ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চিঠি আসে না...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৮
চিঠি আসে না... চট্টগ্রাম জিপিও এর কার্যালয়। ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: ‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে/রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে'-কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতা ‘রানার’ এর সেই চরিত্র পাল্টেছে।ডাকঘরের রানারদের ব্যস্ততা কমেছে প্রযুক্তির কল্যাণে।

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভাইভার, ইমো, গুগল ডুয়োসহ বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগের সময় এখন। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে চিঠি ও জরুরী কাগজপত্রসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পরিবহন সংস্থা।

তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে সহজে কেউ যেতে চান না ডাকঘরে।

এমন বাস্তবতায় মঙ্গলবার (০৯ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডাক দিবস।

১৮৭৪ সালের এই দিনে সুইজারল্যান্ডের বের্ন শহরে বিশ্ব ডাক সংস্থার (ইউপিইউ) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে স্মরণ করে প্ৰতি বছর ৯ অক্টোবর  বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় দিনটি।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। এই প্রতিষ্ঠান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ডাক দ্রব্যাদি গ্রহণ, পরিবহণ ও বিলি করা, রেজিস্ট্রেশন সেবা, ভ্যালু পেয়েবল (ভিপি) সেবা, বীমা সেবা, পার্সেল সেবা, বুক পোস্ট (বুক প্যাকেট ও প্যাটার্ণ প্যাকেট), রেজিস্টার্ড সংবাদপত্র, মানি অর্ডার সেবা, এপ্রেস সেবা (জিইপি ও ইএমএস), ই-পোস্ট ও ইন্টেল পোস্ট সেবা দিয়ে থাকে।

এক যুগ আগেও বেশ কদর ছিল ডাক বিভাগের। সাইকেল চালিয়ে ডাকবাহক ছুটে যেতেন শহর আর গ্রামের বাসা-বাড়িতে। পল্লীবধূ অপেক্ষায় থাকতেন স্বামীর পাঠানো চিঠির জন্য। মা-বাবা আর সন্তানের যোগাযোগ হতো ডাকে পাঠানো চিঠিতেই। প্রবাসীরা চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে রাখতেন পরিবার-পরিজনের খবর।

কারো চিঠি এলে খাম ছিঁড়ে কয়েকবার পড়া, তারপর শুরু হতো উত্তর লেখার প্রস্তুতি। ডাকঘরে গিয়ে হলুদ রঙের খামের ভেতর ভাঁজ করে চিঠি দেয়া, আঠা লাগিয়ে খামের মুখ আটকে ডাকবাক্সে  ফেলার পর মিলতো স্বস্তি। এরপর চলতো আবার প্রতিউত্তরের অপেক্ষা।

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও ই-মেইলের মতো উন্নত প্রযুক্তির কারণে হারিয়ে গেছে সেই চিত্র। হারিয়ে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে লেখার অভ্যাসও।

ডাক বিভাগ সূত্র জানায়, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কার্যালয়। এটির অধীনে একটি জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস) ও ৬টি ‘এ’ গ্রেড প্রধান ডাকঘর এবং ১১টি ‘বি’গ্রেড ডাকঘর রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের গ্রামীণ ৩০৪টি ডাকঘরের মধ্যে ২৫৪টিকে পোস্ট ই-সেন্টারের আওতায় আনা হয়েছে।  

সরেজমিন নগরের জিপিও ও কয়েকটি শাখা ডাকঘর ঘুরে দেখা গেছে, চিঠিপত্র আদান-প্রদানের জন্য মানুষের আনাগোনা অনেক কম। চাকরী প্রত্যাশীরা আবেদন পত্র পাঠাতে আর গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান কার্ড পাঠাতে আসেন এসব ডাকঘরে।
 
জিপিওতে আসা চল্লিশোর্ধ্ব শেখ শামীম বাংলানিউজকে বলেন, ডাক বিভাগের প্রতি মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। কুরিয়ারে অনেক দ্রুত চিঠি পাঠানো যায়। কিন্তু সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের সরবরাহ করা চিঠি গ্রহণ করতে চায় না। তাই ডাকঘরে আসতে হয়।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) শিক্ষার্থী মো. আবু সাইদ বলেন, চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগে যে আবেগ, অনুভূতি ছিল তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সেই আবেগ হারিয়ে যাচ্ছে ।

নগরে কর্মরত কয়েকজন ডাকবাহক জানালেন তাদের দায়িত্ব পালনের কথা। আগের মতো তেমন চাপ নেই গাদাগাদা চিঠি পৌঁছে দেয়ার।

চট্টগ্রাম বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল (কোতয়ালি) মো. তৈয়ব আলী বাংলানিউজকে বলেন, ডাকবিভাগের প্রতি এখনও মানুষের আস্থা আছে। ডাকসেবা এখন অনেক আধুনিক। পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমেও গ্রাহকরা সেবা পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৮
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।