ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মায়ের ইচ্ছেতেই অসহায় মানুষের পাশে তিনি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮
মায়ের ইচ্ছেতেই অসহায় মানুষের পাশে তিনি আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী সিজার।

চট্টগ্রাম: মায়ের ইচ্ছে ছিলো ছেলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গ্রামের দরিদ্র, বঞ্চিত, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে। মায়ের প্রেরণাতেই জড়িয়ে পড়েন মানবসেবায়, সমাজকর্মে।

গ্রামের কেউ অর্থাভাবে পড়াশুনা করতে পারছে না, তাদের জন্য অর্থের যোগানদাতা হয়ে যান তিনি। টাকার জন্য কারও মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, সেখানেও সাহায্য করেন নিঃস্বার্থভাবে।

কারও শরীর অসুস্থ, তার চিকিৎসার ভার তুলে নেন নিজের কাঁধে।

এখানেই শেষ নয়, নিজ গ্রাম বাঁশখালী ও তার আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, অনাথ শিশুদের ভরণপোষণ ও পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দেয়াই যেনো তার জীবনের অন্যতম ব্রত।

তিনি আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী সিজার। বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকিংয়ের অগ্রপথিক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক- ইউসিবিএলের এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান।

প্রচারবিমুখ মানবতাবাদী আলোকিত এ মানুষটি সমাজ ও সমাজের মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন নীরবে। এসব বিষয় প্রচারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধও করেন না তিনি।

১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি বাঁশখালীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী। মা-বাবা দু’জনেই মুক্তিযোদ্ধা।  বাবা ডা. জমির উদ্দিন চৌধুরী একাত্তরের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। মা ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসার সময় তথ্য সংগ্রহ করে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।

মেঝভাই শামসুল আরেফিন ছিলেন হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের বার্ষিকীর সম্পাদক। তার হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী সিজারের। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন। এজন্য ১৯৯১ সালের ৬ ডিসেম্বর জামায়াত শিবিরের হামলার শিকারও হয়েছেন তিনি। মারাত্মকভাবে জখম হয়ে বহুদিন ছিলেন কোমায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী পেশাগত জীবনে ব্যাংকার হলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হননি। রাজনৈতিক কোন পদ-পদবীতে না থেকেও তিনি আওয়ামী লীগের আদর্শের সৈনিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের সেবায়।

বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সিজার বলেন, পঁচাত্তরে ঘাতকের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন বঙ্গবন্ধু। ঘাতকের বুলেট বিদ্ধ করে ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের বুকও। এ নির্মমতার কথা যতবার শুনেছি, যতবার পড়েছি মন বিষন্নতায় ভরে গেছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরেছে।

তিনি বলেন, মনে মনে পণ করেছি সেদিনের রাসেল আজ বেঁচে থাকলে যা যা করতেন নিজের সাধ্যনুযায়ী তা করার চেষ্টা করবো। মানুষের পাশে দাঁড়াবো।  জীবনে সত্য, ন্যায়-নীতি, মানবতা, দেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে কোনো আপোষ করবো না। অনুপ্রেরণা হিসেবে মা-বাবা তো ছিলেনই।

সিজার বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব দরবারে আমাদের দিয়েছেন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস ও সম্মান। বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, উন্নয়নের উপচে পড়া ঝুড়ি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার দিকে। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে বাংলাদেশ এখন ‘এশিয়ার উদীয়মান টাইগার’।

মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও তার রাজনৈতিক জীবনগাথা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছের কথা জানান সিজার।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবন আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তার আদর্শ ও দর্শনকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সুদৃঢ় করতে ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সেজন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার রক্তাক্ত ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করছি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে যে দেশ এগিয়ে চলছে তার চিত্র তুলে ধরছি।

সিজার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫-এ সব হারিয়েও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে বুকে আঁকড়ে ধরে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ, একনিষ্ঠতা, ন্যায়পরায়ণতাকে বুকে ধারণ করে দেশের প্রতি কাজ করার অঙ্গীকার করা অসম্ভব কিছু নয়। সবাইকে নিজের অবস্থান থেকে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এ দেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।  বলেন সিজার।

বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জরুরী বিভাগে ‘ইমারজেন্সি মেডিসিন কর্নার’ তৈরির কাজ করছেন জানিয়ে আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী সিজার বলেন, কদিন আগে গ্রামেরই একজন ছুরিকাঘাত হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে জরুরী ওষুধপত্র না থাকায় তাকে বাঁচানো যায়নি।   

ঘটনাটি মনে ভীষণ নাড়া দেয়। সিদ্ধান্ত নিই জরুরী বিভাগে ‘ইমারজেন্সি মেডিসিন কর্নার’ তৈরির। এর কাজ শেষ হলে সুফলভোগ করবেন বাঁশখালীর সবাই।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৮
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।