ঢাকা, সোমবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

একটি চলন্ত হাসপাতালের গল্প

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:১৯, জানুয়ারি ৯, ২০১৭
একটি চলন্ত হাসপাতালের গল্প চলন্ত হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা। ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: লম্বায় ৩৩ ফিট। পাশের দূরত্ব মেরেকেটে ৮ ফিট। এটি একটি কাভার্ড ভ্যানের মাপঝোক। সেই ভ্যানের উপর বসানো হয়েছে কনটেইনার সদৃশ্য চারকোনার টিনের বাক্স। সেই বাক্সের পেটেই অন্য পৃথিবী। ভেতরে রোগী দেখার জন্য আসন পাতানো। তার চারপাশে বিভিন্ন যন্ত্রের সমাহার। পুরোটাই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। এবং আছেন চিকিৎসক।

তাই সেটি আর কাভার্ড ভ্যানে সীমাবদ্ধ নেই আর।   হ্যাঁ-এটা একটি পুরোদস্তুর হাসপাতাল।

 পথে-প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে প্রতিবন্ধীদের চিকি‍ৎসা সেবা দেওয়ায় যার কাজ।  প্রাধান্যে অবশ্যই দরিদ্র প্রতিবন্ধী শিশু।

সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যে কেন্দ্র আছে ১০৩টি।   তবে পুরো দেশেই এমন ‘চলন্ত হাসপাতাল’ আছে ৩২টি।  তার মধ্যে চট্টগ্রাম প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যে কেন্দ্রের অধীনে আছে একটি।   তারা এই হাসপাতালটির নাম দিয়েছে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মোবাইল রিহ্যাবিলিটেশন ভ্যান। ’

সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের অনুশীলন মাঠেও সোমবার থেকে শুরু হয়েছে  তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলা।   মেলায় ‍এসেছে এই চলন্ত হাসপাতাল।

সোমবার সেই হাসপাতালে কথা হয় চট্টগ্রাম প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যে কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সীতারায় ফেরদৌস এবং কনসালটেন্ট ফিজিওথেরাপিস্ট শামীমা নাসরীনের সঙ্গে।

সীতারায় ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে এই একটি মাত্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মোবাইল রিহ্যাবিলিটেশন ভ্যান রয়েছে।   চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা ছাড়া অন্যান্য সব উপজেলায় এবং কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া, রামু এবং উখিয়াও আমরা প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। ’উন্নয়ন মেলায় এসেছে চলন্ত হাসাপাতালটি

তারা জানান, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়।   তারপর থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বমোট ১ হাজার ৫১৭জনকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে এই হাসপাতাল।

প্রতিবন্ধী বিষয়ক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের গাড়িটি একটু বড় হওয়ায় প্রত্যান্ত অঞ্চলে যাওয়া যায় না।  তাই যে উপজেলায় যাবার সিদ্ধান্ত হয় তা সেই উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।   তাদের সঙ্গে কথা বলেই দিনক্ষণ ঠিক করা হয়।   তারাই স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারণা চালিয়ে রোগীদের জানিয়ে দেন। পরে আমরা নির্দিষ্ট একটা জায়গায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসি। ’

চট্টগ্রাম প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যে কেন্দ্রের কনসালটেন্ট ফিজিওথেরাপিস্ট শামীমা নাসরীন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে মূলত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য।  তবে দরিদ্র ব্যক্তিদেরও চিকি‍ৎসা সেবাও দিয়ে আসছি আমরা।  তাদের বিভিন্ন থেরাপি সহ সব রকমের চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায় এখানে। প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর আমরা বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। তবে আমরা এখানে  চিকিৎসা সেবার চেয়ে এই হাসপাতালের বিষয়ে প্রচার ও হাসপাতালটির প্রদর্শনীর জন্য মেলায় অংশ নিয়েছি। ’

এখানে থেরাপি নিলেই যে পরিপূর্ণ সুস্থ হবে তা নয় মন্তব্য করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা এক বছর বয়সী থেকে প্রতিবন্ধী শিশুর থেরাপি সহ অন্যান্য চিকিৎসা দিয়ে আসছি।   তবে সমস্যা দেখার শুরুতেই যদি কোনো শিশুর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায় তাহলে তার ধারাবাহিকভাবে চিকি‍ৎসা সেবা নেওয়ার মধ্যে দিয়ে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ’হাসপাতালের ভেতরে একটি থেরাপি যন্ত্র দেখাচ্ছেন সহকারী চিকিৎসক রাজন দে

‘কিন্তু একজন শিশু ৮০ শতাংশই প্রতিবন্ধী সমস্যায় জর্জরিত।  তার সুস্থ হওয়া আসলেই কঠিন।  তবে আমাদের এই হাসপাতালে ১০টি থেরাপি যন্ত্র আছে।   ধারাবাহিকভাবে থেরাপির মাধ্যমে অনেকেই সুস্থ হচ্ছেন। ’-যোগ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যে কেন্দ্রে এই হাসপাতাল কেন্দ্রীক আরও চারজন সহকারী চিকিৎসক রয়েছেন।  এখানে স্ট্রোক-প্যারাইলাইসিস, ফ্রোজেন সোল্ডার, জিবিএস, এনকাইলোজিং স্পন্ডালাইটিস, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, বাত-ব্যথা, স্পন্ডালাইটিস, আর্থ্রাইটিস, স্পোর্টস ও আঘাতজনিত সমস্যা, সেরিব্রাল পলসি ও প্রতিবন্ধিতার থেরাপি চিকিৎসা দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের কাউন্সিলিং ও প্রশিক্ষণ সুবিধাও রয়েছে এখানে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬

টিএইচ/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।