নগরীর মুরাদপুরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন তৃতীয় লিঙ্গের একজন প্রতিনিধি। হস্তশিল্পে ১৫ জন, বিউটিফিকেশনে ১৫ জন, দর্জিবিজ্ঞানে ১২ জন ও কম্পিউটারে ৮ জন হিজড়া ৫০ দিনের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বন্দনা দাশ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন বেলা একটা পর্যন্ত হিজড়ারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
তিনি জানান, শাহিন আকতার বিউটি, ইঞ্জিনিয়ার বেলাল উদ্দিন, মেহজাবিন তন্বী ও মেহজাবিন ইশরাত প্রতিদিন চারটি বিভাগে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এটি আমাদের পঞ্চম ব্যাচ। গত ৯ এপ্রিল প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এর আগের চার বছরে আরও চারটি ব্যাচে ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, হিজড়াদের প্রশিক্ষণের জন্য আনা এবং ক্লাস নেওয়াটা অনেক কঠিন। নিয়মিত কাউন্সেলিং করতে হয়। উদ্বুদ্ধ করতে হয়। কিছু কিছু হিজড়ার মানসিক সমস্যা আছে। উগ্রমেজাজিও হন কেউ কেউ। তারপরও আমরা বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সহযোগিতায় সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। রাষ্ট্র তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকার তাদের জীবনমান উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের দাবি একটি, মাথা গোঁজার ঠাঁই। কারণ কেউ তাদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা চাই আমরা।
বন্দনা দাশ বলেন, হিজড়াদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে সরকার। প্রাথমিকে ৩০০, মাধ্যমিক ৪৫০, উচ্চমাধ্যমিকে ৬০০ ও উচ্চতর শ্রেণির হিজড়াদের জন্য ১ হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু স্কুল পর্যায়ে তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টি গোপন রাখা হয় বলে কেউ শিক্ষাবৃত্তি নিতে আসে না। তাই বৃত্তির টাকা আমরা ফেরত দিয়েছি।
হিজড়া নিয়ে কাজ করেন এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, হিজড়ারা কাজ পাচ্ছে না বলে দোকানে দোকানে গিয়ে ‘ছল্লা’ তুলছে। তাদের একজন করে গুরু থাকে। তারা গুরুর কথাই মেনে চলে। এখন যদি তাদের সমাজে পুনর্বাসিত করতে হয় তবে তাদের সম্পর্কে সমাজকে ইতিবাচক ধারণা দিতে হবে। মানুষ হিসেবে তাদের মর্যাদা দিতে হবে। সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবদুল জলিল মণ্ডল সিএমপি কমিশনার থাকাকালে মেঘরানি হিজাড়াকে অলংকার মোড়ে একটি দোকান খুলে দিয়েছিলেন। এখনো দোকানটি আছে। তবে মাঝেমধ্যে তিনিও ‘ছল্লা’ তুলতে বের হন। ‘ছল্লা’ও তোলে, দোকানও করে। ‘ছল্লা’য় দিনে ২ হাজার টাকা পায়। হিজড়ারা চায় সরকারি চাকরি। এমনকি ট্রেনের সুইপার হলেও কাজ করবে। কিন্তু সরকারি চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা তো সিএমপির নেই।
বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কো-অর্ডিনেটর নাজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সারা দেশে ১০ হাজার এবং চট্টগ্রামে পাঁচ শতাধিক হিজড়া আছেন। কাজের অভাব, ঘরভাড়া না পাওয়া, অসুখ-বিসুখসহ নানা কারণে তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে ঠিকই তবে পুনর্বাসনের জন্য যে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয় তা খুবই কম। ওই টাকায় তারা না পারে দোকান দিতে না পারে ব্যবসা শুরু করতে। আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি তাদের আবাসন সংকটের সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে দেশের উন্নয়নে লাগাতে হলে হিজড়াদের জন্য বড় একটি উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
এআর/আইএসএ/টিসি