ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পানিমন্ত্রীর এলাকাতেই পানিবন্দি মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
পানিমন্ত্রীর এলাকাতেই পানিবন্দি মানুষ পানিসম্পদ মন্ত্রীর এলাকাতে বন্যার চিত্র।

চট্টগ্রাম: কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাটহাজারী উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ। পানির নিচে তলিয়ে গেছে সড়ক। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। বতসবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করতে না পেরে ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে অনেক পরিবার। এমনকি পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এর নিজ ইউনিয়ন গুমানমর্দনও বাদ ‍যায়নি বন্যার কবল থেকে।

স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হালদার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেওয়া, বেড়ি বাঁধ সংস্কার না করা এবং বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে প্রয়োজনীয় কাজ না করায় ভাঙনের সংখ্যা ও মাত্রা আরো বেড়েছে। এতে হাটহাজারী উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

এতে বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে এবং অধিকাংশ সড়ক তলিয়ে যায়।

এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রীর এলাকায় হালদার ভাঙন রোধ করতে না পারায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এলাকার মানুষ।

তাদের প্রশ্ন, যেখানে মন্ত্রীর এলাকাতেই হালদার ভাঙন বন্ধ করা যায়নি সেখানে দেশের মানুষ আর কি আশা করতে পারে? এছাড়া মন্ত্রীর নিজ ইউনিয়ন গুমানমর্দন প্লাবিত হলেও মন্ত্রী সেখানে যাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোজার ঈদের পরে বাড়ি থেকে যাওয়ার পর এলাকায় আসেননি মন্ত্রী। এদিকে বুধবার সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দেশের কোথাও বন্যা হয়নি বলে দাবি করেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

তিনি বলেন, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পানি একসঙ্গে বাড়লেই দেশে বন্যা দেখা দেয়। এখন শুধু যমুনার চর ডুবেছে। বাড়ি-ঘরেও পানি উঠেছে হাটহাজারীতে।

তার এমন বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এমন বক্তব্য হাস্যকর বলেও মন্তব্য করেছেন হাটহাজারী এলাকার বাসিন্দারা। এই আসন থেকেই সর্বশেষ দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার আনিস। প্রথম দফায় মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।

গত কয়েকদিন ধরে হাটহাজারী উপজেলাতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ করছেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলী। বুধবার (২৬ জুলাই) তিনি পৌরসভার বন্যা কবলিত মোহাম্মদপুর এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে। পৌরসভার ৫, ৬, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার শিকারপুর, বুড়িশ্চর ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন।

বাংলানিউজকে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা জানান, উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানা নেই।
হাটহাজারীতে বন্যায় ভাঙ্গন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১০ থেকে ১১টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকা তিনদিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর আলম মঞ্জু বাংলানিউজকে বলেন, হালদার ভাঙনে আশপাশের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মন্ত্রীর নিজ ইউনিয়ন গুমানমর্দন এবং পাশের দুই ইউনিয়ন লাঙ্গলমোড়া ও ছিপাতলী ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অথচ মন্ত্রী দেখতেও আসেননি।

হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, বসতবাড়িতে পানি থাকায় ঘরে রান্না বন্ধ রয়েছে অনেক পরিবারে। এসব পরিবারের জন্য দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে দুই কেন্দ্রে ২৩ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
হাটহাজারীতে বন্যায় ভাঙ্গন।
চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত তহবিল ও এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের সহায়তায় এসব পরিবারে খাদ্যসহ অন্যান্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিকারপুর ইউনিয়নের ৯৫ শতাংশ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সড়কের উপরে এক থেকে দেড়ফুট পানি। ৮০ শতাংশ বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ৫০ শতাংশ ঘরে পানির কারণে চুলায় রান্না হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
এমইউ/টিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।