ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঝুঁকিপূর্ণ রাডার স্টেশন, ফের পাহাড় ধ্বসের শংকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৬
ঝুঁকিপূর্ণ রাডার স্টেশন, ফের পাহাড় ধ্বসের শংকা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার: ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই। ওই রাতের ভারি বর্ষণে ধ্বসে পড়ে কক্সবাজারের ডপলার রাডার স্টেশনের পশ্চিম পাশের পাহাড়ের একাংশ।

এতে মাটি চাপা পড়ে নিহত হয় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী নারী-শিশুসহ ৫জন। ধ্বসে পড়া মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় আরও ৪ জনকে।

ঠিক একবছর পর আবারও এ ধরনের একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।   তাদের অভিযোগ, এতবড় একটি ঘটনার পরও রাডার স্টেশনটি রক্ষায় এখনও পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই এক বছর পর ফের পাহাড় ধ্বসের আশংকা করা হচ্ছে।  

স্থানীয় সূত্র জানায়, কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউজের পাহাড়ে অবস্থিত অত্যাধুনিক ডপলার রাডার স্টেশনটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।   ধ্বসে পড়া পাহাড়ের উপরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এখন খাঁড়া খাদ হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এবছর বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণে যেকোন সময় ফের পাহাড় ধ্বসে রাডারটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণহানির আশংকা দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার রাডার স্টেশন সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে জাপানের অর্থায়ন ও কারিগরী সহায়তায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক ডপলার রাডার স্টেশনটি তৈরি করা হয়। এটি বাংলাদেশের আবহাওয়ার অবস্থান, পূর্বাভাস দেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আবহাওয়ার আগাম সতর্কতা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে গভীর সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়সহ নানা দুর্যোগের আগাম বার্তা পাওয়ার কারণে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছে উপকূলবাসী। শন থেকে চতুর্দিকে ৪৪০ কিলোমিটার দূরুত্ব পর্যন্ত নিখুঁতভাবে আগাম সতর্কতা বার্তা প্রদানে সক্ষম ডপলার রাডারটি।

কিন্তু ওইসময় পাহাড় ধ্বসের শংকায় রাডার স্টেশনের পশ্চিম পাশের পাহাড়ের ঢালুতে নির্মাণ করা হয় তিন স্তরের রক্ষাপ্রাচীর। পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি থেকে রাডারটি রক্ষা করতে পাইলিং করে রক্ষাপ্রাচীরটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে রাডার স্টেশনের রক্ষাপ্রাচীরের নির্মাণকাজ কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগকে হস্তান্তর করে কর্তৃপক্ষ। টেন্ডারের মাধ্যমে রক্ষাপ্রাচীর নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউনুচ এন্ড ব্রাদার্স। পরে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন কক্সবাজারের একজন ঠিকাদার। আর এ রক্ষাপ্রাচীর থাকার পরও গতবছর পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

রাডার স্টেশনের পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী কবরস্থান পাড়ার হায়দার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের পাহাড় ধ্বসে কয়েকটি বসতবাড়ি মাটি চাপা পড়ে। এখনো মাটির নিচে চাপা পড়া অবস্থায় আছে ওইসব বসতবাড়ি। পাহাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ভারি বৃষ্টি হলে যেকোন সময় তা ধ্বসে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

রাডার স্টেশন পাহাড়ের পাদদেশের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম জানান, অন্য কোন উপায় না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারসহ এখানে বাস করছি।

সরেজমিনে রাডার স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধ্বসে পড়া পাহাড়ের অংশ ঠিক একবছর আগের মতোই রয়ে গেছে। বরং গত বর্ষা মৌসুমের ভারি বর্ষণে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো পাহাড়ের ধ্বসে পড়া অংশ খাঁড়া খাদ হয়ে রয়েছে। আর ধ্বসে পড়া পাহাড়ের পাদদেশেই ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে বেশ কয়েকটি পরিবার। ধ্বসে পড়া অংশ থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরেই রয়েছে রাডারের মূল স্থাপনা। ফলে রাডার স্টেশনটিও চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার রাডার স্টেশনের ইনচার্জ প্রকৌশলী মো. আবুল হাশেম বাংলানিউজকে জানান, গতবছর পাহাড় ধ্বসের ঘটনার পর থেকেই রাডার স্টেশনটি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হয়। পরে জাপানের বিশেষজ্ঞ ও গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জরিপ কাজ সম্পাদন করেন। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গণপূর্ত বিভাগকে। নকশা প্রণয়ন থেকে শুরু করে সুরক্ষাপ্রাচীরের টেন্ডার আহবানসহ নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

তিনি জানান, রাডার স্টেশনের পাহাড়টি রক্ষায় প্রাচীর নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার আহবান করেছে গণপূর্ত বিভাগ। নির্মাণকাজের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগামী ১৮মে টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কাজের বরাদ্ধ দেয়া হবে। এক মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।

এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে বর্ষা মৌসুম। ফলে নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ফের পাহাড় ধ্বসের আশংকাও প্রকাশ করেছেন তারা।

তবে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে প্রকৌশলী মো. আবুল হাশেম জানান, ধ্বসে পড়া পাহাড়ের নিচের দিকের বেজমেন্ট সুরক্ষিত রয়েছে। পাহাড়ের উপরের দিকে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ একবছর আগের মতো থেকে গেলেও ভারি বর্ষণে তা ধ্বসে পড়ার আশংকা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘন্টা, মে ০৯, ২০১৬

এনএ/টিটি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।