ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মৃত্যুর কয়েকদিন আগে যা বলেছিলেন রমা চৌধুরী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮
মৃত্যুর কয়েকদিন আগে যা বলেছিলেন রমা চৌধুরী চমেকের আইসিইউতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রমা চৌধুরী

চট্টগ্রাম: শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার কয়েকদিন আগে নিজের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছিলেন একাত্তরের বীর‍াঙ্গনা রমা চৌধুরী।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কেবিনে চিকিৎসাধীন থাকাকালে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে মনের মধ্যে প্রবল আশা নিয়ে বলেছিলেন-তিনি পুরো বাংলাদেশ ঘুরতে চান। তার লেখা বই ‘একাত্তরের জননী’র আরও নয়টি খণ্ড বের করতে চান।

আরও খবর>>
** 
‘একাত্তরের জননী’ রমা চৌধুরী আর নেই

রমা চৌধুরী বলেছিলেন, ‘একাত্তরের জননী আরও নয় খণ্ড বাকি আছে। আমি বাকি রাখবো না, যেমন করে পারি লিখব, কাউকে দিয়ে অন্তত লিখাবো, আমার হাত চলছে না রে এখন, একটা সই দিতেও পারি না, সই দিতে গিয়ে আমি শুয়ে পড়ি’।

তার শেষ ইচ্ছা কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন-‘শেষ ইচ্ছা? গোটা বাংলাদেশ ঘোরা। গোটা বাংলাদেশ ঘোরার পরে আমি যদি পারি পুরো পৃথিবী ঘুরবো। ’

‘আমার ছেলে যারা মারা গেছে তাদের জন্য কিছু করবো। আমার ছেলে যেটা বেঁচে আছে তাদের জন্য মন্দির করেছে, আমি আরও কিছু করবো। তাদের কাউকে পোড়ানো হয় নাই। সমাধি দেওয়া হয়েছে সবাইকে। আমার মাকেও সম‍াধি দেওয়া হয়েছে। আমাকেও সমাধি দেওয়া হবে। পোড়ানো হবে না। পোড়ানোর দরকার নেই। এসব আমি বলে রেখেছি। ’

তার ইচ্ছা অনুযায়ী সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বোয়ালখালীর পোপাদিয়ায় ছেলে দীপংকর টুনুর সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হন ‘একাত্তরের জননী’ খ্যাত বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী।

বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামে রমা চৌধুরীর বাড়ি। রমা চৌধুরী ১৯৭১ সালের ১৩ মে তিন শিশু সন্তান নিয়ে পোপাদিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। তখন স্বামী ছিলেন ভারতে। এদিন পাক হানাদার বাহিনী তাদের ঘরে হানা দেয়। নিজের মা আর ৫ বছর ৯ মাস বয়সী ছেলে সাগর ও ৩ বছর বয়সী টগরের সামনেই এক পাকিস্তানি সৈনিক রমা চৌধুরীকে ধর্ষণ করে।

পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে নির্যাতিত হয়ে সমাজের লাঞ্ছনা এবং ঘরবাড়ি হারিয়ে রমা চৌধুরী অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর অনাহারে-অর্ধাহারে অসুস্থ হয়ে মারা যায় বড় ছেলে সাগর। ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সন্তান টগর মারা যায়। তৃতীয় সন্তান টুনু ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।

পরবর্তীতে আশির দশকের মাঝামাঝি নিজের লেখা বই রমা চৌধুরী ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত তিনি নিজের নিয়মে খালি পায়ে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বই বিক্রি করে গেছেন। এরপর শারীরিক শক্তি হারাতে শুরু করেন।

২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাসায় পড়ে গিয়ে রমা চৌধুরী কোমরে গুরুতর আঘাত পান। ওইদিনই তাকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেই যে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়েছেন, আর দাঁড়াতে পারেননি তিনি।

সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রমা চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad