ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

তিন বছরে ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন চট্টগ্রামে

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
তিন বছরে ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র পদে আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ৩ বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। পাশাপাশি চসিকের ৪১ ওয়ার্ডে আরও হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে চসিকের মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণের ৩ বছরপূর্তি উপলক্ষে একান্ত সাক্ষাৎকারে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।  
আর খবর>>** বাজেট বাস্তবায়নে ‘অর্জন’ বাড়ছে চসিকের
তিন বছরে সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমি কী মনে করি তা বিষয় নয়, নগরবাসী কী মনে করেন সেটিই বিবেচ্য বিষয়।

নগরবাসী ও সমাজের মধ্যে বিভাজন ও বিভক্তি থাকে। আবার অপরাজনীতিও থাকে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেও কথা বলে।
কিন্তু যারা সত্যিকার নাগরিক, তারা কী বলছেন, সেটি বিবেচ্য বিষয়। তবে আমি জোর দাবি করতে পারি, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ৩ বছরে প্রতিষ্ঠানের (চসিক) মধ্যে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে এনেছি, ‍অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত করেছি। নগরবাসীর সেবা ও সেবার মান বাড়াতে পেরেছি।

সবকিছু মিলে এ তিন বছরে সফলতার দিকেই এগোচ্ছেন বলে মনে করেন এ নগরপিতা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।   ছবি: সোহেল সরওয়ার

সিটি মেয়র জানান, ৩ বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছি। পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, গত ১০-১৫ বছর আগে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে গত তিন বছরে সেই পরিমাণ কাজ হয়েছে। এখন কাজের পরিধি ও কাজের ধরন বেড়েছে।  নগরবাসীর সেবার মাত্রা বেড়েছে।  ৩ বছরে আমি মনে করি নগরবাসী সন্তুষ্ট থাকার কথা। শহরে এখন নিরাপদে নগরবাসী চলাচল করতে পারে। অনেক সড়ক সংস্কার করেছি। সেখানে আলোকায়ন করেছি।

আমরা (চসিক) যখনই প্রকল্প নিয়েছি, মন্ত্রণালয় সেগুলো অনুমোদন করছেন উল্লেখ করে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, চট্টগ্রামের দায়িত্ব তিনি নিজ হাতে তুলে নিয়েছেন। তিনি শুধু সেটি মুখের কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, তিনি উদার হস্তে চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে চলেছেন। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একনেকে প্রকল্পগুলো পাস করে দিয়ে বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এজন্য নগরবাসীর পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ’

দীর্ঘদিনের অনেক সমস্যা তিন বছরে সমাধান করার কথা জানিয়ে সিটি মেয়র বলেন, আমাদের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। অনেক প্রকল্প একনেকে অনুমাদনের অপেক্ষায় আছে। সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগর হিসেবে নগরবাসী দেখতে পাবে। চট্টগ্রাম নগর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিলবোর্ডের কারণে নগরের সৌন্দর্য হারিয়ে গিয়েছিল। আমি পুনরুদ্ধার করেছি। গত ৩ বছরে শতভাগ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছি। বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে এমনকি গুলি বিনিময়ও হয়েছিল। সিটি করপোরেশনের মেয়র অফিসে হামলা ও ভাংচুর করেছিল। যা মিডিয়াতে এসেছে। এরপরেও করেছি। অনেকে মনে করেছিলেন আমিও বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে পারবো না। আবার এটিও অনেকে বলেছিলেন, যারা বিলবোর্ডের ব্যবসা করেন, কোনো না কোনো কারণে ওনারা আমার পছন্দের লোক না। তাই করছি। পছন্দের লোকদের দিয়ে এ ব্যবসা করানোর জন্য ওনি এসব উচ্ছেদ করতে চাচ্ছেন। কিন্তু সবাই দেখেছেন, আমি কী কী উদ্যোগ নিয়ে শতভাগ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছি। চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নগরবাসীকে ফিরিয়ে দিয়েছি।  

আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমি অন্তরে ধারণ করেছিলাম, বিলবোর্ড উচ্ছেদ করবোই এবং তা করেছি। ফুটপাত থেকে হকারদের সরিয়ে আনা, এটি বিরাট চ্যালেঞ্জের ছিল। যা কেউ আগে পারেনি। তাদের সরাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়সহ হামলা হয়েছিল। ভোর থেকে ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তা দখল করে হকাররা ব্যবসা পরিচালনা করতো। ফুটপাতগুলো পথচারীরা ব্যবহার করতে পারতো না। হকারদের বুঝিয়ে ফুটপাত থেকে সরিয়ে এনে একটি নির্দিষ্ট সময় বসার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। যদিও পুরোপুরিভাবে তারা ওই সময়টা মানছেন না। আমি স্বীকার করছি, তারা বিকেল ৫টায় নয় এখন দুপুর ২টার পর থেকে বসতে শুরু করে। এই সুফলটাও নগরবাসী পাচ্ছেন। পুরো শহরকে ক্লিন ও গ্রিন সিটিতে রূপান্তর করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, পথচারীরা এখন নির্বিঘ্নে ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছে। ফুটপাতকে আমি দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নিয়েছি। ফুটপাতকে সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় নিয়ে এসেছি। মিড আইল্যান্ডগুলো করছি। অনেক রাস্তা এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এসব পরিবর্তন হয়ে যাবে। অন্যদিকে, শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফুটপাত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না। এখানে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। যেটি বাস্তবায়নাধীন। ইতিমধ্যে আমরা নতুন নতুন অনেক ড্রেন স্থাপন করেছি।  

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ব্যর্থতা রয়েছে কি না জানতে চাইলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, যদি সত্যিকার অর্থে বলতে যাই, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। কী কী সেবা নগরবাসীকে দেবে, তা নির্ধারিত আছে। সেই অনুযায়ী আমি কোনো ব্যর্থতা দেখি না। কারণ আমাদের কাজ হচ্ছে-রাস্তাঘাট সংস্কার করা, নালা-নর্দমা নির্মাণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, সড়কবাতি দ্বারা আলোকায়ন করা। এগুলো আমার প্রধান দায়িত্ব। এ দায়িত্বগুলো আমি পালন করতে বাধ্য। সেই অনুযায়ী আমি কাজ করছি। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের কাজ চলছে, পোর্ট কানেকটিং রোডের কাজ চলছে। ২০১৯ সালের মে মাসে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এসব উন্নয়নকাজের জন্য রাস্তা কাটা হচ্ছে, যেটি জনস্বার্থে করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, টিঅ্যান্ডটি, পিডিবি করছে। এগুলো জনস্বার্থে করা হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে যদি কোনো পথচারী, কোনো গণপরিবহন চলাচলে ভোগান্তি হয়, উন্নয়নের স্বার্থে সেটি সহ্য করতে হবে এবং মেনে নিতে হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত সেবা হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, মান ও অবকাঠামো বাড়িয়েছি। বেশ কয়েকটি স্কুল নতুনভাবে নির্মাণ করেছি। শিক্ষক নিয়োগ, ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও সংস্কার করেছি। মাতৃসদনসহ হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
এসবি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।