ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফিরে দেখা ২০১৬

সিএমপির ওপর ‘মিতু’ ঝড়

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
সিএমপির ওপর ‘মিতু’ ঝড়

চট্টগ্রাম: চলতি বছরের ৫ জুন ভোরে নগরীর ও আর নিজাম রোডে নির্মমভাবে খুন হন এক গৃহবধূ।  নাম মাহমুদা খানম মিতু।  সাধারণ এক গৃহবধূ হলে মিতু হত্যায় এত চাঞ্চল্য সৃষ্টি হত কি-না সন্দেহ আছে।  কিন্তু মিতু ছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী।  ফলে এই গৃহবধূর মৃত্যু ঝড় বইয়ে দেয় সিএমপির ওপর।  এই ঝড়ের ঝাপটা এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি সিএমপিসহ পুরো পুলিশ বিভাগ।

মিতু খুনের ঘটনা পরবর্তীতে আরও বেশকিছু ঘটনার জন্ম দেয় যা বছরের শেষ পর্যন্ত বারবার গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছে।  

স্বামী বাবুল আক্তার পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাবার পর সিএমপি থেকে বদলি হয়ে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকায় সদর দপ্তরে।

  যোগদানের দিনই ঘটে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড।  ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামে এসে স্ত্রীর মরদেহের পাশে বাবুল আক্তারের কান্না সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
  বাবুল আক্তারের কান্নার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঝড় তুলে।  

প্রথমদিকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গিদের সন্দেহ করে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয় এবং কয়েক হাজার গ্রেফতার হয়।   সিএমপিও আবু নছর গুন্নু নামে একজনকে গ্রেফতার করে দাবি করে, তিনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।   তার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে তথ্য দেয়, মাজার নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে পুলিশ গুন্নুকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।   এর ফলে হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত নিয়ে শুরু হয় এক ধরনের ধোঁয়াশা।   বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠতে থাকে, চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা ‍বাবুল আক্তারকেই দেওয়া হোক স্ত্রী হত্যার তদন্তের ভার।

তবে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।   আইজির নির্দেশে ঘটনা তদন্তে পাঁচটি সমন্বিত টিমও গঠন করা হয়।  

কিন্তু হত্যকাণ্ডের ২০ দিনের মাথায় এসে চিত্র পাল্টাতে শুরু করে। ২৪ জুন রাতে বাবুল আক্তারকে রাজধানীতে তার শ্বশুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।   মামলার বাদিকে আসামির মতো তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে দেশজুড়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যম হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে ইঙ্গিত করে খবর প্রকাশ করতে শুরু করে।  

এর মধ্যেই চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (বর্তমানে অতিরিক্ত উপ কমিশনার) মো.কামরুজ্জামান।   তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখে ওয়াসিম ও আনোয়ার নামে দুজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন যারা কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় মুছা, ওয়াসিম, নবী, আনোয়ার, রাশেদ, শাহজাহান ও কালু। অস্ত্র সরবরাহ করে ভোলা।  

ওয়াসিম, আনোয়ার, ভোলা এবং শাহজাহান বর্তমানে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে।   নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে।   বর্তমানে পলাতক আছে মুছা ও কালু।

তবে এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর যে তথ্য পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, মুছা হল বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠ সোর্স।  

মুছা যে পুলিশ কর্মকর্তার সোর্স, তার স্ত্রীকে কেন সে হত্যা করতে যাবে সেটা নিয়ে শুরু হয় নতুন জল্পনা।   বাবুল আক্তারের ওপর সন্দেহের বিষয়টি ডালপালা গজাতে শুরু করে।  

২৪ জুনের পর থেকে গণমাধ্যমের আড়ালে চলে যান বাবুল আক্তার।   মাঝে মাঝে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের অবস্থানের কথা জানান দিলেও গত অক্টোবর থেকে একেবারেই আড়ালে চলে যান।   এর মধ্যে চাকুরিতে ইস্তফা দেয়ার খবরও প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।

এদিকে পলাতক মুছাকে খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে তাকে ধরিয়ে দিতে ‍পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সিএমপি।   এছাড়া নিয়মিত বিরতিতে বারবার মিতু হত্যা, বাবুল আক্তারের চাকরি থেকে পদত্যাগসহ নানা ইস্যুতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হয়েছে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হককে।

বছরের শেষদিকে এসে তদন্তকারী কর্মকর্তার মুখোমুখি হন বাবুল আক্তার এবং তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।   এর ফলে বছরের শেষেও আরেক দফা গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে মিতু হত্যাকাণ্ড।

তবে বছর শেষেও যে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি সেটা হচ্ছে, কেন খুন করা হল মিতু আক্তারকে ? এই খুনের নির্দেশদাতা কে ?

জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি খুনের মোটিভ এবং নির্দেশদাতার বিষয়ে তথ্য বের করতে।   মুছাকে পেলে অনেক বিষয় পরিস্কার হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬

আরডিজি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।