ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শিক্ষকরা যৌন হয়রানিতে: সমাজ বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
শিক্ষকরা যৌন হয়রানিতে: সমাজ বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির বিষয়টি নতুন নয়। বছর কয়েক আগেও সমুদ্র ও মৎস্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সাইদুল ইসলাম সরকারের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে বিষয়টি গিয়েছিল। কিন্তু সেই তদন্তটি এখনও ঝুলে আছে।

কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রফিকুল হকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির তিনটি অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি এর সত্যতা পায়।

উপাচার্যের দপ্তরে তদন্ত রিপোর্টটি জমা পড়েছে।

সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা বেশিরভাগই ধামাচাপা পড়ে যায়।

মাঝেমধ্যে কোনো কোনো ঘটনা ফাঁস হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে বলে মত তাদের।

তারা বলছেন, যেসব শিক্ষক এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত দেখা যাবে তাদের অতীতের রেকর্ড ভালো না। এই জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিযোগ দেওয়ার আগে তাদের অতীত রেকর্ড জেনেই নিয়োগ দেওয়া উত্তম। এছাড়া শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তাদের নিয়ে কোনো প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি না নেওয়ায় এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুৎফুন নাহার বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি বা নির্যাতন এটি প্রায় সময় ঘটে থাকে। প্রতিকূলতার মধ্যেও কয়েকজন সাহস করে যৌন হয়রানির ঘটনা ফাঁস করেন। যারা ফাঁস করেন তাদের অভিনন্দন জানাতে হয়। ’

তিনি বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক হলেন শিক্ষকরা। তাদের কাছ থেকেই শিখবেন শিক্ষার্থীরা। যারা এসব কাজ করছে তাদের শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকাটা মোটেও সমুচিত নয়। অল্প কয়েকজন অপরাধ করলেও এর দায় কিন্তু সবার উপরই বর্তায়। ’

যৌন হয়রানি বন্ধ করতে হলে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘বারবার ঘটনাগুলো ঘটছে এর কারণ কী? কারণ হলো-অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান না করা। এ পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর ও আন্তরিক হতে হবে। না হলে এটি কোনোভাবেই থামানো যাবে না। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের আরেক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি কমাতে হলে যে বিষয়টি করতে হবে তা হল- বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। প্রত্যেক বিভাগের সভাপতির উচিত চারদিকে চোখ-কান খোলা রাখা। ’

তিনি বলেন, ‘কেউ যৌন হয়রানির শিকার হলে তা যদি পুরোপুরি প্রকাশ করতে না পারে তাহলে সে মানসিক ট্রমার মধ্যে থাকে। এজন্য কেউ ভুক্তভোগী হলে তার পুরোপুরি বিষয়টি বলা উচিত। শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়ন সহিংসতা রোধে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা আছে। যেখানে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন, কমিটি গঠন এবং এসব তথ্য সব শিক্ষার্থীকে জানানোর বিধান আছে। ’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এ নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি। এ ধরনের একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি বজায় থাকলে তা যেমন নিপীড়ককে উৎসাহিত করে, তেমনি নিপীড়িতও অভিযোগ করার সাহস হারাবে বলে অভিমত এই বিশ্লেষকের।

বাংলাদেশ সময়:১৮০৬ ঘণ্টা, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

জেইউ/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।