ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঘরে চুলা জ্বলেনি, হোটেলে উপচেপড়া ভিড়

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৮
ঘরে চুলা জ্বলেনি, হোটেলে উপচেপড়া ভিড় গৃহস্থালি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় হোটেলে ভাত কেনার জন্য উপচেপড়া ভিড়। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: ‘বিনা নোটিশে গৃহস্থালি লাইনের গ্যাস বন্ধ। সকাল থেকে চুলা জ্বলেনি। দুপুরে বাচ্চাদের কান্না সহ্য করতে না পেরে হোটেল থেকে হোটেলে ঘুরছি। কিন্তু ভাত কিনতে পারছি না। সব জায়গায় লম্বা লাইন।’

নগরের লালদীঘির উত্তর-পশ্চিম পাড়ের গোবিন্দাস রেস্টুরেন্ট থেকে খালি হাতে বের হওয়ার সময় এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন ঝুলন দত্ত।

আরও পড়ুন>> ** চট্টগ্রামে গ্যাসের চাপ নেই, জ্বলছে না চুলা

তিনি বলেন, বেশি করে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কলা, চিঁড়া-মুড়ি কিনে ঘরে ফিরবো ভাবছি।

শুক্রবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে নগরের বেশিরভাগ বাসা-বাড়ির গ্যাসের চুলা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মাটির চুলা, ইটের চুলা, ইলেকট্রিক চুলা, কেরোসিনের স্টোভ দিয়ে কিছু কিছু পরিবার জরুরি রান্না সারলেও অনেকেই ভিড় করেন খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টে।

আর্থিকভাবে সামর্থ্যবানদের দেখা গেছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারসহ নতুন চুলা কিনছেন।  

ভিড় করলেই যে সবাই ভাত-তরকারি কিনতে পেরেছেন এমন নয়। কিছু কিছু দোকানে পার্সেলে ভাতই বিক্রি করেনি। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা লেগে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে।

লালদীঘি পাড় এলাকার একটি হোটেলে ক্রেতাদের ভিড়।  ছবি: সোহেল সরওয়ারশুধু নিরামিষ হোটেল গোবিন্দাস, গোবিন্দই নয়, হাজি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে অলিগলি ও মোড়ের সব রেস্টুরেন্টে ছিল ভিড়। কেউ কেউ মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও রিকশা নিয়ে এক হোটেল থেকে আরেক হোটেলে ঘুরেছেন খাবার কেনার জন্য।  

সিনিয়র সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, জুমার নামাজের পর ২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হন্য হয়ে খাবার খুঁজেছি হোটেল হােটেলে। কোথাও দীর্ঘ লাইন, কোথাও খাবার নেই। থাবার খুঁজতে খুঁজতে গাড়ির গ্যাসই শেষ হয়ে যায়। কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল এ বিষয়ে ৩-৪ দিন আগে থেকে সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজপোর্টাল ও টেলিভিশনসহ সব মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা করা। আর পত্রিকায় যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে তাতে কোথাও বাসাবাড়িতে গ্যাস না থাকার কথা বলা হয়নি।

পাঠানটুলী সড়কের বাসিন্দা প্রবীর বড়ুয়া বাংলানিউজকে ই-মেইলে জানান, স্থানীয় নাজিরপুল এলাকায় হারুন হোটেলসহ বেশ কিছু হোটেলে নারী শিশুসহ অনেক মানুষকেই ‘ভাত-তরকারি’ থাকা সত্ত্বেও ‘নেই’ বলে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অথচ যারা হোটেলে বসে আহার করছিলেন তাদের সরবরাহ করা হচ্ছে।

গোবিন্দাস হোটেলে ভাত কিনতে আসা মানুষের ভিড় সামলাতে একপর্যায়ে মূল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।  ছবি: সোহেল সরওয়ারবাসা-বাড়িতে নেওয়ার জন্য ভাত-তরকারি বিক্রি না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একজন হোটেল মালিক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক আছেন। যারা নিয়মিত এখানে আহার করেন। তাদের জন্য রান্না করেছি। এখন পাড়ার মানুষ যদি সবাই হোটেলে ভাত কিনতে আসেন কোত্থকে দেবো। আবার নিয়মিত গ্রাহকরা যদি ভাত খেতে এসে না পায় তবে মুখ ফিরিয়ে নেবে হোটেল থেকে। তারপরও পরিচিত লোকজন এলে দিতে হচ্ছে।  

আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, একটি বড় পাউরুটি আর পরিচিত দোকান থেকে কিছু ভাত কিনলাম সন্তানদের জন্য। কখন গ্যাস আসবে কে জানে!

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান কাজীর দেউড়ি এলাকায় কয়েকটি হোটেলে ঘোরাঘুরির পরও ভাত কিনতে না পাওয়া আমজাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি চলছে এনালগ পদ্ধতিতে। তারা গ্যাস থাকবে না সেটি গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস দিয়ে, মাইকিং করে, লিফলেট বিতরণ করে জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। ফোন করার পর জানালো তারা নাকি বিজ্ঞপ্তি দিছে। আমরা তো সেটি দেখিনি।

তার কথা কেড়ে নিয়ে জিল্লুর রহমান বললেন, বিজ্ঞপ্তি একটির ছবি ফেসবুকে পাঠালেন এক বন্ধু। সেখানে লেখা নেই গৃহস্থালি লাইনের গ্যাস বন্ধ থাকবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৮
এআর/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।