ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ট্রেনের হুইসেল, পরক্ষণেই প্রচণ্ড ধাক্কা

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮
ট্রেনের হুইসেল, পরক্ষণেই প্রচণ্ড ধাক্কা মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় আহত বাসযাত্রীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে চমেকে। ইনসেটে সুকৃতি চাকমা। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: ‘ঢাকার কলাবাগান থেকে বাসে উঠি। কুমিল্লায় বিরতি দেওয়া হয় আড়াইটায়। এরপর আধঘণ্টা বাস চলে। তখন আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম। ঘুম ঘুম ভাব ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে ট্রেনের হুইসেল শুনি। পরক্ষণেই প্রচণ্ড ধাক্কা। বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে ২০ মিটার দূরে ছিটকে পড়লো।’

রোববার (২ সেপ্টেম্বর) ভোর চারটার দিকে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন বারইয়ারহাট এলাকায় রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া খাগড়াছড়িগামী এস আলম পরিবহনের বাসের (চট্টমেট্রো ব ১১-০৭৩০) যাত্রী সুকৃতি চাকমা (২৬) এভাবেই বাংলানিউজকে ঘটনার বর্ণনা দেন।  তিনি বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক।


ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ
আরও পড়ুন>>
** ট্রেনের ধাক্কায় বাস খাদে, আহত ১৫ জন চমেকে
** গেটম্যানের অবহেলায় দুর্ঘটনা, তদন্ত কমিটি

সুকৃতি বলেন, দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন প্রাণপণ চেষ্টা করেন আহতদের উদ্ধারে। সবাইকে জীবিত উদ্ধারেও সক্ষম হন।

দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে যাই সিএনজি অটোরিকশায়। সেখানে বেহাল অবস্থা থেকে অ্যাম্বুল্যান্স বা মাইক্রোবাস ভাড়া করতে বলি স্থানীয়দের। বলেছি যত টাকা ভাড়া লাগবে আমি দেবো। ৪০ মিনিট পর একটি গাড়ি নিয়ে আসেন তারা। সেটিতে করে আমি, আমার ভাই নিউটনসহ আরও একজন নারী ও পুরুষ যাত্রীকে চমেকে নিয়ে আসি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চম তলার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে সুকৃতি বলেন, চোখ খোলার পর দেখলাম জানালার সব কাচ ভেঙে গেছে।  আমি ছিলাম বাসের পেছন থেকে তৃতীয় সারিতে।  ওই জানালা দিয়ে কোনো রকমে বের হলাম।  মোবাইল ফোনটি কোথায় পড়ে যায় কে জানে! এরপর বের করলাম আমার ভাই নিউটন চাকমাকে।   সে-ও শিক্ষক।   তার মাথায় আঘাত পেয়েছে।  দুঃখের বিষয় হলো, তার ব্যাগে ছিল একাডেমিক সব কাগজপত্র, সনদ।
ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের কর্মী সুনির্মল চাকমাকে অল্পের জন্য বাঁচানো যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাকে প্রাথমিকভাবে ব্যান্ডেজ করা হয়। এরপর তিনি বলেন, আমার খুব খারাপ লাগছে, বড় হাসপাতালে নিয়ে যাও। তখন আমি বলি, আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল যাব। গাড়ি আসলে আপনাকে নিয়ে যাব। তাকে গাড়িতে তোলার জন্য বারান্দায় আনি। এরপর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু গাড়ি আসার ২০ মিনিট আগে তিনি মারা যান। বিষয়টি আমাকে খুব পীড়া দিচ্ছে।
ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সুজিত চন্দ্র চাকমার সন্তান পুষ্পেচর চাকমা (৪০), নিউটন চাকমা (২৫), কৃষ্ণ কুমার ত্রিপুরার স্ত্রী কুসুম ত্রিপুরা (৬৫), অরুণোদয় চাকমার স্ত্রী মিনা চাকমা (৩৫), পুষ্প দেওয়ানের ছেলে কল্লোল দেওয়ান (২৫), শুভ রঞ্জন ত্রিপুরার ছেলে বাবু ত্রিপুরা (২৫), শংকর বিজয় (২৮), পরিনন্দ বিকাশ দেওয়ানের ছেলে পংকজ বিজয় দেওয়ান (২৭), মনোরঞ্জন ত্রিপুরার ছেলে কর্ণট ত্রিপুরা (২৫), আনন্দ কিশোর ত্রিপুরার ছেলে মিটন ত্রিপুরা (২৫)। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয়ের আছেন দুইজন।

চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক বাংলানিউজকে জানান, নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় আহত পাঁচজন বাসযাত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ
চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সামনের বারান্দায় কথা হয় আহত যাত্রী মো. আবদুল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, রামগড় যাওয়ার জন্য ওই বাসে উঠেছিলাম। এখন পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। জানি না, কীভাবে সংসার চলবে, কীভাবে চিকিৎসার খরচ জোগাবো!

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।