ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চাঁদা না পেয়ে জাতীয় বক্সারকে ছাত্রদল নেতার মারধর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৭
চাঁদা না পেয়ে জাতীয় বক্সারকে ছাত্রদল নেতার মারধর

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি সেশনে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীকে হলের কক্ষে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে। আহত শিক্ষার্থী মোনায়েবুর রহমান খান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। মোনায়েব একজন জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করা বক্সার।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রদলের ওই নেতাকে সাড়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছে মোনায়েবের পরিবার।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, মোনায়েব ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা অনুষদের অধিনে ফিজিক্যাল অ্যাডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের স্নাতক ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১ম হন। মোনায়েব ভর্তিও হয় কিছুদিন আগে।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) তাকে সহ আরও ৩০ জনকে বিভাগ সংক্রান্ত কাজে ডাকায় বিভাগটি।

মোনায়েব বিভাগ সংক্রান্ত কাজ শেষ করে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে যায় । এ সময় ছাত্রদল নেতা সালাহ উদ্দিন উজ্জ্বল সহ কয়েকজন এসে মোনায়েবকে ওই হলের ২১২ নম্বর কক্ষে দেড় ঘণ্টা আটকে রাখে। ওই খানে তাকে উপর্যপুরি মারধর করার এক পর্যায়ে ছাড়া পেলে মোনায়েব বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে আশ্রয় নেন। পরে তিনি দায়িত্বরত পুলিশকে বিষয়টি খুলে বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিক্যাল অ্যাডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের সভাপতি এএইচএম রাকিবুল মাওলা বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথম বর্ষের ৩০জন শিক্ষার্থীকে বিভাগ সংক্রান্ত কাজে মঙ্গলবার ডাকা হয়। এদিন বিভাগ সংক্রান্ত কাজে তাদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে ফি নেওয়া হয়। কিন্তু মোনায়েব ছাড়া বাকি ২৯জন ফি দিয়ে দেয়। মোনায়েব বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলে জমা দিবে। এই জন্য সে দুপুরে বিভাগ থেকে বের হয়। পরে বিকেলে শুনি যে, মোনায়েবকে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোকাদ্দেস বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোনায়েব নামে এক শিক্ষার্থী মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে আশ্রয় নেয়। সে অভিযোগ করে তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে। তার শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহৃ পাওয়া গেছে। পরে তার বাবা এসে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর বাবা মাহবুবুল রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোনায়েব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছাত্রদলের সালাহ উদ্দিন উজ্জ্বল নামে এক নেতা সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করে আসছিল। টাকা না দেওয়ায় আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তারা হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে টর্চার করে। এ ঘটনায় আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। হাটহাজারী থানায়ও এ ব্যাপারে একটি মামলা করব। ’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোনায়েব নামে এক শিক্ষার্থীকে কক্ষে আটকে রেখে মারধর করার ঘটনা শুনেছি। এ ব্যাপারে মোনায়েবের বাবা প্রক্টর অফিসে বুধবার (৪ জানুয়ারি) অভিযোগ দিবে বলেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ঘটনার সাথে জড়িত যেই হোক আমরা তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিব।

অভিযোগের বিষয়ে সালাহ উদ্দিন উজ্জ্বলের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন উজ্জ্বল নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। তিনি বিষয়টির সাথে জড়িত কিনা খবর নিচ্ছি। ’

এদিকে ফিজিক্যাল অ্যাডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ সূত্র জানায়, বিকেএসপি থেকে পাস করা মোনায়েবুর রহমান খান একাধিকবার বক্সিংয়ে জাতীয় পর্যায়ের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।   আর কয়েকদিন পরে তার আবারও বক্সিংয়ে অংশ নিতে দেশের বাইরে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার মারধরের শিকার হওয়ায় তার হাত সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।

তাই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আশঙ্কা প্রকাশ করে অ্যাডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের সভাপতি এএইচএম রাকিবুল মাওলা লিখেছেন, ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে মোনায়েবের আবারও বাইরে যাবার কথা।   অথচ বক্সিংয়ে নামা দূরে থাক, ভবিষ্যতে বোধহয় ঐ হাত দুটির স্বাভাবিক কাজেও বিঘ্ন ঘটবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

জেইউ/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।