ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১৫ কেজি ওজনের মৃগেলটি মাটি চাপা দেওয়া হলো!

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৮
১৫ কেজি ওজনের মৃগেলটি মাটি চাপা দেওয়া হলো! দূষণে বিপর্যস্ত হালদায় মরে ভেসে উঠেছে ১৫ কেজি ওজনের মৃগেল মাছও

চট্টগ্রাম: ৩ ফুট লম্বা, ১৫ কেজি ওজনের মৃগেল মাছটি মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। দূষণে বিপর্যস্ত হালদা নদীতে মরে ভেসে উঠেছিল মা-মাছটি। এতটাই পচে গেছে মাছটি শেষপর্যন্ত মাটি খুঁড়ে চাপা দেওয়া হলো কঙ্কাল সংগ্রহের জন্য।

শুধু কি মৃগেল, বড় বড় আইড়, কাতলা, বাইন, টেংরা, চিংড়িসহ নানান প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে হালদায়। হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন হালদাপারের মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজানের বন্যার পানি নামার পর কয়েকদিন ধরে হালদার মাছ মরে ভেসে ওঠার বিষয়টি নজরে পড়ে মানুষের।

বুধবার (২০ জুন) ছোট আকারের মরা মাছ দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার (২১ জুন) সকাল থেকে প্রচুর বড় মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠতে দেখা যায়।

খবর পেয়ে হালদা-কর্ণফুলী মোহনা থেকে শুরু করে গড়দুয়ারা পর্যন্ত নৌকায় সরেজমিন পরিদর্শন করেন হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া।

দূষণে বিপর্যস্ত হালদার মাছ মরে ভেসে উঠছে।  তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আজ যে মরা মৃগেলটি আমরা দেখলাম তার ওজন ১৫ কেজি। এতো বড় মৃগেল মাছ আমি এ জীবনে আর দেখিনি। গবেষণার জন্য মাছটির কঙ্কাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যে স্থানীয় তরুণদের সহায়তায় আমরা মাটি চাপা দিয়েছি। সাত-আট কেজি ওজনের বেশ কিছু আইড় মাছও মরে ভেসে উঠেছে। কাদায় থাকে যেসব মাছ সেগুলোও মরে ভেসে উঠছে। চেঁওয়া, টেংরা, বাইন, চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির মরা মাছ চোখে পড়লো। কয়েক মাস আগে হালদার অনেক ডলফিন মরে ভেসে উঠেছিল।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম রয়েছে। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন হালদার পানি দূষিত মনে হলো। কাটাখালী, খন্দকিয়াসহ অনেক শাখা খালের মুখ দেখলাম কালো পানিতে একাকার। কেন এমন হচ্ছে, প্রতিকারের উপায় কী তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। এসব ব্যাপারে আরও কাজ করতে হবে।

এদিকে ‘পরিবেশ বাঁচাও হালদা বাঁচাও’ স্লোগানে হালদা নদীতে শিল্পবর্জ্যের আগ্রাসনের প্রতিবাদে শনিবার (২৩ জুন) বিকেল সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের মদুনাঘাট চত্বরে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন স্থানীয়রা।  

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হালদা’র সাধারণ সম্পাদক এসএম মুজিব বাংলানিউজকে বলেন, রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ জাতীয় কার্প মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা। যেখান থেকে নদীর দুই পাড়ের বংশ পরম্পরায় অভিজ্ঞ জেলেরা মা-মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেন। উত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানি এ নদী দিয়ে কর্ণফুলীতে নামে। এ হালদা নদী থেকে চট্টগ্রাম শহরে ওয়াসা পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি চট্টগ্রামের লাইফ লাইন। তাই দখলে দূষণে বিপর্যস্ত হালদা বাঁচানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি হালদার কিছু কিছু এলাকার পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে বলেই মাছ ও জলজ প্রাণী মারা পড়ছে। এ পানিতে গোসল করে অনেক মানুষ চর্মরোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন।

হালদায় ডিম ছেড়েছে রুই-কাতলা
২২৬৮০ কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ হালদায়

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৮
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।