বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ভোরে রহমতগঞ্জের ৪ নম্বর সড়কে বেঙ্গল জ্যাকস নামের একটি অ্যাপার্টমেন্টের দুটি ফ্ল্যাটে চুরির ঘটনা ঘটে।
যে দুটি ফ্ল্যাটে চুরি হয়েছে এর একটি তৃতীয় তলায়।
ভবনের নিরাপত্তারক্ষী মো.নাসির বাংলানিউজকে বলেন, অ্যাপার্টমেন্টের পেছন দিকে নালা দিয়ে এসে পাচিল টপকে নীচতলায় ঢুকে চোর। এরপর গ্যাসের পাইপ ও কার্নিশ বেয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে। তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে চুরির পর ছয়তলার ফ্ল্যাটে ঢুকে ধরা পড়ে যায় ওই চোর। তাকে নিচতলায় আনার পর ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ধরে গণপিটুনি দেন।
নিরুপম দাশগুপ্তের মেয়ে স্বস্তিকা দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে জানান, তাদের বাসায় দুটি কিড বক্স খুলে স্বর্ণের কানের দুল, আংটি ও নাকফুল নিয়ে গেছে। এছাড়া তার দাদুর মোবাইলও নিয়ে যায়। পরে মোবাইলটি নিচতলায় একটি পার্কিং করা গাড়ির নিচে পাওয়া গেছে।
নিরুপমের মা ছবি দাশগুপ্তা বাংলানিউজকে জানান, নিরুপম স্ত্রী এবং ছোট মেয়েকে নিয়ে ভারতে বেড়াতে গেছেন। বড় মেয়ে স্বস্তিকা রাতে মামার বাসায় ছিলেন। নিরুপমের বাসায় ছিলেন তিনি এবং শ্বশুর দিলীপ চৌধুরী।
ফ্ল্যাটের পশ্চিমের সর্বশেষ কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন দিলীপ। সেখানে কার্ণিশ বেয়ে কাচের দরজা খুলে চোর ঢুকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দিলীপ মোবাইল খুঁজে না পেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর তারা ছয়তলায় এক চোর ধরা পড়েছে বলে জানতে পারেন বলে জানান ছবি দাশগুপ্তা।
ঘটনাস্থলে থাকা কোতয়ালি থানার আসকার দিঘীর পাড় পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সোহেল আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, চুরির সময় আটক হওয়া কিশোরের নাম রতন। তার বয়স আনুমানিক ৮ বছর। পিটুনিতে রতন আহত হয়েছে বলে তিনি জানান।
রতনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এএসআই সোহেল আহমেদ জানান, চুরির সময় রতনসহ চারজন অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করেছিল। তিনজন পালাতে সক্ষম হলেও রতন ধরা পড়ে যায়। রতন নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের পেশাদার ছিনতাইকারী আনোয়ার গ্রুপের সদস্য। তাদের গ্রুপে সুমন ও বদি নামে আরও দুজন লিডার আছে।
সোহেল জানান, আনোয়ারের গ্রুপে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন শিশু-কিশোর আছে যাদের দিয়ে চুরি-ছিনতাই, মাদক বহনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লাগানো হয়। তাদের প্রত্যেকে শারীরিক কসরতের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
চুরির কৌশল সম্পর্কে এএসআই সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, চুরি করতে যাবার আগে প্রথমে শিশুদের গাম কিংবা ইয়াবা খাইয়ে নেশাসক্ত করে ফেলা হয়। যে কোন সরু গলি কিংবা ছিদ্র দিয়ে বাসায় প্রবেশের কৌশল তাদের রপ্ত করা আছে। নেশাসক্ত করে ফেলা হয় যাতে তারা ধরা পড়লে গ্যাং লিডারদের কারও নাম না বলে।
এদিকে রতন আটকের খবর পেয়ে নগরীর চকবাজার থেকে মোহাম্মদ ঈছা এবং শাহজাহান নামে দুজন তাকে ছাড়াতে আসে। এসময় পুলিশ তাদের আটক করে রাখে।
মোহাম্মদ ঈছা বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাসায় আগে রতন কাজ করত। তিন মাস আগে সে পালিয়ে যায়। সে সকালে ফোন দিয়ে বলে তাকে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে। খবর পেয়ে আমি ঘটনা দেখতে এসেছি। এখন পুলিশ আমাদের আটকে ফেলেছে।
তিনজনকে আটক করে কোতয়ালি থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন এএসআই সোহেল।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
আরডিজি/টিসি