এ প্রশ্ন একজন কাপড়ের দোকানির। ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষের কাছে এখন আতঙ্কের নাম ‘জাল নোট’।
কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ার শপিং মলের নিচতলার একটি তৈরি পোশাকের দোকানের ক্যাশবক্সের কাচের নিচে রাখা হয়েছে একটি ১ হাজার টাকার জাল নোট।
একই বিপণিকেন্দ্রের ওয়ানটেক্স নামের একটি শাড়ির দোকানের ক্যাশেও ১ হাজার টাকার বাতিল জাল নোট নমুনা হিসেবে রাখা হয়েছে।
দোকানিরা জানান, ভিড়ের সময় জাল নোটের কারবারিরা আসল নোটের সঙ্গে গছিয়ে দিয়েছে। পরে ব্যাংক জাল নোট শনাক্ত করে নোটগুলো বাতিল করে দিয়েছে। এরপর সচেতনতার জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
ভিআইপি টাওয়ার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি চৌধুরী সাইফুদ্দিন রাশেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, জাল নোট আতঙ্ক সবার মধ্যে আছে। একটি জাল নোট মানে পুরোটাই ক্ষতি। তার ওপর নানান হয়রানি তো আছেই।
আখতারুজ্জামান সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জাল নোটের ব্যাপারে আমাদের বিপণিকেন্দ্রের ব্যবসায়ী, বিক্রয়কর্মীরা সচেতন। দেখে শুনে লেনদেন করছেন তারা। এ ছাড়া সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও নজরদারি রেখেছেন।
কোতোয়ালী থানা পুলিশ রিয়াজউদ্দিন বাজারের ‘পরীস্থান’ নামের একটি শোরুমের বিপরীত দিকের সড়ক থেকে শনিবার (৯ জুন) রাতে ৩১ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোটসহ মো. ফারুক নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে ১১ এপ্রিল ৩০ লাখ টাকার জাল নোটসহ কোতোয়ালী থানার নিউমার্কেট এলাকা থেকে লোহাগাড়া উপজেলার পশ্চিম আমিরাবাদের হাজিপাড়ার আবদুর শুক্কুরের ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন (৩২) ও একই এলাকার সামসুল ইসলামের ছেলে মো. জাহেদ হোসেনকে (২২) গ্রেফতার করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
তাদের তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে লোহাগাড়ার পশ্চিম আমিরাবাদে তাদের নিজ বাড়ি থেকে জাল নোট তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, সিপিইউ, জাল নোট তৈরির উন্নত প্রিন্টার, জাল নোট কাটার মেশিন উদ্ধার করা হয়। এ সময় প্রস্তুতের প্রক্রিয়াধীন এক হাজার টাকার ৩০৯টি, পাঁচশ টাকার ১০৫টি জাল নোটও উদ্ধার করা হয়।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বাংলানিউজকে বলেন, জাল নোট পাওয়া গেলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। টেরিবাজার, নিউমার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, হকার্স মার্কেটসহ ঈদের কেনাকাটার প্রধান প্রধান বিপণিকেন্দ্রগুলোতে জাল নোট যাতে কেউ চালাতে না পারে সে ব্যাপারে কড়া নজরদারি রয়েছে। মূলত সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা নারীদের ক্রেতা সাজিয়ে ভিড়ের মধ্যে নকল নোট গছিয়ে দেন। অনেক সময় পুরুষরা নকল টাকা হাতবদল করেন নানা কৌশলে।
জনতা ব্যাংকের জুবিলি রোড শাখার ব্যবস্থাপক অরুণ শীল বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য বছর ঈদুল আজহার সময় জাল নোটের কারবারিরা সক্রিয় হতে দেখা যেত। এবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে জাল নোট ছাপানোর মেশিনসহ বিপুল পরিমাণ জাল নোট জব্দ করেছে প্রশাসন। আমাদের বেশিরভাগ গ্রাহকই ব্যবসায়ী। তাদের লেনদেনে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি।
বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, জাল নোট ও আসল নোটের পার্থক্য যাতে মানুষ বুঝতে পারে সে জন্য বছরজুড়ে নানা প্রচারণা চালিয়ে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। তফসিলি ব্যাংকগুলোকেও আসল নোটের বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করে পোস্টার সাঁটানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাল নোট শনাক্ত করার মেশিন ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার বেআইনি কাজটা করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এর সঙ্গে নতুন টাকার কারবারিরা যেমন যুক্ত থাকতে পারে তেমনি ঈদ-পার্বণের কেনাকাটায় ভিড়ের সুযোগে ছদ্মবেশী ক্রেতারাও জড়িত।
ত্রিশ লাখ টাকার জাল নোটসহ আটক ২
৩১ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোটসহ গ্রেফতার ১
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৮
এআর/টিসি