চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নিজস্ব জায়গার ওপর দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। এতে প্রায় এক কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ।
ডিএসকের প্রকৌশলী মো. মজিদুল আহাদ বাংলানিউজকে জানান, ৮৬৪০ বর্গফুট (১০ গণ্ডা) জায়গার ওপর মানববর্জ্য থেকে সার তৈরির প্ল্যান্টটি বসানো হয়েছে। এখানে ২ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার ১২টি ‘ড্রাই বেড’ রয়েছে।
তিনি জানান, ১২টি বেডের মধ্যে ২টি রিজার্ভ রাখা হবে। বাকি ১০টিতে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাই স্লাজ তৈরি করা হবে। একটি ড্রাই বেড থেকে ড্রাই স্লাজ তৈরিতে সময় লাগবে ১৪ দিন। এ হিসেবে মাসে দুবার ব্যবহার করা যাবে। প্লান্টের জন্য বার্ষিক ৪ লাখ ৪৮ হাজার লিটারের বেশি মানববর্জ্য লাগবে। এ প্লান্টের ড্রাই স্লাজ চসিকের কম্পোস্ট সার তৈরির কারখানায় গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে পরিমাণ মতো মিশিয়ে জৈবসার (কম্পোস্ট) তৈরি করা হবে। ড্রাই স্লাজ থেকে পাওয়া যাবে কার্বন, গৃহস্থালি বর্জ্য থেকে নাইট্রোজেন। দুটির আনুপাতিক মাত্রা ঠিক করেই উন্নতমানের সার তৈরি করা হবে।
ড্রাই স্লাজ তৈরি প্রক্রিয়ায় বর্জ্য থেকে বের হওয়া পানি পরিশোধন ছাড়াই ছাড়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি ড্রাই বেডের নিচে লিকুইড বা তরল বের হওয়ার জন্য পাইপ লাইন থাকবে। ওই পানি চারটি কনস্ট্রাকটেড ওয়েস্ট ল্যান্ডে চলে যাবে। সেখানে ফিল্টার করার জন্য পাথরসহ বিভিন্ন উপকরণ রাখা হয়েছে। এরপর ওই পানি তিনটি পলিশিং পন্ডে পড়বে।
তিনি জানান, প্ল্যান্টে উৎপাদিত ড্রাই স্লাজ জমা রাখার জন্য প্ল্যান্টে একটি স্টোরেজ শেড তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে একটি অফিস রুমও।
ডিএসকের অ্যাডভোকেসি অফিসার আরেফাতুল জান্নাত বাংলানিউজকে বলেন, মানববর্জ্য থেকে সার তৈরির জন্য আমাদের এটি পাইলটিং প্রকল্প। আমরা পুরোদমে প্ল্যান্টটি চালিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই চসিককে হস্তান্তর করবো। এ কারখানটি মানববর্জ্য যত্রতত্র ফেলে খাল, নদী, সাগর দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষা করবে। একই সঙ্গে বিষাক্ত কেমিক্যাল ছাড়াই সার তৈরির ফলে চাষাবাদেও সুফল মিলবে।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী যিশু বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে বিলগেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনজিও সংস্থা ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ফর দ্যা আরবার পুওরের (ওসাপ) দেওয়া উন্নতমানের একটি ভ্যাকুটাগ রয়েছে চসিকের কাছে। সেটি দিয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও অফিসের সেফটি ট্যাংক থেকে মানববর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংস্থাটি আরেকটি ভ্যাকুটাগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে চসিকের তৈরি জৈবসার প্রতিকেজি ১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে। মানসম্পন্ন হওয়ায় এ সারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি চসিক ও ডিএসকের মধ্যে মানববর্জ্য থেকে সার তৈরির প্ল্যান্ট স্থাপনের ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক সই হয়। চসিকের পক্ষে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান ছিদ্দিকী এবং ডিএসকের পক্ষে সিনিয়র প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. আবদুল হাকিম স্বাক্ষর করেন।
আজ সোমবার চসিকের কেবি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম। সমঝোতা স্মারকে সাক্ষী হন চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ড. মো. লিয়াকত আলী।
৮০ লাখ টাকার ২টি ভ্যাকুটাগ গাড়ি পাচ্ছে চসিক
সেই ভ্যাকুটাগের চাবি নিলেন মেয়র নাছির
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
এআর/টিসি