ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবি

আওয়ামীপন্থী হলুদ দলে বিরোধের পেছনে কারা?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
আওয়ামীপন্থী হলুদ দলে বিরোধের পেছনে কারা? চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলে বিরোধ প্রকাশ্যে এলো। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে একটি পক্ষ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

আগামী ৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও ফাইন্যান্স কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই জন্য গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) হলুদ দলের পক্ষে সিন্ডিকেটের জন্য অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক ক্যাটাগরীর মোট চারটি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

কিন্তু তিনটি ক্যাটাগরীতে দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মেনে নিলেও সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে শিক্ষক পদে মনোনয়ন মেনে নেয়নি ওই পক্ষটি। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে এই পদে ওই পক্ষের  লোকপ্রশাসন বিভাগের মুহাম্মদ ইয়াকুব ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের এস. এম. সাদাত আল সাজীব স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।

এই পদে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রিদোয়ান মোস্তফা।

বিপক্ষে দাঁড়ানো পক্ষটির অভিযোগ, যারা দলের দুর্দিনে পাশে থেকেছে তাদের বাদ দিয়ে বাকিদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তারা নির্বাচিত হলে দলের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হবে।

তবে হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘ওই পদে (সহকারী অধ্যাপক) যাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি দলের আট বছর ধরে সদস্য। এই পদে দল থেকে প্রার্থী দিতে দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে ৪১টি নাম প্রস্তাব করা হয়। তার মধ্যে সবার সমর্থন পান মুহাম্মদ রিদোয়ান মোস্তফা। তাই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ’

‘আর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আগে আসেনি কেন? এটিতো কাউকে নির্বাচনের আগে দুর্বল ও সুনাম ক্ষণ্ন করার অপচেষ্টা। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে (যারা বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন) তো নানা অভিযোগ আমাদের কানে আসে। ’ –যোগ করেন অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ।

এদিকে দলের নির্দেশ ও আনুগত্যের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেওয়ায় দলের ভেতরেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা মনে করছেন এর ফলে দলের সুনাম ক্ষণ্ন হচ্ছে। এতে করে বিরোধী শক্তিরা সুযোগ পাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের প্রশাসনে দায়িত্বে থাকা কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বর্তমান প্রশাসনকে চাপে রাখতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া ওই দুজনকে ইন্ধন দিচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের অনেকেই বলেন, বিদ্রোহী প্র্রার্থী হওয়া মুহাম্মদ ইয়াকুবের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা ছিল না। যোগ্যতার সব শর্ত পূরণ না করেও ২০১২ সালে  তৎকালীন প্রশাসনের বদান্যতায় দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করা মুহাম্মদ ইয়াকুব শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।

তবে মুহাম্মদ ইয়াকুব দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া মুহাম্মদ রিদোয়ান মোস্তফার বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছি কারণ আমরা প্রগতিশীলতা ধারণ করি। সহকারী অধ্যাপক পদে যাকে (মুহাম্মদ রিদোয়ান মোস্তফা) দল মনোনয়ন দিয়েছে তিনি ২০০১ সালের দিকে এএফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সহ সভাপতি ও পরবর্তিতে তাকে প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির রাজনীতি করতে দেখেছি। আমি চাই না বিএনপির কেউ দায়িত্বে আসুক তাই আমার এই সিদ্ধান্ত। ’

তবে ছাত্রদল ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রিদোয়ান মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। এই ধরনের কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। আমি ২০০১ সালের দিকে হলেও ছিলাম না। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে তাই আমি আমি প্রার্থী হয়েছি। ’

একই কথা বলেছেন হলুদ দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও।

ইয়াকুব শুধু মুহাম্মদ রিদোয়ান মোস্তফার বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও অন্য বিদ্রোহী প্রার্থী এম এম সাদাত আল সাজীবের অভিযোগ আবার দলের পুরো মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘যারা দলের মিছিল-মিটিংয়ে সামনে থেকেছে, দুর্দিনে পাশে থেকেছে তাদের মনোনয়ন না দিয়ে অন্যদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আর যারা পদ পাচ্ছে তারা সবসময় পাচ্ছে, যারা পাচ্ছেন না তারা একদমই পাচ্ছেন না। তাই বৃহত্তর শিক্ষকদের মর্যাদার স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। ’

যদিওবা যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা দলের অধিকাংশ সদস্যর সমর্থনে মনোনয়নের জন্য মনোনীতি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হলুদ দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা।

এদিকে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবে বলে মনে করছেন দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের দুজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি মঙ্গলবার বিষয়টির সমাধান হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭

জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।