ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৮
চট্টগ্রামে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের চট্টগ্রামের আদালতে হামলার জন্য মিরসরাইয়ের এ বাড়িটি বেছে নেয় জঙ্গিরা/ছবি- ডালিম

মিরসরাই (চট্টগ্রাম): ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ সোনাপাহাড় এলাকায় একটি ‘আস্তানায়’ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় উদ্ধার করা হয় দুই জঙ্গির মরদেহ।

বৃহস্পতিবার (০৪ অক্টোবর) দিনগত রাত ৩টা থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান শেষ হয় শুক্রবার (০৫ অক্টোবর) বেলা ১২টায়।

অভিযান শেষে র‌্যাব আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেয় অভিযানের অদ্যোপান্ত।

র‌্যাব জানায়, এ আস্তানার জঙ্গিদের পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রামে নাশকতা চালানো। আর তাদের প্রধান টার্গেট ছিল আদালত।
সে কারণেই তারা এ স্থানটিকে বেছে নিয়েছিল।  

র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা খবর পায়, জেএমবির একটি সক্রিয় গ্রুপ ওইস্থানে আস্তানা গেঁড়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ওই জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাব ৭ ফেনী ক্যাম্প অভিযান চালালে জঙ্গিরা গুলি ছুড়তে শুরু করে এবং বিকট শব্দে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
 
র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে ওই বাড়িতে অবস্থান নেওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত তাদের গুলিবিনিময় হয়। এ সময় বাড়ির ভেতরে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
 
মিরসরাইয়ে ‘আস্তানায়’ অভিযানের পর ২ জঙ্গির মরদেহ উদ্ধার

এর আগে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল টিম (বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল) ঘটনাস্থলে আসে। বাড়ির ভেতরে ঢুকে বোমা ও গুলি উদ্ধার করে। দুপুর ১২টায় এ অভিযান শেষ করা হয়। এতে ৫টি গ্রেনেড, একটি এ কে ২২ রাইফেল এবং ৩টি পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র, জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। ধংস করা হয় অবিস্ফোরিত গ্রেনেড।  

বিএসআরএম-এ চাকরিজীবী বলে বাড়ি ভাড়া নেয় জঙ্গিরা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারইয়ার হাট ও বিএসআরএম স্টিল মিল-এর মাঝামাঝি সোনাপাহাড় এলাকার চৌধুরী ম্যানশন নামে বাড়িটির মালিক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী ও কেয়ারটেকার হক’র উদ্বৃতি দিয়ে র‌্যাব জানায়, সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ সোহেল নামের একজন তার স্ত্রীসহ এসে বাড়িটি ভাড়া নেন। বলেন, বিএসআরএম স্টিল মিলে চাকরি করেন। কথা ছিল তারা স্বামী-স্ত্রী এবং শাশুড়িসহ তিনজন তিনটি ঘরে ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় থাকবেন। অভিযানে দুই পুরুষের মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় র‌্যাবের ধারণা এখানে অন্য জঙ্গিদের আসা-যাওয়া হতো।

বাড়ির ভেতর থেকে এসব বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়
নিয়মানুসারে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াটিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র জমা নেওয়ার কথা। কিন্তু বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় পরিচয়পত্র নেওয়া হয়নি বলে বাড়ির মালিক, কেয়ারটেকারকে আটক করে র‌্যাব। র‌্যাব জানায় তাদেরকে আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।  

এদিকে বাড়িটির মালিক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী র‌্যাবকে জানান, আজ তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা ছিলো ভাড়াটিয়াদের। কিন্তু দেওয়ার আগেই ঘটে এমন ঘটনা।  

প্রতিবেশীরা কেউই চিনতো না জঙ্গিদের

যে বাড়িতে জঙ্গিদের আস্তানা ছিল ঠিক তার পাশের বাড়িগুলোর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই বাড়িতে কে বা কারা থাকতো তা কেউই জানতেন না। তাদের সঙ্গে প্রতিবেশী কারোর পরিচয় হয়নি। তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠে গাড়িতে চলাফেরা করতো, কারো সঙ্গে কথা বলতো না। সালেহা বেগম এবং আবুল হাসেম নামের ওই এলাকার দু’জন জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে হঠাৎ বিকট শব্দে তাদের ঘুম ভাঙে। রাতে আর বুঝে উঠতে পারেননি কি হয়েছে। সকালে উঠে দেখি এ কাণ্ড।
 
ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনির হোসেন জানান, চৌধুরী ম্যানশন নামের ওই বাড়িতে গত ২৮ তারিখে দুইজন পুরুষ, একজন নারী ওঠেন। এরপর ২ অক্টোবর তিনজন পুরুষ ওঠেন ওই বাড়িতে। তবে ওদের কারো সঙ্গেই এলাকার কারো কথা হতো না বলে জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৮
এসএইচডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।