ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৭
ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রশিদ আহমদ চৌধুরী। ছবি: সোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ২০০১ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেওয়া প্রকৌশলী রশিদ আহমদ চৌধুরী বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ব্যবস্থাপনা ও ম্যানেজম্যান্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের চেয়াম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

প্রায় ১৬ বছর অধ্যাপনা পেশায় নিয়োজিত প্রকৌশলী রশিদ চৌধুরীর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সাময়িকীতে ব্যবস্থাপনা, বিপণন, স্টকমার্কেট বিষয়ে প্রায় ১৫টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকের টাকা সরিয়ে নেওয়া, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে মুখ থুবড়ে পড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে (বিসিবি) শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পেয়েছেন বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ।

সম্প্রতি ব্যাংকের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন বিসিবি চেয়ারম্যান। আলাপচারিতায় জানালেন ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানো আর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা।

বাংলানিউজ: বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক থেকে গ্রাহকের টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত থাকায় গ্রাহকদের আস্থা কমে গেছে। আস্থা ফেরাতে আপনি কোনো উদ্যোগ নেবেন কী? 

বিসিবি চেয়ারম্যান: গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কারাগারে রয়েছে। টাকা উদ্ধারের বিষয়ে চেষ্টা চলছে।

বাংলানিউজ: ২০১৫ সালে খাতুনগঞ্জ শাখার এক কর্মকর্তা গ্রাহকের প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর আগের বছর ব্যাংকটির বংশাল শাখা থেকে যমুনা এগ্রো কেমিক্যাল ১১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কর্মকর্তার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হলে ব্যাংকে অচলাবস্থা নেমে আসে। সেই পরিস্থিতি থেকে উঠে আসা কতটুকু সম্ভব হয়েছে।

বিসিবি চেয়ারম্যান: খাতুনগঞ্জ ও বংশালের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুদকের করা মামলায় ৫ জন কর্মকর্তা জেলে আটক আছেন এবং তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের টাকা উদ্ধারে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। টাকা আদায়ের জন্য গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। পরিবর্তন আনা হয়েছে ব্যাংকের এমডি পদে। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রশিদ আহমদ চৌধুরী

বাংলানিউজ: বর্তমানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ, সঞ্চিত ও মূলধন ঘাটতি কত। খেলাপি ঋণ উদ্ধার ও ঘাটতি পূরণে আপনার উদ্যোগ কী হবে, গত অর্থ বছরে পরিচালন ও নিট মুনাফা কতো জানাবেন কি?

বিসিবি চেয়ারম্যান: বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমান ৫৮৯ দশমিক ১৯ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতি ৩৮০ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা, সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ ২৮৪ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের উর্ধ্বতন নির্বাহীদের নিয়ে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। শাখাসমূহে রিকভারি টিম গঠন করে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এছাড়া আইনগত বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রিকভারি এজেন্ট নিয়োগের পরিককল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে (৩১.১২.২০১৬) ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৩ দশমিক ১০ কোটি টাকা, নিট মুনাফা হয়েছে ২ দশমিক ৫১ কোটি টাকা। আশা করছি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে।

মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে রাইট শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব করা হয়েছিল। একজন শেয়ারহোল্ডারের মামলা দায়ের এবং মামলার আদেশের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠাকল্পে প্রণীত ১৯৯৭ সালের ১২ নম্বর আইনের সংশ্লিষ্ট অংশের সংশোধনীর জন্য প্রস্তাবটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভাগের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনী কার্যকর হলে মূলধন ঘাটতি পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।  

বাংলানিউজ: বর্তমানে ব্যাংকের ক, খ ও গ শ্রেণির শেয়ার কত শতাংশ?

বিসিবি চেয়ারম্যান: বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার তথা ‘ক’ শ্রেণির শেয়ার ৩৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে তথা ‘খ’ শ্রেণির শেয়ার ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ, সাধারণ শেয়ার হোল্ডার তথা ‘গ’ শ্রেণির শেয়ার ৫৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

বাংলানিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

বিসিবি চেয়ারম্যান: ধন্যবাদ আপনাকেও।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৭

এমইউ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।