সর্বশেষ রোববার (২৯ জুলাই) সকালে থানায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণের শিকার ১০ বছর বয়সী মেয়ে শিশুর বড় ভাইকে চড়-থাপ্পর মেরে তার কাছ থেকে অলিখিত স্ট্যাম্পে সই নেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অধীনস্থ আকবরশাহ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক পঞ্চানন রুদ্রের বিরুদ্ধে।
২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নগরের আকবরশাহ থানার ফিরোজশাহ পপি কলোনি এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশু।
এ ঘটনায় গিয়াস উদ্দিনকে আসামি করে আকবরশাহ থানায় মামলা দায়ের করেন শিশুটির মা। ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলমত মেলে। এবছরের ২১ ফেব্রুয়ারি আকবরশাহ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উৎপল বড়ুয়া তদন্ত শেষে গিয়াস উদ্দিনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্রও জমা দেন।
গিয়াস উদ্দিন সীতাকুণ্ড থানার সলিমপুর এলাকার রাজা মিয়ার ছেলে। তিনি বর্তমানে আকবরশাহ থানার ফিরোজশাহ পপি কলোনি এলাকায় বসবাস করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে গিয়াস উদ্দিন পলাতক ছিলেন।
গত ২৩ জানুয়ারি নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণের শর্তে হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের জামিন নেন তিনি। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে গেলেও নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি তিনি। এখন এএসআই পঞ্চানন রুদ্রের মাধ্যমে সেই মামলা তুলে নিতে নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বড় ভাই বাংলানিউজকে বলেন, তিন দিন আগে আকবরশাহ থানার এএসআই পঞ্চানন রুদ্র মোবাইলে কল দিয়ে আমাকে থানায় গিয়ে দেখা করতে বলে। থানায় গিয়ে মামলার বিষয়ে আপোষ করতে বলেন। পরে আবার কল দিয়ে আকবরশাহ এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন। না হয় বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দিনমজুর। দিনে এনে দিনে খাই। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার কথা পুলিশের অথচ উল্টো আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিচ্ছে। গিয়াস উদ্দিনের অনেক টাকা। সে টাকার জোরে এএসআইকে কিনে নিয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘শনিবার রাতে আমাকে কল করে থানায় যেতে বলেন। রোববার সকালে থানায় গেলে প্রথমে আমাকে চড়-থাপ্পর মারেন। পরে আমার কাছ থেকে অলিখিত একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। তখন থানায় ওসি বা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ছিলেন না। ’
শিশুটির ভাইয়ের মোবাইল নাম্বারে এএসআই পঞ্চানন রুদ্র গত কয়েকদিন ধরে নিয়মিত কল দিয়ে হুমকি দেওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
এএসআই পঞ্চানন রুদ্র তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর (০১৮১৫১৭৫৩৯৭) থেকে শিশুটির ভাইয়ের নম্বর ২৭ জুলাই রাত ১০ টা ১৮ মিনিট, ১০ টা ১৯ মিনিট, ১০ টা ২০ মিনিট কল দিয়েছেন। কিন্তু ভয়ে এসব কল রিসিভ করেননি শিশুটির ভাই। ২৮ জুলাই সকাল ৯টা ১২ মিনিটে কল দিলে রিসিভ করেন। পরে আবার ৯টা ১৩ মিনিট ও ৯টা ১৪ মিনিটে কল দেন। কিন্তু এসব কল ভয়ে রিসিভ করেননি তিনি।
শিশুটির ভাইয়ের আরেকটি নম্বরে এএসআই পঞ্চানন রুদ্র কল দিলে তিনি রিসিভ করেন।
এসময় এএসআই পঞ্চানন শিশুটির ভাইকে কোন জায়গায় আছে জিজ্ঞেস করে বলেন, ‘তোমার জন্য থানায় স্যারকে বসিয়ে রাখছি। ওইদিন তারা থানায় আসছিলো। মামলা নিতে পারতাম। তোমার উপকার করার জন্য মামলা নিইনি। আমি স্যারকে বলছি-তোমরা গরিব মানুষ তাই যাতে স্যার মামলা না নেয়। পরে মামলা হয়ে গেলে আমাকে দোষ দিতে পারবে না। ওদের টাকা আছে, মামলা করে দিলে তখন বুঝবা। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনতো নতুন ওসি স্যার আসছে। বলছে তোমাদেরকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে মামলা দিতে। ’
শিশুটির পরিবার বাসা ভাড়া না দেওয়ার অযুহাত তুলেন এএসআই পঞ্চানন।
জানতে চাইলে এএসআই পঞ্চানন রুদ্র প্রথমে কাউকে চিনেন না দাবি করেন। পরে চিনেন স্বীকার করলেও তাদের বাসা ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে থানায় ডেকেছিলেন বলে দাবি করেন।
শিশুটির ভাইকে চড় মারার বিষয়টি অস্বীকার করেন এএসআই পঞ্চানন রুদ্র। বাংলানিউজের এই প্রতিবেদককে থানায় নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) মো. ফারুক উল হক এ ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
এসকে/টিসি