কোরবানির পর গরু-ছাগলের চামড়া কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে স্থানীয়ভাবে মৌসুমি সংগ্রহকারীদের কেনার রেওয়াজ বন্দরনগরীতে দীর্ঘদিনের। মৌসুমী সংগ্রহকারী মানে হচ্ছেন এলাকার প্রভাবশালী তরুণ-যুবকসহ বিভিন্ন বয়সী লোকজন।
মৌসুমী সংগ্রহকারীরা কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে নগরীর বিভিন্ন স্পটে জমা করেন। তারপর সেই চামড়া পাইকারি ক্রেতার হাত ঘুরে যায় নগরীর আতুরার ডিপোতে আড়তদারের কাছে।
নগরীর চৌমুহনী ও কর্ণফুলী মার্কেট এলাকায় প্রতিবছর খুচরা চামড়া সংগ্রহকারী ও পাইকারি ক্রেতাদের কেনাবেচার বড় আসর বসে। এইবছরও কোরবানির পর দুপুর ১২টার পর থেকে চৌমুহনীতে চামড়া আসতে শুরু করেছে।
পাইকারি ক্রেতারা জানিয়েছেন, রাতভর তারা মৌসুমী সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে চামড়া কিনবেন। রাতের মধ্যেই কেনা চামড়া যতটুকু সম্ভব পাঠিয়ে দেবেন আড়তদারের কাছে।
তবে বরাবরের মতো এবারও মৌসুমি সংগ্রহকারীরা নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন কি না সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমি সংগ্রহকারীদের হাঁকানো দামের সঙ্গে পাইকারি ক্রেতাদের দামের তফাৎ আছে। পাইকারি ক্রেতারা বলছেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই দাম মাথায় রেখেই তাদের চামড়া কিনতে হবে।
ঢাকার বাইরে এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা। আড়তদার ও পাইকারি ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশি বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ২২ বর্গফুট এবং ছোট গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ১৫-১৬ বর্গফুট পর্যন্ত হয়।
শনিবার (০২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চৌমুহনী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী লোকজন রাস্তায় বড় গরু, মাঝারি ও ছোট গরু এবং ছাগলের চামড়া সাজিয়ে বিক্রি করতে বসেছেন। আড়তদারদের কেউ কেউ এসে তাদের সঙ্গে দরদাম করছেন। কেউ কেউ চামড়া কিনে ভ্যানভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন আতুরার ডিপোতে।
হালিশহর শান্তিবাগ থেকে ৬০ পিস চামড়া সংগ্রহ করে চৌমুহনী এলাকায় বিক্রি করতে এসেছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি ৮০০ টাকা করে প্রতি পিস চামড়া কিনেছি। এরা আমাকে দাম দিতে চাচ্ছে ৫০০ টাকা।
মোটর সাইকেলে করে আগ্রাবাদের বেপারিপাড়া থেকে চামড়ার দর জানতে আসেন মনজুর ও রহিম নামে দুই যুবক। ৫০ পিস চামড়া আছে জানিয়ে পাইকারি ক্রেতার কাছে দর জানতে চান। তাকে ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে দাম বলা হয়।
মনজুর বাংলানিউজকে বলেন, আমি এক পিস কিনেছি ১০০০ টাকায়। এর চেয়ে কম দামে কিভাবে বিক্রি করবো ?
গরুর ৭টি চামড়া নিয়ে আগ্রাবাদ হাজীপাড়া থেকে আসা এরশাদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি চামড়া ৭০০ টাকা করে নিয়েছি। অনেক দরদাম করে ৬৭০ টাকা করে বিক্রি করেছি। ৩০ টাকা করে লস।
গত তিন বছর ধরে চামড়া সংগ্রহ করে আসা ফরিদ এবারও এসেছেন ১৫টি বড় গরুর চামড়া নিয়ে। তবে তিনি বিক্রির জন্য তেমন তোড়জোড় করছেন না।
ফরিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি যেসব চামড়া এনেছি সবগুলো লাখ টাকার বেশি দামের গরুর। এখন বিক্রি করতে গেলে আমাকে ৪০০-৫০০ টাকার বেশি দাম দেবে না। একটু অপেক্ষা করে বাজার যাচাই করি।
চৌমুহনীর পাইকারি ক্রেতা মো.বালা সওদাগর বাংলানিউজকে বলেন, বড় চামড়া ৫০০-৬০০ এবং ছোট গরুর চামড়া ৩০০-৪০০ টাকা। এর চেয়ে বেশি দামে কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এর চেয়ে বেশি দাম দিলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। আড়তদার তো আমাকে এত টাকা দেবে না। আমি কেন লস দেব ?
সংগ্রহকারীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় গরুর চামড়া ৭০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে। ছোট গরুর চামড়া ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় কেনা হয়েছে। ছাগলের চামড়া ১০০-২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন কোরবানিদাতারা।
আড়তদাররা দুইদিন ধরে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবেন। এরপর লবণ দিয়ে রোদে শুকিয়ে সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাত শুরু হবে। তারপর ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৭
আরডিজি/টিসি