ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হওয়ার ‘ভয়ে’ জমা হয় না তদন্ত প্রতিবেদন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৮
ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হওয়ার ‘ভয়ে’ জমা হয় না তদন্ত প্রতিবেদন চবি লগো ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পুড়িয়ে ফেলা উত্তরপত্র।

চট্টগ্রাম: ঘটনা ঘটে। যথারীতি তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু জমা হয় না তদন্ত প্রতিবেদন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুলাই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ঘটনায় ৯টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কোনোটার সময়কাল তিন বছর আর কোনোটার দু’বছর পার হলেও, এখনো প্রকাশ হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রবীন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, মারামারি, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অন্যান্য ঘটনা ধামাচাপা দিতেই নামকাওয়াস্তে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।   ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩০টিরও অধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কিন্তু একটিরও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি।  

তদন্ত প্রতিবেদন দিলে ক্যাম্পাস আবারো উত্তপ্ত হবে এ ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছে বলে মন্তব্য করেন প্রবীন শিক্ষকরা।

চলতি বছরের ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রায় সাত শতাধিক পরীক্ষার খাতা পুড়িয়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ঘটনা তদন্তে জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে সহকারী প্রক্টর হেলাল উদ্দিন আহমদ ও লিটন মিত্রকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু দুই মাস হতে চললেও এখনও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি কমিটির সদস্যরা।

এ বিষয়ে মো. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সময় বেশি লাগছে। খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।  

তবে কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আলী আজগর চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে তার কার্যালয়ে হামলা, সাংবাদিকের গাড়িসহ ১৬টি গাড়ি ভাঙচুর করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক অংশের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ সফিউল আলমকে ‍আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।  

মোহাম্মদ সফিউল আলম বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত চলছে সময় হলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর এক শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার কার্যালয় ভাঙচুর করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনা তদন্তে যথারীতি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বললেও চার মাস পরও প্রতিবেদন দেয়নি কমিটি।  

কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এস এম সালামতউল্ল্যা ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি স্থিমিত হয়ে যাওয়ায় তদন্ত আর করা হয়নি। তাই  প্রতিবেদনও জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি।  

এছাড়া ২০১৬ সালের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও ২০১৫ দুই পক্ষের সংঘর্ষে গঠিত ৪-৬টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও এখনও প্রকাশ হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে আরও গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা  ও শাস্তি নিশ্চিত করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় আরও শৃঙ্খলায় চলে আসতো।  

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত কমিটিতে থাকা সবাই শিক্ষক। আমরা তাদের জোর করে কোনো কিছু বলতে পারি না। তবে মাঝে-মধ্যে তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিক সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলে অপরাধীরা বারবার অপরাধ করা থেকে বিরত থাকতো।

 চবির উত্তরপত্র পোড়ানোর পেছনে দুই ছাত্র!

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৮

জেইউ/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।