ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফাঁসি দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধায় মাষ্টারদাকে স্মরণ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
ফাঁসি দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধায় মাষ্টারদাকে স্মরণ মাষ্টারদা সূর্য সেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা

চট্টগ্রাম: ৮৪ তম ফাঁসি দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধায় অগ্নিযুগের বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেনকে স্মরণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠন।  চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ এবং জেএম সেন হলে আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে মাষ্টারদার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ‍জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকালে ফাঁসির মঞ্চের পাশে সূর্যসেনের প্রতিকৃতিতে জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরীর পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।  

এছাড়া জেএম সেন হলে সূর্যসেনের আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহার নেতৃত্বে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা শাখার নেতারা।

  এসময় সেখানে সিপিবি’র উদ্যোগে আলোচনা সভাও হয়েছে।

একই স্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলা সংসদ।

 এরপর দলীয় কার্যালয়ে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আতিক রিয়াদ।  

জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যানি সেনের সঞ্চালনায় এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার, কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল ও সদস্য অটল ভৌমিক।  এছাড়া জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সহ: সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রনি কান্তি দেব, খালিদ মিরাজও বক্তব্য রাখেন।

সভায় বক্তারা বলেন, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বিপ্লবীরা হাসিমুখে প্রাণ দিয়েছিলেন।  মাস্টারদার নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র বিপ্লবী দল যুদ্ধ করে চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার নিয়ন্ত্রণে এনে বৃটিশদের দেড়’শ বছরের গৌরব ধুলোয় মিশিয়ে চট্টগ্রামকে স্বাধীন ঘোষণা করেন।  ক্ষণস্থায়ী হলেও এই বিপ্লবী সরকার সারা ভারতে স্বাধীনতাকামী মানুষদের মনে বিপ্লবী চেতনাকে উজ্জীবিত করেছিল।  

‘ইংরেজ সরকার মাস্টারদাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন। পরে এক নিকটাত্মীয়ের বিশ্বাসঘাতকতায় মাস্টারদা সহ তার দুই বিশ্বস্ত সহযোগী তারেকেশ্বর দস্তিদার ও কল্পনা দত্ত ধরা পড়েন।  মাস্টারদা সূর্যসেন ও তারেকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি হয় এবং কল্পনা দত্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফাঁসির পরে মাস্টারদা ও তারেকেশ্বরের মৃতদেহ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ’

বক্তারা আরও বলেন, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ পরাজিত হয়েছে, পাকিস্তানি শাসকদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে এদেশের মুক্তিকামী জনগন।  কিন্তু আমাদের কাঙ্খিত সেই গণতান্ত্রিক ও শোষণ বৈষম্যহীন রাষ্ট্র এখনও আমরা পাইনি। আজো আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য।   গণতান্ত্রিক ও শোষণ বৈষম্যহীন সমাজের জন্য এখনো আমাদের লড়তে হচ্ছে। মানবিক পৃথিবী নির্মাণের এই লড়াইয়ে মাষ্টারদা আমাদের অনুপ্রেরণা। মাষ্টারদার ফাঁসি দিবসে আলোচনা সভা

বাসদ (খালেকুজ্জামান) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির পক্ষে আল কাদেরী জয় ও পার্থপ্রতীম নন্দী এবং বাসদের (মার্ক্সবাদী) আরেক অংশের কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী ও চট্টগ্রামের সমন্বয়ক অপু বিশ্বাস জেএম সেন হলে সূর্যসেনের আবক্ষ মূর্তিতে ফুল দেন।

এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চে মাষ্টারদা সূর্যসেন স্মৃতি রক্ষা পরিষদ এবং বোয়ালখালীর বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদও সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।  

বিপ্লবী ‍তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা সুযিত নাগ, ডা.তপন কান্তি দাশগুপ্ত, প্রবীর দাশগুপ্ত ও সিঞ্চন ভৌমিক এসময় উপস্থিত ছিলেন।  

১৮৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে সূর্যসেনের জন্ম। উমাতারা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন বলে মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে চট্টগ্রামে গোপন বিপ্লবী দল সংগঠনের কাজ শুরু করেন।  ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মূলত চট্টগ্রাম তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকদের অধীনে ছিল না।  ছিল মাস্টারদা সূর্যসেনের বিপ্লবী বাহিনীর হাতে।

মাস্টারদা তখন ফাঁসির আসামি। ব্রিটিশ শাসক মাস্টারদাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকলে ১৯৩৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া থানাধীন গৈরলা গ্রামে আশ্রয় নেন। ক্যাপ্টেন ওয়ামসলির নেতৃত্বে একদল গুর্খা সৈন্যের সঙ্গে তুমুল গোলাগুলির পরে মাস্টারদাকে রাত ২টার দিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর হবার কথা উল্লেখ করা হয়। মৃতদেহ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজার ‘দি রিনিওন’ এ তুলে নিয়ে লাশের বুকে লোহার টুকরো বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।