ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আতঙ্কের নাম পোস্টার!

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
আতঙ্কের নাম পোস্টার! যত্রতত্র পোস্টার সাঁটিয়ে নগরের সৌন্দর্যহানি করা হচ্ছে। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: সদ্য রং করা সীমানা প্রাচীর, ফটক, ফ্লাইওভার বা বৈদ্যুতিক খুঁটি, সড়ক বিভাজক থেকে শুরু করে ভাস্কর্যের বেদি পর্যন্ত ঢাকা পড়ছে পোস্টারে। উৎসব, ওরস, কোচিংসহ নানা বিজ্ঞাপনের বাইরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বিচারে লাগানো হচ্ছে ‘পোস্টার’।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের লালখান বাজার থেকে টাইগারপাস যাওয়ার পথে যে দুইটি বাঘের ভাস্কর্য রয়েছে সেগুলোর মার্বেল পাথরে ঢাকা বেদিতেও নির্বাচনী পোস্টার সাঁটিয়ে সৌন্দর্যহানি করা হয়েছে। বাদ যায়নি ওয়াসার মোড়ের ঘোড়ার ভাস্কর্যের বেদিও।

এসএস খালেদ সড়কের আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দেয়ালটি সদ্য রং করা হয়েছে। কিন্তু পোস্টার থেকে বাদ পড়েনি সেটিও।

নতুন নতুন অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিসের রং লাগানো দেয়ালও বাদ পড়ছে না পোস্টার থেকে। অনেকে রাতের পালার সিকিউরিটি গার্ডদের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন পোস্টার লাগিয়ে কেউ যাতে সৌন্দর্যহানির সুযোগ না পায়। অনেক বাড়ির মালিক ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা রীতিমতো আতঙ্কিত।

নগরের পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু’র সামনেও সাঁটানো হয়েছে পোস্টার।  ছবি: সোহেল সরওয়ারকোতোয়ালী আসন (চট্টগ্রাম-৯) থেকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদের রঙিন পোস্টারে ছেয়ে গেছে সংসদীয় এলাকা। চট্টগ্রাম-১০ আসনে চোখে পড়ছে মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. আজাদ খাঁনের রঙিন পোস্টার।

যত্রতত্র পোস্টার সাঁটিয়ে আগাম নির্বাচনী প্রচারণা প্রসঙ্গে সৈয়দ ছগীর আহমদের কাছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, এটি একধরনের রেওয়াজ। সংসদীয় আসনের ভোটারদের জানাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে ডিজিটাল বাংলাদেশে পোস্টার সাঁটিয়ে কম পরিচিত, অপরিচিত, নব্য পুঁজিপতিদের মনোনয়ন পাওয়ার দিন শেষ বলে মনে করেন সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র মো. সাইফুল।

আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পিলারেও নির্বাচনী পোস্টার।  ছবি: সোহেল সরওয়ারতিনি বলেন, এখন ডিজিটাল প্রচারণার সময়। এসএমএস, ফেসবুক পেজ, গ্রুপ, অ্যাড থেকে শুরু করে সব কিছু অনলাইনে-মোবাইলে হচ্ছে। পোস্টার সাঁটানো মানে একদিকে অপচয় অন্যদিকে নগরকে নোংরা করা। সহজে পুরোপুরি তোলা যায় না লাগানো পোস্টারটি। নিজেকে হেয় করা। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পোস্টার লাগানোর জন্য কিছু নির্ধারিত স্থান থাকা উচিত।    

পোস্টার সাঁটিয়ে মনোনয়ন পাওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উচিত দলীয় ফোরামের মাধ্যমে আবেদন করা। পোস্টার সাঁটিয়ে নগরের সৌন্দর্যহানি করার কোনো মানে নেই। নগরবাসী গ্রিন ও ক্লিন সিটি চায়। যারা পোস্টার সাঁটাচ্ছে, নগরের সৌন্দর্যহানি করছে তাদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের হস্তক্ষেপ দরকার।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী যিশু বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন চসিকের ১২ জন কর্মী সৌন্দর্যহানিকর পোস্টারগুলো তুলে ফেলার কাজ করছেন। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নকর্মীরাও পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণে নিয়মিত কাজ করছেন। রাতের আঁধারে এসব পোস্টার সাঁটানো হয় ভাড়া করা কিছু টোকাই শ্রেণির লোক দিয়ে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কঠোর নির্বাচনী আচরণ বিধি আর আইন প্রয়োগ ছাড়া পোস্টার সাঁটানো বন্ধ করা কঠিন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
এআর/টিসি          

       

   

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।