স্ক্র্যাপ লোহা ছাড়াও একটি জাহাজ ভাঙার পর শক্তিশালী ইঞ্জিন, ৩ হাজার কিলোওয়াটের মতো বড় বড় জেনারেটর, মোটর, প্রপেলার (পাখা), ক্রেন, নোঙর, লাইফ বোট, লাইফ রেফট, রশি, শেকল, ট্যাংক, বিভিন্ন পুরুত্বের লোহার পাত, বিভিন্ন আকারের লোহার পাইপ, তামা, জিংক, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যাবল, আসবাব, সিঁড়ি (লেডার), ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত জ্বালানি, লাইট, ফ্যান, সুইচ, হার্ডওয়্যারের পণ্যসামগ্রী, হেলমেট-গামবুটসহ নিরাপত্তা সরঞ্জাম, ফায়ার পাম্প, অয়েল ও ফায়ার প্রটেক্টর ইক্যুইপমেন্ট, কমপ্রেসার, লিফটিং ডিভাইস, মেডিসিন, নেভিগেশনাল যন্ত্রপাতিসহ অর্ধশতাধিক পদের জিনিসপত্র।
আরও খবর>>
** ১০০ কোটি টাকার ‘গ্রিন শিপ’ ভাঙা হবে সীতাকুণ্ডে
** ৩০০ লোকের কাজ করছে একটি ম্যাগনেট ক্রেন
এর মধ্যে নেভিগেশনাল যন্ত্রপাতি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে দেড়শ’ প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হলেও সক্রিয় আছে অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১০০ কোটি টাকায় ‘অরি ভিটোরিয়া’ নামের ‘গ্রিন শিপ’ এনে রীতিমতো বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এ জাহাজ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
জাহাজভাঙাকে শিল্প ঘোষণায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মো. সরওয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আটটটি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে। নিয়ম-নীতি মেনে, সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী ইয়ার্ডগুলো পরিচালিত হচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষা ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ সৃষ্টিতে ইয়ার্ড মালিকরা ক্রমে সচেতন হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৩০-৪০টি গ্রিন ইয়ার্ড থাকলেও বাংলাদেশে কেবল পিএইচপি স্বীকৃতি পেয়েছে। শিগগির আরও ২-৩টি ইয়ার্ড এ স্বীকৃতি পাবে আশা করি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকারের নজরদারি ও প্রতিবছর লিজ নবায়নের বাধ্যবাধকতা থাকায় জাহাজভাঙা শিল্পের পরিবেশ উন্নত করতে মালিকরা বাধ্য।
পিএইচপি শিপ ইয়ার্ডের সহকারী ব্যবস্থাপক লিটন মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে আমরা জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের এনে আমাদের কর্মকর্তা ও কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ম্যাগনেটিক ক্রেন, টাওয়ার ক্রেনসহ আধুনিক হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্টের ব্যবহার শুরু করায় ক্রমে জনবল কম লাগছে। ৩০০ লোকের সমান কাজ করছে একটি ম্যাগনেটিক ক্রেন। আগে আমাদের ইয়ার্ডে যেখানে আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করতেন এখন তা আড়াইশ’তে ঠেকেছে। আমরা ইয়ার্ডে একটি ছোট হাসপাতাল করেছি। এ ছাড়া বিএসবিএ পরিচালিত হাসপাতালও রয়েছে হাতের কাছে। ফলে দুর্ঘটনা ও অনাকঙ্ক্ষিত মৃত্যু দু’টোই কমেছে। পিএইচপি শিপ ইয়ার্ডে গত ১৫ বছরে শ্রমিক অঙ্গহানির ঘটনাও ঘটেনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্রিন শিপ ইয়ার্ড হিসেবে আমরা ক্ষতিকর (হেজার্ডস) উপকরণগুলো সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করছি। এসভেস্টাজগুলো এয়ারটাইট রুমে সিমেন্টের পাইপে ইট-বালু-সিমেন্ট-কংক্রিট দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিচ্ছি। গ্রাসউলগুলো আধুনিক মেশিনের সাহায্যে চেপে প্যাকেট করে কনটেইনারে ভরে রাখছি। কেন্দ্রীয়ভাবে ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি (টিএসডিএফ) চালু হলে সেগুলো সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিয়ে ১৬ বছর কাজ করছেন উন্নয়ন ও মানবাধিকারকর্মী মো. আলী শাহিন বাংলানিউজকে বলেন, পরিবেশ ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ইস্যুতে ক্রমে ইয়ার্ড মালিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। তারা এসব আইন বোঝার চেষ্টা করছে। উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে শ্রমিকের সংখ্যা ও ঝুঁকি কমলেও গত এক বছরে ১৫ জন মারা গেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা সবসময় থাকবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়লে শিল্পের ভাবমূর্তিও বাড়বে।
তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল চালুর। বিএসবিআরএ সেটি করেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট ও ট্রমার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
এআর/টিসি