বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) নগরীর শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পাঁচ দিনব্যাপী স্বাধীনতার বইমেলার উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম একাডেমি প্রতিবছর মার্চে এ মেলার আয়োজন করে।
আহমদ রফিক বলেন, মেলার মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। বইমেলা মানে লেখক-পাঠক ও প্রকাশক তিনের বন্ধন।
তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, অশিক্ষিত জাতি মানবসম্পদ নয়, জাতির বোঝা। আমি মনে করি, সদিচ্ছা ও আন্তরিক চেষ্টা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে গেলে শিক্ষিত জাতি পাওয়া অসম্ভব নয়। নারীদেরও এতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বইমেলাকে আরও প্রসারিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, উচ্চমানসম্পন্ন বই প্রকাশ করতে হবে। মানসম্পন্ন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখক-প্রকাশককে ভাবতে হবে। পাঠককে বইমুখী করার জন্য বইমেলায় ভালো ভালো প্রকাশনা সংস্থাকে যুক্ত করতে হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির চেয়ারম্যান, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম একাডেমি সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে ভূমিকা রাখছে। বই হাজার বছরের স্মৃতিকে ধারণ করেছে। সভ্যতাকে রক্ষা করে চলেছে। তাই বইয়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আছে, থাকবে। চট্টগ্রামে এখন ভালো ও বিশ্বমানের বই পাওয়া যায়।
তিনি বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম একাডেমি বই লেখক, পাঠক তৈরির ক্ষেত্রে প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে।
আলোচনায় অংশ নেন একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক আবুল মোমেন, প্রাবন্ধিক-কলামলেখক মাজহারুল ইসলাম বাবলা ও ওয়েল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম।
কবি আবুল মোমেন বলেন, চট্টগ্রাম একটি সক্রিয় প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাহিত্য-সংস্কৃতির কার্যক্রম জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান মনীষীদের স্মরণে গৌরবজনক কাজ করেছে।
তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, মানুষ বই আসলে পড়ে কিনা। শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের উত্তর শেখে। মূল বই পড়ে না। পূর্ণাঙ্গ বই না পড়ে অনার্স মার্স্টাস ডিগ্রি পাওয়া যায়। কিন্তু সাহিত্য নিয়ে তর্ক-বিতর্ক-আলোচনা-বিতণ্ডা শোনা যায় না। এখন তারা মুঠোফোনে ব্যস্ত। এদের বইয়ের সাধনায় ফিরিয়ে আনতে হবে। নারী যেমন কৃষিকে, সমাজকে রক্ষা করেছে এবার বইকে রক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। বই চেতনাকে মননশীলতাকে শাণিত করে। মন ও জ্ঞানকে ঋদ্ধ করে। বইমেলা কেবল বিভাগীয় শহর নয়, জেলা-উপজেলা-গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। তৈরি করতে হবে পাঠক ও পাঠাগার। নতুন প্রজন্মের উন্নত মানস গঠনে বই ও বইমেলা সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম কমু বলেন, বাঙালি জাতির আজ সুখের দিন, মাথা উঁচু করে সামনে এগিয়ে যাওয়া দিন। দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২১ সালে এ স্বীকৃতি পরিপূর্ণতা পাবে। ২০৪১ সালে দেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে।
বক্তব্য দেন বইমেলা উদযাপন পরিষদ আহ্বায়ক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা রাশেদ রউফ। সূচনা বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি জিন্নাহ চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বইমেলা উদযাপন পরিষদ মহাসচিব নেছার আহমদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমু।
এর আগে বিকাল চারটায় বিভিন্ন মনীষীর নামে ১৮টি কর্নার ফিতা কেটে উদ্বোধন করা হয়। পরে অতিথিরা মেলা ঘুরে দেখেন। মেলা আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
স্বাধীনতার বইমেলা শুরু হচ্ছে শিল্পকলায়
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৮
এআর/টিসি