ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আ’লীগ প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় যুবলীগ নেতাকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
আ’লীগ প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় যুবলীগ নেতাকে হত্যা যুবলীগ নেতা এনাম

চট্টগ্রাম: ফটিকছড়ি থানার আব্দুল্লাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এনামের হত্যা রহস্য উম্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), চট্টগ্রাম জেলা।

আবদুল্লাহপুর ইউনিয়র পরিষদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে পরবর্তীতে চেয়ারম্যান হওয়া অহিদুল আলমের পক্ষ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষ তাকে খুন করে।

গত বছরের ৭ মে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন এই যুবলীগ নেতা।

এর সাত মাস পর রোববার (০৭ জানুয়ারি) দুপুরে নগরী থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এক আসামিকে গ্রেফতারের পর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচিত হয়।

এর আগে থানা পুলিশের পর ও গোয়েন্দা পুলিশও তদন্ত করে এই হত্যার রহস্য উম্মোচন করতে পারেনি।

অবশেষে পিবিআই'র তদন্তে বেরিয়ে এলো হত্যার কারন।

পিবিআই সূত্র জানায়, গত বছরের ৭ মে বিকেল তিনটার দিকে এনাম পাশের তৌকির হাট যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তিনি বাসায় না ফেরায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার  তাকে ফোন করেন। কিন্তু ফোনটি রিসিভ হয়নি। একপর্যায়ে রাত ১২টার পর থেকে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সূত্র আরও জানায়, অনেক খোঁজাখুজির পর এনামের খোঁজ না পেয়ে পরদিন (০৮মে) পরদিন শারমিন আক্তার স্থানীয় ফটিকছড়ি থানার একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এর পরদিন (০৯ মে) সন্ধ্যা সাতটায় উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুরের বায়তুল হুদা মাদ্রাসার ব্রিজের নিচে তেরপারই খালের তীরে বস্তাবন্দি অবস্থায় এনামের অর্ধগলিত মরদেহ পাওয়া যায়।

ফটিকছড়ি থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এই ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার এনামের মা হালিমা খাতুন বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ফটিকছড়ি থানায় ১০ মে একটি মামলা করেন।

মামলা হওয়ার পর ফটিকছড়ি থানা পুলিশ এক মাস তদন্ত করে কোন ক্লু উদ্ঘাটন করতে না পারলে সেটি চট্টগ্রাম জেলার গোয়েন্দা শাখায় ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু  সেখানেও কোন ক্লু পাওয়া যায়নি।

পরে মামলাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা স্ব-উদ্যোগে গত ৫ জুন মামলাটি অধিগ্রহণ করে এবং এসআই মো. শাহাদাত হোসেনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়।

পিবিআই আরও জানায়, ৫ জুলাই অন্যতম আসামি গিয়াস উদ্দিন সুজনকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। সুজন পরদিন আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়। পরবর্তীতে ১৯ জুলাই অন্য আসামি মো. বেলালকে (৩১) গ্রেফতার করা হয়। সেও ২০ জুলাই আদালতে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়। আসামি নওশাদ।  যার জবানবন্দিতে বেরিয়ে এসেছে এনাম হত্যার রহস্য

পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন)আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, রোববার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর আতুরার ডিপো এলাকা হইতে মামলার মূল আসামি নওশাদ আলীকে গ্রেফতার করি আমরা। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনা স্বীকার করে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। এ নিয়ে আমরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছি। পাশাপাশি মরদেহ ফেলে দিতে ব্যবহৃত সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিও জব্দ করেছি।

