ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হত্যার পেছনে পরকীয়া কিনা, জানতে চান মিতুর বাবা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
হত্যার পেছনে পরকীয়া কিনা, জানতে চান মিতুর বাবা মিতুর বাবা-মা’কে সিএমপিতে জিজ্ঞাসাবাদ। ছবি: সোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পেছনে ‘পরকীয়ার কোন ঘটনা’ আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। 

এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) মো.কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, হত্যার নেপথ্যে পরকীয়ার আছে কিনা সেই তদন্ত ইতোমধ্যে তিনি শুরু করেছেন।  

মিতু হত্যা নিয়ে নানামুখী আলোচনার মধ্যেও হত্যাকান্ডের কারণ নিয়ে এতদিন কোন সন্দেহের কথা বলেননি তার বাবা।

  তবে খুনের আট মাস পর মোশাররফ হোসেনের মুখ দিয়ে এই প্রথম ‘পরকীয়া’ নিয়ে সন্দেহের বিষয়টি এসেছে।  

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) মিতুর মা সাহেদা মোশাররফকে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত একটানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

  সাহেদাকে নিয়ে সিএমপিতে আসা মোশাররফকেও শুরুতে এবং শেষে কিছুক্ষণের জন্য স্ত্রীর সামনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিএমপি ত্যাগের সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মোশাররফ বলেন, আমরা চাই যে খুনের মোটিভ।   এরপরে আমাদের আর কোন প্রশ্ন নেই।  

‘সেখানে আমি হই, বাবুল আক্তার হোক, বাবুল আক্তারের বাপ হোক, ভাইবোন, বন্ধুবান্ধব কিংবা অন্যকোন মহিলা মানুষ হোক, যে-ই থাকুক না কেন, যদি কোন পরকীয়া প্রেম থাক, যা-ই থাক, তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে সেটা বের করা পুলিশের দায়িত্ব। ’

‘আর বাদি হিসেবে বাবুল আক্তারের দায়দায়িত্ব, বাবুল আক্তার বলুক যে তার বৌ ভাল ছিল নাকি খারাপ ছিল।   সে বলবে।   তাকে বলতে হবে। ’

হঠাৎ পরকীয়ার বিষয়টি বললেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই সমাজেরই মানুষ।   এই ধরনের ঘটনা যে সমাজে ঘটে না, তা তো নয়।   এটা তো অবাস্তব কিছু নয়।

এসময় এক নারী সাংবাদিকের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, আপনাকে ফ্যামিলিতে টর্চার করলে আপনি আপনার মায়ের কাছে বলবেন এটাই তো স্বাভাবিক।   সাধারণত বাপের কাছে বলবেন না।   তাই বলে কি ‍বাবা হিসেবে আমার দায়িত্ব না, ওই পর্যায়টা আমি দেখি।  

ওই নারী সাংবাদিককে তিনি আরও বলেন, পুলিশ সবকিছু দেখুক।   এমনও হতে পারে, আমি আপনার উপরে ইন্টারেস্টেড না কিন্তু আপনি আমার উপর ইন্টারেস্টেড।   আমার উপরে আপনার কোন দুর্বলতা নেই, কিন্তু আপনার উপর আমার আছে।   এখন আপনি যদি আমার জায়গা দখল করতে চান, তাহলে কি আমারে মাইনাস করবেন না ?

‘মোটিভটা বের হোক।   এজন্য যতদিন সময় লাগে লাগুক।   যে-ই সম্পৃক্ত থাক, কার আদেশে কাজটা হয়েছে, জানতে সমস্যা কি।   সময় লাগুক, বাবুল আক্তার বলেন, বাবুল আক্তারের বংশধর বলেন, বন্ধুবান্ধব বলেন, কারও সঙ্গে যদি বাবুল আক্তারের লিঁয়াজো থেকে থাকে সেগুলো যেন পুলিশ বের করে। ’ বলেন মোশাররফ।

পরকীয়া নিয়ে তদন্ত করার জন্য মোশাররফের অনুরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তার স্ত্রী বলেন, আমি কিছু জানি না।   উনি (মিতুর বাবা) কি বলছেন সেটা আমি জানি না।

এরপর আবার বলেন, মিতুকে মারবে কেন ? আমার মেয়ের তো লাখ লাখ টাকা নাই, কোটি কোটি টাকা নাই, একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নাই।   তাহলে তাকে মারবে কেন ? নিশ্চয় এখানে অন্য কিছু আছে।   আমিও নিজেই পুলিশকে বলেছি তদন্ত করে বের করুক।  

সাহেদা মোশাররফ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারী কর্মকর্তা তার কাছে মেয়ের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।  

সাহেদা বলেন, আমার মেয়ে ভাল ছিল, পরহেজগার ছিল, নামাজ পড়ত, রোজা রাখত এসব বলেছি।   বাচ্চা দুইটা কেমন আছে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।   কি কারণে তাকে মারল, আমার মেয়ে কি কারণে মারল, কে মারল, আমরা সঠিক বিচার চাই।

মিতুর সংসারে কোন অশান্তি ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর বিষয়ে কথাবার্তা মাঝে মাঝে হয়েছে। সে মারা যাবে কিংবা তাকে মারা হবে এই ধরনের কোন কথাবার্তা সে (মিতু) আমাদের বলেনি।   সংসারের কথা বলত, তবে এসব নিয়ে বলত না।   মানসিক কষ্টে ছিল না।   তবে সে খুব চাপা ছিল আর সহজ-সরল ছিল।

তবে বাবুল আক্তারকে কোন ধরনের সন্দেহ তিনি করেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

সাহেদা জানান, হত্যাকান্ডের পর থেকে তাদের সঙ্গে বাবুল আক্তার এবং দুই ছেলেমেয়ে থাকলেও গত ৮ ডিসেম্বর তারা বাসা পাল্টে মগবাজার চলে গেছে।   এখন সন্তান নিয়ে বাবুল তার বাবা-মার সঙ্গে থাকে।   সেখানে বাবুলের ভাইবোনরাও থাকে।

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আমি উনার (সাহেদা) সঙ্গে কথা বলেছি।   আমার কিছু প্রশ্ন ছিল।   সেই কথাগুলো উনাকে জিজ্ঞেস করেছি।    

পরকীয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সার্বিক বিষয়গুলো, যে বিষয়টা আপনি (সাংবাদিক) এখন বললেন, সেই বিষয়টা নিয়ে কাজ করছি।   তবে এটা নতুন করে শুরুর কোন বিষয় না।   এটা আজ প্রথম নয়।   উভয়ের ক্ষেত্রে পরকীয়ার কোন সম্পর্ক ছিল কি না সেই বিষয়েই তদন্ত করছি।

পরকীয়া নিয়ে কোন ক্লু পাওয়া গেছে কি না সেটা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ তদন্তকারী কর্মকর্তা।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারও সিএমপিতে এসে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন।   স্ত্রী খুনের মামলার বাদি হিসেবে ওইদিন বাবুল আক্তার সিএমপিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের কার্যালয়ে হাজির হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন।

এরপর বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফকে ২২ ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  

বাবুল আক্তারের মা-বাবা এবং দুই খালাতো ভাইকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।  

গত বছরের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন সদর দপ্তরে কর্মরত তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ‍মিতু।   এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৭

আরডিজি/আইএসএ/টিসি

**মিতুর বাবা-মা’কে সিএমপিতে জিজ্ঞাসাবাদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।