ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাজনীতিতে সাময়িক বিরতি মুফতি ইজাহারের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭
রাজনীতিতে সাময়িক বিরতি মুফতি ইজাহারের

চট্টগ্রাম: ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে বারবার আলোচনায় আসা মুফতি ইজাহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি এখন আর রাজনীতিতে নেই।  ভবিষ্যতে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কি না সেই কথা বলার সময় এটা নয়।

শনিবার (১৮ মার্চ) নগরীর লালখান বাজারে মুফতি ইজহারের জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তল্ল‍াশি চালায় পুলিশ।  

তল্লাশি অভিযান চলার সময়ই মাদ্রাসার ভেতরে মসজিদে বসে বাংলানিউজের মুখোমুখি হন মুফতি ইজাহার।

সভা-সমাবেশে দেখা যায় না কেন- জানতে চাইলে ইজাহার বলেন, আমি তো এখন রাজনীতিতে নেই।   আমি আল্লাহ আল্লাহ করি আর মাদ্রাসা নিয়ে আছি।

 

‘যদিও রাজনীতি একজন স্বাধীন নাগরিকের মৌলিক অধিকার।   কিন্তু আমি রাজনীতিতে সক্রিয় নয়। ’ বলেন হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির ইজাহার

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও পরিচিতি আছে মুফতি ইজাহারের।   জঙ্গিবাদি কার্যক্রমের অভিযোগে বেশ কয়েকবার কারাগারে যাওয়া ইজাহার সর্বশেষ গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট।   দেড় বছর জেল খেটে গত ডিসেম্বরে কারাগার থেকে বের হন।

দীর্ঘসময় কারাগারে থাকায় মাদ্রাসার কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, রাজনীতি ছাড়ার এটাই কারণ বলে জানালেন মুফতি ইজাহার।

‘তিন বছর আগে হেফাজতের আন্দোলনের পর আমাকে গ্রেফতার করা হল।   আমার ছেলে হারুনকেও জেলে নিয়ে যাওয়া হল।   আমাদের হাজতবাসের জন্য মাদ্রাসার ক্ষতি হয়েছে।   এজন্য রাজনীতি থেকে দূরে আছি। ’

ভবিষ্যতে সক্রিয় হবেন কি না জানতে চাইলে ইজাহার বলেন, এটা বলার সময় এটা নয়।   যখন সময় হবে বলব।

মূলধারার রাজনীতিতে দীর্ঘসময় নেজামে ইসলাম নামে একটি দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা ইজাহার একসময় ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতা ছিলেন।   পরে ঐক্যজোট ভেঙে নিজেই একই নামে আলাদা দল করেন।  

বিভিন্ন সময় নিজেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের রূপকার বলে দাবি করেন ইজাহার।   তার দাবি, মন্ত্রীত্ব না দেয়ায় ‍চারদলীয় জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন।   আর মহাজোট সরকারের সঙ্গেও এখন তার সম্পর্ক ভাল নেই বলে তিনি দাবি করেছেন।

‘আমাকে আর হারুনকে জেলে নেয়ার পর সরকারের সঙ্গে আপাতত দূরত্ব তৈরি হয়েছে।   তবে এটা আনুষ্ঠানিক কোন দূরত্ব নয়। ’ বলেন ইজাহার।

পুলিশের অভিযান প্রসঙ্গে ইজাহার বলেন, আমি তো এখন কিছুতে নেই।   শুধু আল্লাহ আল্লাহ করি।   তারপরও সবসময় আমাকে টার্গেট করা হয়।    

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এক দশক আগে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের প্রাণনাশের অভিযোগে আটক হওয়া কয়েক জঙ্গি জানিয়েছিল, তারা মুফতি ইজাহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসায় ট্রেনিং নিয়েছিল।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতে ডাউকি এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া লস্কর ই তৈয়বার দু’জঙ্গি টি নাজের ওরফে নাজের পারবন এবং শফিক ওরফে সাহাফাজ শামসুদ্দিন সেদেশের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দুই জঙ্গির সঙ্গে ২০০৯ সালের নভেম্বরে মুফতি হারুনের (ইজাহারের ছেলে) বাংলাদেশে কয়েক দফা বৈঠক হয়। এমনকি তারা মার্কিন ও ভারত দূতাবাসে হামলারও পরিকল্পনা নিয়েছিল।

হেফাজতে ইসলামের ভেতরে কট্টর সরকারবিরোধী অংশের নেতৃত্বদাতা দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ইজাহার ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর তার মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর থেকে ‘আত্মগোপনে’ চলে গিয়েছিলেন।

ওই মাদ্রাসায় হ্যান্ড গ্রেনেড বানাতে গিয়ে সেদিন বিস্ফোরণে তিনজন মারা যায়।   পরে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে চারটি তাজা গ্রেনেড, ১৮ বোতল এসিড এবং বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেন।

ঘটনার পর ইজাহারের ছেলে হারুন ইজাহারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।   আর প্রায় দুই বছর পলাতক থাকা ইজাহারকে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়।   উভয়ই পরে জামিনে মুক্ত হন।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর খুলশী থানায় বিস্ফোরক আইনে, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং খুনের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন।   তিনটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের পর আদালত অভিযোগ গঠন করেছেন।  মামলাগুলো এখন বিচারের পর্যায়ে আছে।

গ্রেফতারের পর মুফতি ইজাহারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।