ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিলেট মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোনপ্রকার কার্যক্রম নেই। সুতরাং এই দুটি কলেজে সংঘটিত যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার দায়ভার ছাত্রলীগ নিবে না।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম কলেজের অবস্থা এমন হয়েছে, দুই বন্ধু ঝগড়া করছে আর দোষ পড়ছে ছাত্রলীগের। শিবির মারামারি করলে, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা মারামারি করলেও সাংবাদিকরা লিখছেন ছাত্রলীগ করছে।
২৫ বছর ধরে জামায়াত ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্যের পর ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে সামনাসামনি থাকা সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজও ছাত্রশিবিরের হাত থেকে উদ্ধার করে ছাত্রলীগ। কলেজ দুটি দখলে নেয়ার জন্য শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে উগ্রবাদে অভিযুক্ত এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের সেদিন ক্যাম্পাসছাড়া করতে সক্ষম হয়েছিল ছাত্রলীগ।
এরপর গত দেড় বছরে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে ছাত্রলীগ দফায় দফায় সংঘাতে জড়িয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। দুটি কলেজকে কেন্দ্র করে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি এবং মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের পৃথক তিনটি সক্রিয় গ্রুপের মধ্যে এই সংঘাত বলে পত্রপত্রিকায় এসেছে।
এই অবস্থায় শুক্রবার (০৪ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আকস্মিকভাবে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে যাতে কলেজের নিয়ন্ত্রণ রাখার কথাও অস্বীকার করা হয়েছে।
এদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি কমিটি না থাকার কথা বললেও গত ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ব্যানারে পতেঙ্গায় বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণের কর্মসূচি পালন করে। সেই কর্মসূচির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাহমুদুল করিম নামে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চট্টগ্রাম কলেজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা মাহমুদুল করিম সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।
তবে চট্টগ্রাম কলেজে নগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণি, তিনিও মহিউদ্দিনের অনুসারী।
‘আমরা পাঁচজনের একটি সার্চ কমিটি করেছি। কমিটি বিচার-বিশ্লেষণ করে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটির জন্য নাম সুপারিশ করবে। এরপর কমিটি হবে। ’ বলেন রণি
জানতে চাইলে নূরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু মোহাম্মদ আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, পত্রিকায় চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি উল্লেখ করে সংবাদ ছাপা হওয়ার পরই কেন্দ্র থেকে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। কমিটির ব্যানারে কর্মসূচি পালন করায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।
নিজেকে আহ্বায়ক দাবি করার বিষয়ে মাহমুদুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, কমিটি হয়েছে। তবে কৌশলগত কারণে পত্রিকায় এখনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। মহিউদ্দিন ভাই নেত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটি করেছেন।
সূত্রমতে, মাহমুদুল করিমকে সভাপতি করে চট্টগ্রাম কলেজের কমিটি প্রায় চূড়ান্ত করেছিল নগর ছাত্রলীগ। কিন্তু এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির একজন সাবেক সহ-সম্পাদক এতে হস্তক্ষেপ করেন। এতে নগর ছাত্রলীগের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। তারাই কেন্দ্র থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন বলে মনে করেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা।
এই অবস্থায় চট্টগ্রাম কলেজে কার্যক্রম অস্বীকারের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণি বাংলানিউজকে বলেন, এক কথায় তো আর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ছাত্রলীগকে মাইনাস করা যাবে না। এই ক্যাম্পাসে আমাদের পূর্বসুরীদের রক্ত আছে। দীর্ঘদিন পর আমরা শিবিরের কাছ থেকে এই ক্যাম্পাসকে মুক্ত করেছি। এই কলেজে ছাত্রলীগের পতাকা উড়বেই।
আশির দশকের শুরু পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজ প্রগতিশীল শক্তির ঘাঁটি ছিল। ১৯৮১ সালে ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্র সংসদের এজিএস ও ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে শিবির ক্যাডাররা নির্মমভাবে হত্যা করে। প্রশাসনের মদদে শিবিরের অস্ত্রবাজি আর খুনের রাজনীতিতে ছাত্রলীগ, বাকশালপন্থী জাতীয় ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়ন তখন টিকতে পারছিল না। ১৯৮৪ সালের রাতের আঁধারে হোস্টেলে দু’জন মেধাবী ছাত্রকে জবাই করে খুন করে শিবির।
এরপর ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয় প্রগতিশীল শক্তি। নিয়ন্ত্রণ নেয় শিবির। শুধু চট্টগ্রাম কলেজ নয়, পাশের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজও শিবিরের দখলে চলে যায়। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগ কিংবা অন্যান্য নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলো কখনোই আর চট্টগ্রাম কলেজের ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
আরডিজি/টিসি