যন্ত ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের লাইফ লাইন খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ কর্ণফুলী নদী। বঙ্গোপসাগর থেকে জোয়ারের সময় এ নদী দিয়ে বন্দরের মূল জেটিতে জাহাজ আনা-নেওয়া করা হয়। ফলে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত খননের পাশাপাশি প্রয়োজন পড়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে চ্যানেলের নাব্যতা-ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশ) ঠিক রাখা। প্রধানমন্ত্রী পটিয়ার জনসভায় ‘সদরঘাট টু বাকলিয়া চর ড্রেজিং’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর গত ২৭ অক্টোবর থেকে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, বছরের পর বছর ৬৫ লাখ মানুষের এ নগরের অপরিশোধিত বর্জ্য, পাহাড়ি বালু, পলিথিন-প্লাস্টিকে ভরা নদীর তলদেশে ড্রেজিংয়ে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। কাজ ধীরগতির হয়। বার বার মেশিন বন্ধ করতে হয়। তারপরও আমরা আশাবাদী এক বছরের মধ্যে মূল ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষ হবে। এরপর তিন বছর সংরক্ষণমূলক ড্রেজিং করবে।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের জুলাইতে ২২৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও ব্যাংক প্রটেকশন প্রকল্পের কাজ শুরু করে মালয়েশিয়ার মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন। সদরঘাট এলাকায় লাইটার জেটি নির্মাণসহ কিছু কাজ করলেও ২০১৩ সালে আগস্টে পুরো কাজ না করেই চলে যায় মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিসেস। এরপর ২০১৪ সালের জুলাইতে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি বাতিল করে। এরপর থেকে নানা মহল থেকে দাবি ওঠে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে। কারণ এ নদীর ওপর নির্ভর করে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগের বিষয়টিও। নদীর গভীরতা কমে গেলে পানি ধারণক্ষমতা যেমন হারিয়ে ফেলে তেমনি বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নামতেও পারে না। আবার জোয়ারের পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উজানে রুই-কাতলা-মৃগেল-কালবাউশ মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত হালদায় মা-মাছ, ডলফিনসহ বিভিন্ন জাতের জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৮
এআর/এসি/টিসি