ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মন্ত্রী মোশাররফকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
মন্ত্রী মোশাররফকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার দাবি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের

চট্টগ্রাম: মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। শিগগির দাবির পক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ড সংবাদ সম্মেলন করবে বলে জানিয়েছেন জেলা কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) তিনি আলাপচারিতায় বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।     

মো. সাহাবউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা অত্যন্ত গর্বের সাথে বলতে পারি, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার একজন তরুণ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ২৫ মার্চ তারিখে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মিরসরাই শুভপুর ব্রিজে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম লগ্নেই এক অতুলনীয় সাহস ও বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট ট্রান্সমিশন কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারে অন্য সংগঠকদের সাথে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। একজন রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি ভারতে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন এবং ইস্টার্ন রিফাইনারিতে গেরিলা হামলা চালানোর লক্ষ্য নিয়ে নিজের দলও রকেট লান্সারসহ অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নগরীতে ঢুকেন।

নগরীর কাজীর দেউড়িতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ও তার গ্রুপের অবস্থান টের পেয়ে পাকিস্তানি নৌবাহিনী এবং মিলিশিয়া দল তাদের আশ্রয়স্থলটি ঘেরাও করে ফেলে। আত্মরক্ষার জন্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও তার সঙ্গীরা ঘরের ভেন্টিলেটর ডিঙ্গিয়ে বেরোতে গিয়ে নালায় পড়ে গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় হেমসেন লেনের কাছে ধাঙ্গড় কলোনিতে গিয়ে সেখানকার লোকজনের সাহায্যে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তাদের দেওয়া কাপড়-চোপড় পরে নিরাপদ স্থানে আত্মরক্ষা করেন। পরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ আবারও ভারতে যান এবং ১নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্তলগ্নে নিয়মিত বাহিনীর অগ্রাভিযানে শামিল হয়ে শত্রুবাহিনীর পতন ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীকে হানাদারমুক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্যে অনেকেই রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হলেও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সাহসী ভূমিকা ও অবদানের কোনো মূল্যায়ন সেদিন হয়নি এবং তিনি কোনো রাষ্ট্রীয় খেতাব পাননি। আমরা মনে করি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফকে মুক্তিযুদ্ধে তার অনন্য অবদান ও বিরল সাহসিকতার জন্য বীরত্বের খেতাব দেওয়া উচিত ছিল।

তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তরুণ বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে কাজ করে আসছেন। স্বাধীনতার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশকে পুনরায় পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত শুরু হলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চরম প্রতিকূল অবস্থায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দলের চরম দুর্দিনে কাজ করতে গিয়ে তিনি অন্তত দুবার স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হামলার শিকার হন। ফটিকছড়িতে বিএনপি-জামায়াতের ঘাতকরা তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আঘাত হানে এবং নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় তিনি স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে হামলার শিকার হন। দুবারই তিনি অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যান।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সামনে প্রলোভনের হাতছানিও ছিল। কিন্তু লোভ-লালসা কিংবা চাপ কোনো কিছুই তাকে বশীভূত করতে পারেনি। এরকম নিষ্ঠাবান একজন রাজনীতিক হিসেবে তিনি নিজের সমগ্র জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে ছিলেন উৎসর্গীকৃত মানুষ। যিনি বর্তমানে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে নিরলস কাজ করে চলেছেন এবং স্বাধীনতার লক্ষ্য, আকাঙ্খা ও চেতনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন। তিনি আজও তার কাজের স্বীকৃতি পাননি। এটা আমরা এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা এবং জনগণের জন্যে অত্যন্ত দু:খ ও পরিতাপের বিষয়। আজ স্বাধীনতার মাসের প্রথম দিন আমরা এতদঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে থেকে বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিকে তার জীবনব্যাপী অপরিসীম ত্যাগ ও দৃষ্টান্তমূলক অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে মো. সাহাবউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। চট্টগ্রাম শহরে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারে প্রতিটি জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। আমরা চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা অবিলম্বে চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি স্মৃতিসৌধ, একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ ও নগরীর বধ্যভূমি ও যুদ্ধের স্থানগুলো সংরক্ষণের দাবি জানাই। আমরা চট্টগ্রামের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর বাড়িটি এবং যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর নির্যাতন কেন্দ্র কুখ্যাত মহামায়া ডালিম হোটেলকে অধিগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানাই। একই সঙ্গে কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণের জন্যও আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭

এআর/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।