ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘মৎস্যগন্ধা’ থেকে ‘হালদা’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
‘মৎস্যগন্ধা’ থেকে ‘হালদা’ নারীর মাতৃত্ব ও ডিম্ববতী মাছই ‘হালদা’ চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য বিষয়।

চট্টগ্রাম: নারীর মাতৃত্ব ও ডিম্ববতী মাছই ‘হালদা’ চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য বিষয়। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় পুরো গল্পটাই ভয়ংকর হৃদয়স্পর্শী (টাচি)। অনেক স্পর্শকাতর বিষয় আছে। যেগুলো দর্শকের মনে দাগ কাটবে।  

তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘হালদা’র গল্পকার ড. আজাদ বুলবুল রোববার (৩ নভেম্বর) বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।

নগরীর কাজীর দেউড়ির আলমাস সিনেমা হলে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) থেকে প্রদর্শিত হচ্ছে ‘হালদা’।

প্রথম দিনই সপরিবারে ছুটে আসেন আজাদ বুলবুল। দুটি শো’তেই দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানতে চান তিনি।
বললেন, ‘প্রচুর দর্শক আগ্রহ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে আসছেন। ৯০, ১২০, ১৪০ টাকা টিকেট কেটে ঢুকেছেন তারা। চাহিদা থাকায় হল কর্তৃপক্ষ অগ্রীম টিকেট বিক্রি করছেন। ’

‘হালদা’র গল্প লিখেছেন ড. আজাদ বুলবুল

দুই যুগের বেশি সময় অধ্যাপনায় যুক্ত থাকা আজাদ বুলবুল বলেন, ‘হালদা’ চলচ্চিত্রের মূল নাটকটি প্রকাশ করেছিল লিটলম্যাগাজিন ‘নোঙর’। তা-ও চার বছর আগের কথা। তখন অর্ধশতাধিক পৃষ্ঠার এ লেখাটির নামকরণ করেছিলাম ‘মৎস্যগন্ধা’। পরবর্তীতে ‘হালদার হাসি’ নামে চিত্রনাট্যের আমূল পরিবর্তন করে জমা দেওয়া হয় সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের জন্য। কিন্তু সেটি অনুমোদন পায়নি। সর্বশেষ তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় আলোর মুখ দেখল ‘হালদা’।

তিনি বলেন, ‘হালদা’র বিশেষত্ব হচ্ছে এটি চট্টগ্রামের বিখ্যাত নদীর নামে। এর ভাষা চট্টগ্রামের, লোকেশন চট্টগ্রামের, সাংস্কৃতিক উপকরণ চট্টগ্রামের। এখানে চিত্রিত হয়েছে হালদাপারের লোকজীবন ও সংস্কৃতি। আছে স্থানীয় উৎসব, বলীখেলা, কবিগান, ব্যাঙের বিয়ে, নৌকাবাইচ, মাইজভাণ্ডারী গান, গ্রামীণ যাত্রা ইত্যাদি।   

 

হালদার সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে ড. আজাদ বলেন, আমার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে। আশির দশকের প্রথম ভাগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। মদুনাঘাট-সাত্তারঘাট নৌপথে প্রচুর আসা-যাওয়া করতে হয়েছে। দুইপাড়ের গ্রামগুলোতে বেড়াতে গেছি। মা-মাছের ডিম সংগ্রহের উৎসব দেখেছি। হালদাপারে হাসির ফলগুধারা যেমন দেখেছি, তেমনি বেদনাও দেখেছি। আমাকে হালদা নিয়ে লেখার জন্য প্রেরণা জুগিয়েছেন এইচএম ইব্রাহিম।

‘হালদা’র প্রিমিয়ার শো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দেখলাম দর্শকের প্রিয় নায়ক-নায়িকার মুখে চট্টগ্রামের ভাষা উপভোগ করছেন সবাই। প্রদর্শনী শেষে আমাকে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে অনেকেই বললেন, বলা হয়ে থাকে চট্টগ্রামের ভাষা দুর্বোধ্য, কিন্তু তিশা, জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, ফজলুর রহমান বাবুর মুখে উপভোগ্য হয়েছে। একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে এটি আমার জন্য বড় পাওনা।

হালদা চলচ্চিত্রের দৃশ্য

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার দেখা হালদা ও আমার লেখা হালদার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক অনেক বিষয়। দখল, দূষণ, ড্রেজিংয়ের নামে বালু তোলা, নাব্যসংকট, জেলেপল্লির দুরবস্থা, মা-মাছের রক্তে নদীর জল লাল হওয়া, মা-মাছের আনাগোনা কমে যাওয়া, নির্বিচারে মাছশিকারসহ অনেক অনেক বিষয় অনেক মুনশিয়ানার সঙ্গে উঠে এসেছে ‘হালদা’ চলচ্চিত্রে। আমার বিশ্বাস, কার্পজাতীয় মাছের একমাত্র প্রজনন ক্ষেত্র, দেশের লাইফলাইন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীর সুপেয় পানির আধার হালদা নদী বাঁচাতে মাইলফলক হয়ে থাকবে ‘হালদা’।    

বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।