ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসেও ‘মাঠ হারানোর কষ্ট’  

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসেও ‘মাঠ হারানোর কষ্ট’   অপর্ণা চরণ স্কুলের প্রথম পুনর্মিলনীতে উচ্ছ্বাসে মাতেন সাবেক ছাত্রীরা। ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: ১৯৫৭ সালে মাধ্যমিকের গণ্ডী পেরিয়েছিলেন খাদিজা হোসনে আকতার। মেয়ের কাঁধে ভর দিয়ে এসেছিলেন অপর্ণা চরণ স্কুলে কৈশোরের স্মৃতির পাতা মেলাতে। দেখলেন সব কিছু বদলে গেছে। যে ভবনে দিদিমণিদের ভয়ে তটস্থ থাকতেন সেই নেই। নতুন দালান উঠেছে। যে মাঠে ছুটে বেড়াতেন সেটিও নেই।

শুক্রবার (১২ ‍জানুয়ারি) বিকেলে পুনর্মিলনীর প্রথম দিনে স্কুল প্রাঙ্গণে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

তিনি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।  

আইসিএবি’র প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পারভীন মাহমুদ।

১৯৭০ ব্যাচের এ ছাত্রী বললেন, আমাদের মাঠে টিনের ছাউনির ক্লাসরুম বানানো হয়েছে। এটা খুবই কষ্টের। মাঠ নেই বলে আমাদের কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে পুনর্মিলনী করতে হচ্ছে।

পুনর্মিলনীতে ছিল সেলফি তোলার ধুম।  ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ

তিনি জানান, ৯১ বছর বয়সী রেখা ভট্টাচার্য নামের একজন ছাত্রী কলকাতায় আছেন। দীপ্তি দিদিমণি নামের একজন শিক্ষিকাও আছেন কলকাতায়। তাদের নিয়ে ডকুমেন্টারি করা হয়েছে। তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন।

মাঠের কষ্ট পীড়া দিচ্ছে ৮২ ব্যাচের জ্যোৎস্না কায়সারকেও। বললেন, দেড় হাজার প্রাক্তন ছাত্রীর মধ্যে তিনজন বান্ধবীর দেখা হলো আজ। সবারই এক কথা আমাদের মাঠ কই? মাঠ হারানোর বেদনা সবার মনে। আশাকরি, নতুন ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ মাঠ খালি করার উদ্যোগ নেবে।   

নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন অপর্ণা চরণ স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরা।  ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ

নগর পুলিশের এডিসি (ট্রেনিং) অনিন্দিতা বড়ুয়া ১৯৯০ সালে এসএসসি পাস করেছেন এ বিদ্যালয় থেকে। বললেন, ‘আমাদের যে ভবনে ক্লাস হতো সেই স্মৃতিময় ভবনটি আর নেই। নতুন ভবন হয়েছে। আমার মা এ স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তারপরও আমি খুশি। নবীন-প্রবীণদের মধ্যে একটা মেলবন্ধন হয়েছে। ’

বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক। স্বাভাবিকভাবেই সেই গর্বে গর্বিত সাবেক ছাত্রীরা। স্কুলটির প্রথম পুনর্মিলনীর আহ্বায়ক ড. জয়নাব বেগম বললেন, প্রীতিলতা আমাদের জন্য গৌরবের। তিনি প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এরপর প্রণতি সেন ছিলেন ৩৯ বছর। আমরা এ পুনর্মিলনীর মাধ্যমে স্কুলের জন্য কিছু করতে চাই। এটি আমাদের বহু দিনের লালিত স্বপ্ন। এ বিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রী সমাজে প্রতিষ্ঠিত, জাতির সেবায় নিয়োজিত। দুই দিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে এসেছেন অনেকে।

১৯৯৬ ব্যাচের নাসিম সুলতানা পুনর্মিলনীর জন্য ছুটে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে। বাংলানিউজকে বললেন, ৯০ বছর বয়সী একটি স্কুলের প্রথম পুনর্মিলনী মিস করতে চাইনি। শুধু কি আমি, আমার বোন শামিমা সুইডেন যায়নি এ অনুষ্ঠানের জন্য, তার স্বামী চলে গেছে। সারা দিন খুব আনন্দ করেছি। অনেক মজা হয়েছে।

বোধন আবৃত্তি পরিষদের মৃত্তিকা শারমিন জানালেন, ২০০১ ব্যাচের সবাই একই ধরনের ক্রাউন (তাজ), শাড়ি কিনেছেন এ অনুষ্ঠানের জন্য। সবাই নেচে-গেয়ে-সেলফি তুলে দারুণ সময় কাটিয়েছি আজ।

অপর্ণা চরণ স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী।  ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ নজরুলসংগীত শিল্পী মৃণালিনী চক্রবর্তী বললেন, দিদিমণিরা উৎসাহ দিয়েছিলেন বলেই আমি শিল্পী হতে পেরেছি। আমার অনেক ঋণ এ স্কুলের প্রতি। আমার বোন পড়েছে এখানে। এখন ভাইজি পড়ছে।  

রাবেয়া বেগম বয়সের ভারে ক্লান্ত। শোভাযাত্রা শেষে বারান্দায় চেয়ারে বসে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। বললেন, ১৯৭২ সালের ব্যাচ। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের কারণে পরীক্ষা হয়নি। ৭২ সালে দুটি ব্যাচের পরীক্ষা হয়েছিল। জীবদ্দশায় নিজের স্কুলে আবার আসা হবে ভাবিনি। এ স্কুল চিত্রলেখা গুহসহ অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের জন্ম দিয়েছে। যা আমার জন্য গৌরবের।  

সাংবাদিক সুমি খান বললেন, আবার স্কুলজীবন ফিরে পেলাম আজ। কৈশোরের বন্ধুদের ফিরে পেয়েছি। এ স্কুলটি শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি প্রীতিলতার স্মৃতিধন্য একটি ঐতিহ্য। একে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) পুনর্মিলনীর সমাপনী দিনে থাকবে স্মৃতিচারণ, আড্ডা, সংবর্ধনা ইত্যাদি।   

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।