ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঘুম নেই দোকানির চোখে

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
ঘুম নেই দোকানির চোখে ঘুম নেই দোকানির চোখে (ছবি: উজ্জল ধর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

চট্টগ্রাম: ‘প্রতিদিন রাত ৩টা পর্যন্ত কাস্টমার থাকে।  সেহেরির আগে আগে করে আস্তে আস্তে কাস্টমার কমে আসে।  আমরা সেহেরি খেয়ে দোকান বন্ধ করে বাসায় যেতে যেতে ভোর হয়ে যায়।  তারপর দুই-তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবারও দোকানে চলে আসি। ’

কথাগুলো বলেছেন নিউমার্কেটের ব্লু  মুন পাঞ্জাবির দোকানের কর্মচারি একরামুল হক তানিম।   ঈদুল ফিতরের আগ মুহুর্তের জমজমাট বিক্রি সামলাতে গিয়ে ঘুম হারিয়ে গেছে নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের দোকানদার আর কর্মচারিদের।

 

একেকটি নির্ঘুম রাত পার করছেন দোকানিরা।   নির্ঘুম রাত পার করছেন কেনাকাটার মাধ্যমে ঈদ উৎসবে মেতে উঠা সাধারণ মানুষও।

 

ঈদ মানেই উৎসব।  তাই সারা বছরের কেনাকাটা আর ঈদের কেনাকাটায় থাকে পার্থক্য। এ সময়ের কেনাকাটায় থাকে উৎসবমুখরতাও।  ঈদে যত না আনন্দ তার চেয়ে বেশি আনন্দ পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করায়।  

মধ্যরাতে বন্দরনগরীর বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনায় দম ফেলার সময় নেই দোকানিদের। রাত যত গভীর হচ্ছে ক্রেতাদের আনাগোনা তত বাড়ছে। মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলো বেচাকেনায় রাতদিন একাকার। মধ্যরাতেও শপিং করছেন অনেকে।  অনেক রাত পর্যন্ত চলছে বিকিকিনি।  

নগরীর কোতয়ালির মোড়ে খাদি মহলের বিক্রয় কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বাংলানিউজকে বলেন, রোজার শুরু থেকেই রাত ১১টা-১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতাম।  মধ্যরোজার পর থেকে সারারাত দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে।   চাঁদরাত পর্যন্ত এভাবেই চলবে।   ঈদের আগের দিন তো সকাল পর্যন্ত বিক্রি চলবে।

তামাকমুণ্ডি লেইনের প্রেসিডেন্ট পাঞ্জাবির দোকানের কর্মচারি মো.হারুন জানালেন, ঈদ উপলক্ষে তাদের দোকানে ২০ জন সেলসম্যান অতিরিক্ত নিয়োগ দেয়া হয়েছে।   প্রত্যেকে আট ঘন্টা করে ডিউটি করছেন।   রাতের বেলা যারা ডিউটি করেন তারা পরের দিন ঘুমিয়ে ইফতারির আগে দোকানে আসেন।

পোশাক বিক্রয় প্রতিষ্ঠান নিউমার্কেটের গ্লোরিয়া শপের সেলসম্যান মঈনুল ইসলাম রকি বাংলানিউজকে বলেন, ইফতার-সেহেরি দুটোই দোকানে করতে হচ্ছে।   প্রতিদিন প্রায় এক হাজার গ্রাহক সামলাতে হচ্ছে।   দম ফেলার সময় পাওয়া যাচ্ছে না।  

স্বল্প আয়ের মানুষের ভিড়ে দম ফেলার ফুরসত নেই ফুটপাতের দোকানদারদেরও।  

মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের সামনে ফুটপাতের দোকানি আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, দিনের বেলা পুলিশ ফুটপাতে, রাস্তার দোকানগুলো তুলে দিতে চায়।   সন্ধ্যার পর পুলিশ বেশি ডিস্টার্ব করে না।   এজন্য সন্ধ্যার পর থেকে সেহেরি পর্যন্ত জমজমাট বিক্রি চলছে।  

গভীর পর্যন্ত দোকানে চলছে বেচাকেনা।  ছবি: উজ্জ্বল ধর/ বাংলানিউজ

‘সেহেরি খেয়ে বাসায় গিয়ে ঘুমায়।   ১১টার দিকে এসে আবার দোকান খুলি।   দুপুরের দিকে কিছু কাস্টমার আসে।   বিকেলে আবার কমে যায়।   সন্ধ্যার পর সবাই আসেন, কেনাকাটা করেন। ’ বলেন আলমগীর

হকার মার্কেটের দোকানি মো.রকি বাংলানিউজকে বলেন, তাদের দোকানে চারজন সেলসম্যান আছেন।   দুজন দোকানে থাকলে বাকি দুজন বিশ্রাম নেয়।   এভাবে বিক্রি চলছে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের নারীদের পোশাক ও প্রসাধনী বিক্রির একটি দোকানের মালিক জলিল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শুরুর দিকে শুধু নারীদের পোশাক, গহনা, প্রসাধনী বিক্রি হয়েছে।   এখন শিশু আর পুরুষের পোশাকের বিক্রিও বেড়েছে।   সব ধরনের বেচাকেনা চলছে।   রাতে যেহেতু কাস্টমার বেশি, তাই দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে।

৩০ বছর ধরে এই নিয়মেই রোজার সময় বিকিকিনি চলছে বলে জানান জলিল মিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।