যেভাবে হত্যা করা হয় এনামকে:  এনাম বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়া বর্তমান চেয়ারম্যান অহিদুল আলমের পক্ষ নেয়। এতে বিরুদ্ধ পক্ষের সাথে তার শত্রুতা সৃষ্টি হয়। সেই শত্রুতার জের ধরে আসামি সুজন এনামকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন আসরের নামাজের পর আসামি সুজন অন্য আসামি নওশাদকে ফোন করে সিএনজিচালক বেলালকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় আসতে বলেন। নওশাদ এবং বেলাল সুজনের বাসায় গেলে দেখতে পায়, সেখানে আগে থেকেই এরশাদ এবং ফারুক বসা ছিল। তখন সুজন অন্য আসামি বেলাল, নওশাদ, এরশাদ ও ফারুককে বসতে বলে এবং গুরুত্বপূর্ন কথা আছে বলে জানায়। কিছুক্ষন পর সুজন এনামকে ফোন করে তার বাসায় আসতে বললে এনাম সুজনের বাসায় আসে। এসময় সেখানে সুজন, বেলাল, নওশাদ, এরশাদ এবং ফারুক বসে ছিল। এসময় এনাম তাদের কাছ থেকে তারা কেনো আসছে জানতে চাইলে তারা জানায় সুজন ডাকছে বলে তারা এসেছে।

এনাম সুজনের দুই তলা বাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বসতে না বসতেই সুজন পেছন দিক থেকে এনামকে শক্ত করে ধরে ফেলে। তখন সুজনের নির্দেশের সাথে সাথে আসামি বেলাল, এরশাদ, নওশাদ ও ফারুক ভিকটিম এনামকে ঝাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। এরশাদ এনামের মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে দেয়; অন্য আসামি ফারুক রশি দিয়ে এনামের হাত ও পা বেঁধে ফেলে। প্রথমে বেলাল ও নওশাদ এনামের গলা টিপে ধরলে এনাম ধস্তাধস্তি করতে থাকে। তখন আসামি নওশাদ এনামের বুকের উপর বসে পড়ে। এসময় ফারুক এনামের হাত-পা আরও শক্ত করে বেঁধে ফেলে। সুজন এনামের গলায় পা দিয়ে চেপে ধরলে এনাম আর নড়াচড়া করতে পারেনি। কিছুক্ষন পর এনামের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এনামের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সুজন অন্য আসামি বেলাল ও নওশাদকে বাজারে যাওয়ার জন্য বলে এবং প্রয়োজনে তাদের ফোন করবে বলে জানায়। পরে সুজন তৌকির হাট বাজার থেকে একটি চটের বস্তা নিয়ে আসে। তার পর সুজন এবং ফারুক এনামের লাশ ঐ চটের বস্তায় ডুকিয়ে রাখে। পরে রাত ১১টার দিকে সুজন নওশাদকে ফোন করে বেলালসহ অটোরিকশা নিয়ে তার বাসায় আসার জন্য বলে। তখন বেলাল স্থানীয় ঘুলদের দোকানের সিএনজির মালিক অন্য বেলালকে ফোন তার অটোরিকশাটি দিতে বলে। গাড়ির মালিক বেলাল তার গাড়ি নেওয়ার কারন জানতে চাইলে আসামি বেলাল জানায়, তার একটি ভাড়া আছে, তাই গাড়িটি জরুরি দরকার। আসামী বেলাল এবং নওশাদ গাড়ি নিয়ে সুজনের বাসায় আসলে সুজন এবং ফারুক ভিকটিম এনামের বস্তাবন্দি মরদেহ গাড়িতে উঠায়। আসামী নওশাদ সিএনজি চালায়। বেলাল এবং ফারুক ভিকটিম এনামের বস্তাবন্দি মরদেহটি নিয়ে গাড়িতে বসে। নিশ্চিন্তপুরের বায়তুল হুদা মাদ্রাসার ব্রিজের উপর আসলে বেলাল ও ফারুক  এনামের বস্তাবন্দি মরদেহটি পারইখালে ফেলে। পরে ফারুক নাজিরহাটে ও বেলাল তার শ্বশুরবাড়িতে চলে যায়। নওশাদ ও সুজন নিজেদের বাড়িতে চলে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad