ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ

চট্টগ্রাম: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রোধ করা যাচ্ছে না। রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আশ্রয় পাচ্ছে শরণার্থী শিবিরসহ আশপাশের লোকালয়ে। ইতিমধ্যে ৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

মিয়ানমারের নাগরিক এসব রোহিঙ্গাকে দেশে প্রবেশে সুযোগের পাশাপাশি গোপনে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে অনেকে।
 
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে ৮৬ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।

শনিবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে রোববার (২৭ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

কক্সবাজার বিজিবি-৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনজুরুল আহসান জানান, শনিবার সন্ধ্যায় উখিয়া থানার পুলিশ কুতুপালং এলাকা থেকে ৭১ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে আটক করে।

পরে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। শনিবার রাতেই মানবিক সহায়তা দিয়ে এসব রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

এছাড়া টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান, শাহপরীর দ্বীপ ও দমদমিয়া পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের ১৫ নাগরিককে নাফ নদী দিয়ে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
 
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার কারণে রোববারও দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা। অবস্থান নিয়েছে সীমান্ত এলাকায়। তবে শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলের আগুন ও গোলাগুলির পর আর কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। রোববার মিয়ানমার ঢেকিবুনিয়া তুমব্রু থেকে এসে এপারের ঘুমধুম এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে ২ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নরনারী শিশু। উখিয়ার বালুখালি সীমান্ত  হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। এ তথ্য জানান মিয়ানমার থেকে আসা মফিজুর রহমান।
 
কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নুর জাহান (৫০), রহিমা খাতুন (৬২), বেগম বাহারসহ (৫৫) ২৫ জনের একটি দল রোববার সকালে মিয়ানমার ঢেকুবিনয়ার কুটবনিয়া থেকে পায়ে হেঁটে এদেশে ঢুকে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।

তারা জানান, গত ক’দিন ধরে ওখানকার সামরিক জান্তারা ব্যাপক নির্যাতন চালাচ্ছে। ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে এলাকাগুলো।
 
মিয়ানমারের ঢেকুবিনিয়া মিয়া পাড়া থেকে পালিয়ে আসা বাদশা মিয়া (৪৫) তার স্ত্রী তৈয়বা বেগম জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওই গ্রামের ৪০টি পরিবার ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় রোববার ভোরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বিজিবি সদস্যরা আটকে দিয়েছে। জীবনে কি হবে তারাও জানেনা।

ঢেকুবনিয়া ফকিরা পাড়া গ্রামের শত বছর বয়সী বদিউর রহমান ও ৭৫ বছর বয়সের তার স্ত্রী মোস্তাফা খাতুন বলেন, গত শনিবার যোহরের নামাজের অযু করতে গেলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তার পাশের ঘরে তাণ্ডব চালিয়ে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। ঘরটি জ্বালিয়ে দেয় বলে জানান। অতি কষ্ট করে কোনো রকম প্রাণের ভয়ে জলপাইতলী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছি।

বিজিবির ঘুমধুম সীমান্তচৌকির অধিনায়ক নায়েব সুবেদার রফিকুল ইসলাম বলেন, হাজারো রোহিঙ্গা সীমান্তে জড়ো হয়ে রয়েছে।

বিজিবি কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল মো. আনোয়ারুল আজিম বলেন, ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে কিছু সমস্যা হওয়ায় কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্তে জড়ো হয়েছে। কিন্তু কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সীমান্তে আরও জনবল বাড়ানো হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
 
মায়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে গত সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংর্ঘষে প্রায় ১০০জন নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার ভোরের আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা মুসলিমদের একটি দল আক্রমণ করে রাখাইন অঞ্চলের একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে। দ্য আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (এআরএসএ) শুক্রবারের হামলার দায় স্বীকার করে আরো হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিল।

এদিকে রোববার বিকেল ৪টায় ঘুমধুম বিজিবি ক্যাম্প ও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করে বিজিবি সদস্যদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বীরের জাতি, স্বাধীন দেশের ভূখণ্ডে একটি গুলি পড়লে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। আমরা পরিপূর্ণ ভাবে যেকোন সমস্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছি। অতিরিক্ত ১৫ হাজার বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের রিজিওনাল কমান্ডার কর্নেল আলিফ, কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার আনোয়ারুল আজিম, বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম সরওয়ার কামাল, ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ।  

বাংলাদেশ সময়: ০১১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।