চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের একমাত্র কোবাল্ট মেশিনটি ‘আউট অব অর্ডার’ হয়েছিল ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর মেরামতের কয়েক দফা উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন মেশিন আনতে লেখালেখি শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কেমো থেরাপির জন্য সপ্তাহখানেক ধরে রেডিওথেরাপি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন রাউজানের নোয়াপাড়ার মগদাই এলাকার সাজু আকতার (৪০)।
অবশ্য জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্তদের জন্য সরকার ‘ব্র্যাকি থেরাপি মেশিন’ বরাদ্দ দিয়েছেন দেড় বছর হলো। বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে মেশিনটি। মেশিনটির সোর্স (রশ্মি) এসেছে গত মার্চে। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সেটিও সংযোজন বা চালু করা যাচ্ছে না। সরেজমিন দেখা গেছে, অচল কোবাল্ট মেশিনের কক্ষেই পলিথিন মোড়ানো মেশিন ও সোর্স পড়ে আছে।
চমেক রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মো. মোখলেস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ক্যানসার চিকিৎসার তিনটি প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে অপারেশন, রেডিওথেরাপি ও কেমো। তিন ভাগের দুই ভাগ রোগীকে রেডিওথেরাপি দিতে হয়। বৃহত্তর চট্টগ্রামের তিন-চার কোটি মানুষের জন্য একটি মাত্র রেডিওথেরাপি মেশিন ছিল চমেকে। সেটি নষ্ট থাকায় এখানকার রোগীদের ঢাকায় গিয়ে রেডিওথেরাপি দিতে হচ্ছে। যা অনেক রোগীর আর্থিক সক্ষমতার বাইরে।
গবেষণার বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি ৩২ দিনের শিশুর ক্যানসার হতে দেখেছি। ৫২ দিনের শিশুর ক্যানসার দেখেছি। ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ২ হাজার নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হয়। এ হিসেবে ১ লাখ নতুন ক্যানসার রোগী আছে। নতুনের পাঁচ গুণ থাকে পুরোনো ক্যানসার রোগী। সে হিসেবে পাঁচ-ছয় লাখ ক্যানসার রোগী আছে বৃহত্তর এ জনপদে।
তিনি মনে করেন, চট্টগ্রামে ধূমপান, নুনা ইলিশ, বিষাক্ত শুঁটকি, বিষ স্প্রে করা শাকসবজি, ফরমালিন যুক্ত ফলমূল ও মাছ, এলকোহল, বাল্যবিয়ে, ভাজা-পোড়া খাবার, চর্বিযুক্ত গরুর মাংস খাবার প্রবণতা বেশি হওয়ায় ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আশার কথা হচ্ছে, ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে পারলে, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার রোগ শনাক্ত করা গেলে আক্রান্তের হার কমে আসবে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক বি. জেনারেল মো. জালাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাংলানিউজকে বলেন, পুরোনো রেডিওথেরাপি মেশিনটি মেরামতযোগ্য না হওয়ায় কনডেম ডিকলারের প্রক্রিয়া চলছে। সরকার চমেক হাসপাতালের জন্য ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা দামের নতুন একটি কোবাল্ট মেশিন কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আশাকরি ডিসেম্বর নাগাদ মেশিনটি চমেকে চলে আসবে। তখন আমরা পুরোনো মেশিনের জায়গায় নতুন মেশিনটি বসাতে পারব।
ব্র্যাকি থেরাপি মেশিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেশিনটি সরবরাহকারী ঠিকাদার চুক্তিমূল্যের ৭০ শতাংশ টাকা তুলে নিয়েছে। বাকি টাকা মেশিন সংযোজন ও সচল করার পর পাবে। এ মেশিনটি বসানোর জন্য ঘরের ডিজাইন অ্যাপ্রুভ করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেশিনটির ফাংশান শুরু করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৭
এআর/টিসি