ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চুরি করে নিখোঁজ কর্মচারী, হয়রানিতে ‘পথে বসল’ মালিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
চুরি করে নিখোঁজ কর্মচারী, হয়রানিতে ‘পথে বসল’ মালিক লোগো

চট্টগ্রাম: নগরীর বন্দর এলাকার একটি স্ক্র্যাপের দোকান থেকে তিন মাস আগে ২২ হাজার টাকা ও মোবাইল চুরি করে পালিয়ে যায় ১৪ বছর বয়সী এক শিশু কর্মচারি।  হঠাৎ শিশুটির নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়ে যান দোকান মালিক আলী মুছা ও ওমর ফারুক।  হয়রানিতে যুক্ত হয় পুলিশও।  আলী মুছাকে আটক করা হয়।  ওমর ফারুক পালিয়ে যান।  বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। 

শিশুটির হঠাৎ নিখোঁজ রহস্য নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।   শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) গাজীপুরে সুরুচি নামে একটি হোটেল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

  এর ফলে তিন মাসের হয়রানি থেকে মুক্তি মিলেছে দুই ব্যবসায়ীর।   শিশুটিও ফিরেছে পরিবারের কাছে।

জানতে চাইলে‌ উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ৪ আগস্ট শিশুটি দোকান থেকে চলে গিয়েছিল।   বন্দর থানার একটি জিডিমূলে আমরা তদন্ত শুরু করি।   ফেসবুকে শিশুটির আপলোড করা সাম্প্রতিক একটি ছবিতে তার পেছনে একটি দোকানের সাইনবোর্ড দেখি।   এতে আমরা শিশুটির অবস্থান নিশ্চিত হই এবং তাকে উদ্ধার করি।

‘উদ্ধারের পর শিশুটি জানিয়েছে, সে নিজেই দোকান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।   যাবার সময় ২২ হাজার টাকা ও আলী মুছার মোবাইল চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল।   তাকে কেউ অপহরণ করেনি। ’ বলেন পিবিআই পরিদর্শক

উদ্ধার অভিযানে থাকা পিবিআই’র সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) তারেক হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, শিশুটি দোকান থেকে পালিয়ে অলঙ্কার মোড় থেকে বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।   যাবার সময় সীতাকুণ্ডে মোবাইলটি ফেলে চলে যায়।   পিবিআই টিম মোবাইলটিও উদ্ধার করেছে।   শিশুটিকে উদ্ধারের সময় তার কাছে ১৫ হাজার টাকাও পাওয়া গেছে।   ‍বাকি সাত হাজার টাকা সে খরচ করেছে বলে জানিয়েছে।

একই অভিযানে থাকা পিবিআই’র সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো.ফয়সাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, শিশুটির ঢাকার সায়দাবাদে নামার কথা ছিল।   কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ায় বাস তাকে নিয়ে পিরোজপুরে চলে যায়।   পরে শিশুটি গাজীপুরে এসে তার বোনের বাসায় যাবার চেষ্টা করে।   কিন্তু বাসা খুঁজে না পেয়ে একজন শরবত বিক্রেতার সহযোগিতায় একটি হোটেলে বয়ের চাকরি নেয়।   পরে সেটা পাল্টে আরেকটি হোটেলে চাকরি নেয়।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে ওই শিশু চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আল ইমরানের আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছে, তাকে কেউ অপহরণ করেনি।

সূত্রমতে, শিশুটি নিখোঁজের ঘটনায় দোকান মালিক আলী মুছা বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।   বন্দর থানা শিশুটির সন্ধান পাননি।   এর মধ্যে শিশুর বাবা কামাল উদ্দিন ডবলমুরিং থানায় আরেকটি জিডি করেন।   সেই জিডি তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই হেলাল উদ্দিন।   তদন্তে নেমে তিনি আলী মুছাকে আটক করে নিয়ে যান।   এক রাত থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন।  

এদিকে কামাল উদ্দিন লক্ষ্মীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।   এতে আলী মুছা, তার পার্টনার ওমর ফারুক এবং ফারুকের বাবা মো.চৌধুরী মিস্ত্রিকে আসামি করা হয়।   মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান লক্ষ্মীপুরের চরমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী।

সূত্রমতে, ডবলমুরিং থানার এসআই হেলালের অব্যাহত হয়রানিতে আলী মুছা দোকান বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন।   লক্ষ্মীপুরের ট্রাইব্যুনালে মামলা হওয়ার পর ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান ওমর ফারুকও।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এসআই হেলালের শ্বশুরবাড়ি, নিখোঁজ শিশু এবং ওমর ফারুকের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে একই এলাকায়।   হেলালের শ্বশুরপক্ষের সঙ্গে ওমর ফারুকের বিরোধ আছে। সেই বিরোধের জেরেই হয়রানির জন্য তাদের প্ররোচনায় কামাল উদ্দিনকে দিয়ে অপহরণের মামলা করা হয়।  একইভাবে হেলালের প্ররোচণায় ডবলমুরিং থানায় জিডিও নেওয়া হয়।

তবে হয়রানির কথা অস্বীকার করে এসআই হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমি কোন হয়রানি করিনি।   জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আলী মুছাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিলাম।   পরে যখন জানতে পেরেছি একই ঘটনায় বন্দর থানায় জিডি আছে, তখন আমি তাকে ছেড়ে দিয়ে জিডি ক্লোজ করে দিয়েছি।

শ্বশুরপক্ষের প্ররোচনায় আলী মুছা ও ওমর ফারুককে হয়রানির বিষয়ে ‍জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো না।   আমি কোনদিন শ্বশুরবাড়িতে যাইনি।  

ব্যবসায়ী আলী মুছা বাংলানিউজকে বলেন, শিশুটি নিজেই চুরি করে পালিয়েছে।   এরপর পুলিশ আর তার বাবা মিলে আমাকে অনেক হয়রানি করেছে।   এসআই হেলাল আমাকে ধরে নিয়ে মামলার আসামি করবে বলে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে।   পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।   তিন মাস ধরে আমি দোকান খুলতে পারিনি।   পরিবার নিয়ে পথে বসে গেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।