ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর এবং ষড়যন্ত্রকারী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৬
জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর এবং ষড়যন্ত্রকারী

চট্টগ্রাম: জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর এবং ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিজিসি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন আহমেদ।

রোববার (২৮ আগস্ট) স্বাচিপ-বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ইঞ্জিনিয়ার আফসার বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক হবেন কী করে। ও তো পাকিস্তানের চর ছিল।

জিয়াউর রহমান পাকিস্তান পন্থী মুক্তিযোদ্ধা। সিনিয়র মোস্ট ছিলেন বলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করার সুযোগ পেয়েছিল। তিনি ষড়যন্ত্রকারী।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে দুজন কুখ্যাত রাজাকার ছিল। একজনের ফাঁসি হয়েছে। আরেকজন অপেক্ষা করছে। মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হলে চট্টগ্রাম কলঙ্কমুক্ত হবে।

ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করে ইঞ্জিনিয়ার আফসার বলেন, আমি যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন খুব কাছ থেকে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমরা বলতাম ‘বঙ্গ শার্দ‍ূল শেখ মুজিবর রহমান’। তিনি বলতেন, একটি জাতির ১০ শতাংশ ছাত্র তুখোড় মেধাবী। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ আবার ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে।

এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহস দেখেছিলাম। তিনি ছিলেন আপসহীন। পাকিস্তানের মধ্যে দাঁড়িয়ে ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েছেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার কথা বলেছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় তাকেসহ সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো। সেখানকার সিহন্যাল ম্যাচেও গাইছেন ‘আমার সোনার বাংলা’। ওই ম্যাচটি এখন জাদুঘর করা হয়েছে।   

তিনি বলেন, ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে আমাদের কাছে সবক আসত। ‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’। ১৯৬৮ সালের বহুল প্রচলিত স্লোগান ছিল ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। আমরা পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে এসব স্লোগান দিয়েছি।

তিনি বলেন, পাকিস্তানিদের অত্যাচার আমরা দেখেছি। বিহারি ছেলেরা আমাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম কলেজে পড়ত। এমন ভাব ছিল তাদের মনে হতো আমরা তাদের প্রজা। তারা বাঙালি ছাত্র শুধু নয়, শিক্ষকদেরও অপমানিত করতো।

বঙ্গবন্ধুর খুনিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উল্লেখ করে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, তারা শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার জন্যে বেছে নিয়েছিল আগস্টকে। আজ আমাদের প্রয়োজন ঐক্য। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করতে হবে। সুখী, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ নিতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির আদর্শ রেখে গেছেন তা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে লড়াই করছেন। তাকে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করতে হবে।   

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, সহসভাপতি ডা. মনোয়ারুল হক শামিম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ)  জেলা শাখার আহ্বায়ক ডা. শেখ শফিউল আজম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শাখার সদস্যসচিব ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী।

আলোচনায় অংশ নেন বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. এসএম তারেক, উপাধ্যক্ষ ডা. জাহিদ হোসেন শরীফ, বিএমএ চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, সমাজসেবা সম্পাদক আবুল কাসেম মাসুদ, দপ্তর সম্পাদক ডা. মো. সেলিম, গ্রন্থাগার সম্পাদক ডা. নুরুদ্দিন জাহেদ, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ডা. এসএমএম আকবর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডা. সত্যজিৎ রায়। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সদস্যসচিব ডা. মো. সাইফুদ্দিন খালেদ।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ডা. মোহাম্মদ আবদুর রহমান, ডা. মো. জাহিদুল আলম জিকু, ডা. অঞ্জন বল, ডা. বাবর চৌধুরী, ডা. দেবরাজ বৈদ্য, ডা. সৌমিত্র বড়ুয়া, ডা. রাকিব উদ্দিন, ডা. ওমর ফারুক লাভলু, ডা. জুয়েল, ডা. আবদু রব ফয়সাল, ডা. এহসানুল খান প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন ডা. এসএম জাহেদ কামাল।

বিজিসি ট্রাস্ট গঠন প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার আফসার বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্যে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমার ভাষায় বিজিসি হচ্ছে আলোকবর্তিকা। বিদ্যানগরে সুন্দর একটি বাতি জ্বালানোর চেষ্টা করেছি। আজ মনে হচ্ছে আমার জ্বালানো বাতি বিকশিত হয়েছে। ১০ হাজার ছেলেমেয়ে আছে এ বিদ্যানগরে। তাদের বসার জন্যে বঙ্গবন্ধু সুইডেন স্কয়ার করেছি। যেখানে আমরা শোক দিবস, মা দিবস, স্বাধীনতা দিবস আয়োজন করি। এদেশের মানুষকে কিছু দেওয়ার জন্যেই এ বিদ্যানগরী গড়ে তুলেছি।

সম্প্রতি বাইপাস হয়েছে জানিয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, বিজিসি হচ্ছে আমার মায়ের নাম। আমার কোনো পীর নেই। আমার মা-ই আমার পীর। আমার কোনো পীরের দরকার নেই। তোমরা যদি মাকে চিনতে পারো তবেই সত্যিকারের স্বার্থক জীবন। আমার ইচ্ছে বিজিসি ট্রাস্টের অনেক মাঠ আছে, সেখানকার একটিতে যেন আমার জানাজা হয় এবং আমার মায়ের পাশে যেন কবর দেওয়া হয়। যে কবর আমি এখনই খুঁড়ে রেখেছি।      

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৬

এআর/টিসি 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।