ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

টাওয়ার ক্রেন বসিয়ে ইতিহাস গড়ল পিএইচপি শিপইয়ার্ড

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
টাওয়ার ক্রেন বসিয়ে ইতিহাস গড়ল পিএইচপি শিপইয়ার্ড ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) থেকে ফিরে: বিশ্বের জাহাজভাঙা (শিপব্রেকিং) শিল্পে চট্টগ্রামের পিএইচপি শিপইয়ার্ডই প্রথম স্থাপন করলো অত্যাধুনিক টাওয়ার ক্রেন। যা দিয়ে দৈত্যাকার জাহাজ কেটে টুকরাগুলো সমুদ্রের পানি ও মাটির ছোঁয়া ছাড়াই সরাসরি পাকা ইয়ার্ডে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ দূষণ যেমন হচ্ছে না তেমনি কম খরচে দ্রুততম সময়ে কাজ হচ্ছে।

পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সোমবার (১২ ডিসেম্বর) এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বের শিপব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিতে টাওয়ার ক্রেনের ব্যবহার ছিল না। এ শিল্পের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে নিজে কিছু একটা করার পরিকল্পনা থেকে আমিই প্রথম সাহস করে টাওয়ার ক্রেন স্থাপন করলাম।

এর অনেক সুবিধা। কম জ্বালানি খরচে অনেক সহজে, নিরাপদে ও কম সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে পারছি।

তিনি বলেন, ইয়ার্ড থেকে ট্রাকে স্ক্র্যাপ ও স্টিল শিট বোঝাইয়ের জন্য তিনটি ম্যাগনেটিক ক্রেন তো আগে থেকেই ব্যবহার করছি। আগামী দিনে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্রলিং ক্রেন কেনার পরিকল্পনা রয়েছে, যার দাম প্রায় চার কোটি টাকা।

পিএইচপি শিপইয়ার্ডের নির্বাহী পরিচালক নূর মোহাম্মদ ফারুকী। ১৯৮২ সাল থেকে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে কাজ করছেন তিনি।

জাহাজভাঙা শিল্পের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ফারুকী বাংলানিউজকে বললেন, শুধু আমাদের শিপইয়ার্ডেই টাওয়ার ক্রেন আছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের স্যানি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি থেকে ক্রেনটি কেনা হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে এটি অপারেশন শুরু করেছে। এটির জাদুকরী ক্ষমতা আছে। জাহাজ থেকে বড় বড় লোহার টুকরা, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি আলতো করে হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে আসে। সাগর বা পানির ছোঁয়া ছাড়াই। আগে এসব টুকরা টেনে আনতে শ্রমিকদের মাথার ঘাম পায়ে ঝরত।

টাওয়ার ক্রেনের চাবিটা থাকে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির মোহাম্মদ শাহ আলমের (৫০) হাতে। ৫৩ মিটার উঁচুতে ক্রেনের ছোট্ট খুপরিতে বসে কম্পিউটারের স্ক্রিনে নজর রাখেন গিয়ার, লোহার টুকরার ওজন ইত্যাদি।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুবাই-কাতারে টাওয়ার ক্রেনের অপারেটর ছিলাম। সেখানে আমি যে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে ছিলাম তাদের ৩৮টি টাওয়ার ক্রেন ছিল।

তিনি বলেন, পিএইচপি শিপইয়ার্ডের টাওয়ার ক্রেনটি বৃত্তাকারে ৫০ মিটার পর্যন্ত লোহার টুকরা লোড-আনলোড করতে পারে। ক্রেনের মাথায় ৭ টন এবং মাঝ বরাবর ১৫ টন পর্যন্ত ভার বহনে সক্ষম ক্রেনটি। পিডিবির বিদ্যুৎ কিংবা জেনারেটর চালিয়ে ক্রেনটি চলে।

সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে ২১ একর জায়গার ওপর ২০০০ সালে পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা শুরু হয়। এর আগে ১৯৮২ সালে এ ইয়ার্ডে যাত্রা শুরু হয়েছিল আরএম শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। ১৯৮৫ সালে ‘ট্রেড ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ নামের ২২ হাজার টনের একটি বিশাল জাহাজ কাটা হয় বলে ইয়ার্ড বাইশহাজারি ইয়ার্ড নামে পরিচিতি লাভ করে। ২০০৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজের মধ্যে চতুর্থতম ‘এমটি আর্কটিক ব্লু’ কেটে আবার ইতিহাসের অংশ হয় পিএইচপি শিপইয়ার্ড। এ পর্যন্ত ১৩৬টি জাহাজ কাটা হয় এ ইয়ার্ডে। অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে দেশের আইকনিক এ ইয়ার্ডে একসঙ্গে পাঁচটি জাহাজ কাটার সক্ষমতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আইএসও ৯০০১, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আইএসও ১৪০০১, হেলথ সেফটি অ্যাসেসমেন্ট সিরিজে আইএসও ১৮০০১ এবং শিপ রিসাইক্লিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আইএসও ৩০০০০ সনদ লাভ করেছে।

   

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬

এআর/আইএসএ/টিসি                 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।