ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দেশি প্রজাতির বিদেশি বাঘ দেখতে চিড়িয়াখানায় ভিড়

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৬
দেশি প্রজাতির বিদেশি বাঘ দেখতে চিড়িয়াখানায় ভিড় ছবি: সোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করে আনা সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির বাঘ-বাঘিনী দেখতে কৌতূহলী মানুষের ভিড় বাড়ছে ফয়’স লেকের চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়।

চট্টগ্রাম: দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করে আনা সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির বাঘ-বাঘিনী দেখতে কৌতূহলী মানুষের ভিড় বাড়ছে ফয়’স লেকের চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়।

শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ১০টায় বিশেষভাবে তৈরি সুদৃশ্য দুটি কাঠের বাক্সে ভরা বাঘ দুটিকে বহনকারী ট্রাক চিড়িয়াখানায় পৌঁছে।

বৃহস্পতিবার বাঘ দুটি আফ্রিকা থেকে বিমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়।

চিড়িয়াখানায় বাক্সবন্দী বাঘ দুটিকে প্রথমে ছোট্ট একটি লোহার খাঁচায় রাখা হয়।

পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন এসে বাঘ দুটিকে দর্শকদের জন্য বড় খাঁচায় উন্মুক্ত করে দেন। এ সময় খাঁচায় দুটি ছোট আকারের দেশি মুরগি ছেড়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় মুরগি ধরতে বাঘ দুটির ছোটাছুটি। একপর্যায়ে একটি মুরগি শিকার করে একটি বাঘ। উল্লাসে ফেটে পড়েন টিকেট কেটে ঢোকা নানা বয়সী হাজারো দর্শক।

বাঘ অবমুক্ত করে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির দুটি বাঘ এনেছি আমরা। এর ফলে চিড়িয়াখানা দর্শকদের কাছে যেমন আকর্ষণীয় হবে তেমনি সমৃদ্ধও হয়েছে। আমাদের আরও পরিকল্পনা আছে। বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সড়ক নির্মাণ, পশুপাখি সংগ্রহ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি। মৌলভীবাজার থেকে হনুমানসহ বেশ কিছু পশু-পাখি আনা হবে। এখানে ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে পাখিদের অভয়ারণ্য করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বেঙ্গল টাইগার চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় টিকে গেলে চিতাবাঘ আনার চেষ্টা করবেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, যারা কখনো বাঘ দেখেনি তারা এ চিড়িয়াখানায় এলে বাঘ দেখার সৌভাগ্য হবে।

বাঘ আমদানি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বাণিজ্যিকভাবে বাঘ প্রতিপালন ও প্রজননের অনুমতি আছে। তাদের অভিজ্ঞতা আছে এ ব্যাপারে। সারা বিশ্বে তারা বাঘ রপ্তানি করে সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে বাঘের কৃত্রিম  প্রজনন বা বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালনের অনুমোদন বা দক্ষতা কোনোটাই নেই।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এনেছি বেঙ্গল টাইগার। বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্যানথার টাইগ্রিস টাইগ্রিস’। বাঘটির বয়স ১১ মাস, বাঘিনীর বয়স ৯ মাস। দুটি কাঠের বাক্সসহ বাঘ দুটির ওজন ৪২০ কেজি। দুটি বাঘের শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। এগুলোর গড় আয়ু ১৪-১৫ বছর। তবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ভীম নামের একটি বাঘ ২৩ বছর বেঁচেছিল।

বাঘ আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সুন্দরবনে ২০১৫ সালে বাঘ শুমারি হয়েছিল। তখন ১০৬টি বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সুন্দরবন থেকে বাঘ ধরা অসম্ভব। অন্য কোনো চিড়িয়াখানা থেকেও সংগ্রহ করা যায়নি। তাই দরপত্রের মাধ্যমে চার বছর বাঘশূন্য থাকা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য বাঘ আমদানি করতে হয়েছে। বাঘগুলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া বাবদ ৩৩ লাখ টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে প্রথম ১৫ দিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকবে বাঘগুলো। যদি টিকে যায় তবে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে।

বাঘ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে ফ্যালকন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাঘ দুটি নিয়ে রাত পৌনে তিনটার দিকে রওনা দেওয়া হয়। এরপর দাউদকান্দি টোল প্লাজায় দেড়-দুই ঘণ্টা আটকা পড়ি। পৌনে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পৌঁছি। বাঘ দুটিকে ৪৮ ঘণ্টা কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। শুক্রবার দুপুরে ২টি মুরগি ও ৪ কেজি গরুর মাংস দেওয়া হবে।

তিনি জানান, ২০১৩ সালে গাজীপুর সাফারি পার্কের জন্য ১০টি বাচ্চা বাঘ সরবরাহ দিয়েছিলেন তারা।

বাঘ দেখে খুশি মা-বাবার সঙ্গে আসা প্রথম শ্রেণির ছাত্র আনিকা তাবাসসুম। বললো, চিড়িয়াখানায় তিনবার এসেছি। বাঘ দেখতে পাইনি। এবার বাঘ আসছে শুনে আব্বু-আম্মু আমাকে নিয়ে এসেছেন। বিশাল বিশাল দুটি বাঘ। খু-উ-ব সুন্দর।

চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব মো. রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, টিকেট বিক্রি বাড়ানোর জন্য আমরা বাঘ আনিনি। বাবা-মার কাছে শিশু-কিশোরদের বায়না থাকে চিড়িয়াখানায় এসে বাঘ দেখার। আমি নিজের কানে অনেক শিশুকে বলতে শুনেছি, বাবা বাঘ দেখবো। কিন্তু বাঘের খাঁচা তো চার বছর শূন্য। মূলত শিশুদের চাহিদা পূরণ করতেই বাঘ আমদানি করা হয়েছে।  

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০০৩ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি বাঘ আনা হয়েছিল। ২০০৬ সালে বাঘ ‘চন্দ্র’ মারা যায়। ২০০৯ সালে তার সঙ্গী ‘পূর্ণিমার’ ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পূর্ণিমা মারা যায়। এরপর থেকে গত চার বছর বাঘশূন্য অবস্থায় আছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।

পূর্ণিমার ক্যান্সার ধরা পড়ার পরই বাঘ ও বাঘিনী চেয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা ও ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।   কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি।   এরপর মন্ত্রণালয়েও বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল।  বারবার চিঠি লিখে সাড়া না মেলায় চলতি বছরের ২৫ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নির্বাহী কমিটির সভায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেরাই বাঘ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  

মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাবার পর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি বাঘ কেনার জন্য চলতি বছরের ১৯ আগস্ট আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।   চারটি প্রতিষ্ঠান বাঘ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করে দরপত্রে অংশ নেয়। সর্বনিম্ন ৩৩ লাখ টাকায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর বন্যপ্রাণী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফেলকন ট্রেডার্সকে কার্যাদেশ দেয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বাঘ কেনার পুরো টাকা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার টিকেট বিক্রি বাবদ আয়ের তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ৬৭ প্রজাতির ৩০৭টি প্রাণী ও পাখি আছে।   প্রাণীর মধ্যে আছে দুইটি সিংহ, দুইটি পুরুষ ভাল্লুক, ১৯টি কুমির ছানা, তিনটি কুমির, নয়টি চিত্রা হরিণ, পাঁচটি মায়া হরিণ, ৪টি উল্টোলেজী বানর, উল্লুক একটি, হনুমান একটি, চিতা বিড়াল ৪টি।                                                     

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৬

এআর/আইএসএ/টিসি 

**৩৩ লাখ টাকায় রয়েল বেঙ্গল এলো আফ্রিকা থেকে

             

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।