ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫
নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’ বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক।

তিনি বলেন, পুলিশের কাজ অপরাধ দমন করা।

যারা পেট্রোলবোমা মেরে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে, গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
 
আইনের মধ্যে থেকে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘কোন সন্ত্রাসীর প্রতি নমনীয়তা দেখানোর কোন সুযোগ আমাদের নেই।


বুধবার বেলা ১২টায় নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে মেট্রোপলিটন শ্যুটিং ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, নগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার একেএম শহিদুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার(অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদারসহ নগর, জেলা পুলিশ ও  র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের মহা পরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন,‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান থাকবে। যারা অপরাধ করবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। এ ব্যাপারে যাতে পুলিশের পক্ষ থেকে কোন দ্বিধা-সংকোচ না থাকে। পুলিশের উপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে কাজ করা। ’

সংবাদ সম্মেলনের আগে কল্যাণ সভায় আইজি পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,‘পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন হতে পারে না। অপরাধ দমন করা আমাদের কাজ। তাদের দমন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা কোন দলের হয়ে কাজ করছি না। সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। ’

সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন,‘পুলিশ একটা কোয়াসি জুডিশিয়াল(আধা বিচারিক) সার্ভিস। একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বিচারকের দায়িত্ব পালন করে। তার তদন্তে যাতে প্রভাবিত না হয় সেটি দেখা হয়।

নিরপেক্ষভাবে যাতে সে তদন্ত করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা হয়। স্বতন্ত্র মামলায় কারা আসামী হবে, কাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিবে এটি তদন্তকারী কর্মকর্তার একান্ত বিষয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা কারো বিরুদ্ধে যদি যথেষ্ট সাক্ষী প্রমাণ পায়, সে ক্ষেত্রে তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিতে পারে। এটা তদন্ত কর্মকর্তার নিজের এখতিয়ার। যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা মনে করে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে হবে সে জন্য সে যদি অন্য কোন সংস্থার বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তা চায় তাহলে তাকে সে সহায়তা দেওয়া হবে। যদি কেউ মামলার আসামী হয়, তার বিরুদ্ধে যদি সাক্ষ্য প্রমান থাকে সেটার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা তদন্তকারী কর্মকর্তার ব্যাপার। ’

নাশকতা দমনে জনগণের সহায়তা চান পুলিশ মহাপরিদর্শক। তিনি বলেন,‘আমি সবসময় জনগণের সহায়তা চাই। জনগণকে আমাদের পাশে রাখতে চাই। পেট্রোলবোমায় মানুষ মারা কোন সাধারণ নাগরিক মেনে নেবে না। তারা এটা সমর্থন করে না। যেহেতু এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জনগণ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। পুলিশকে সহায়তা করবে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে জনগণের সহায়তা চাচ্ছি। যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারি। ’

বিরোধী জোটকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন,‘স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সরকার বন্ধ করেনি। সরকারতো জরুরি অবস্থা দেয়নি, যাতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। এধরণের কোন আদেশ বা প্রজ্ঞাপনতো নেই। ’

বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক মনে করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক। তিনি বলেন,‘হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করছে। আমি চট্টগ্রামে চলে এসেছি। আপনার আসতে পেরেছেন। যা হচ্ছে তা চোরাগোপ্তা হামলা। এগুলো দুষ্কৃতিকারীরা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। ’

নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড কবে বন্ধ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে একেএম শহীদুল হক বলেন,‘যারা নাশকতার কর্মসূচি দেয় তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন। এগুলো কবে বন্ধ করবে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। ’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীতাকুণ্ড এলাকায় কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের আইজি। তিনি বলেন,‘পুলিশের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডে বিজিবি ক্যাম্প আছে। র‌্যাবের টহলও আছে। দরকার হলে সেখানে আরো ফোর্স বাড়ানো হবে। ওই এলাকায় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কমিটি করা হবে। যারা দুষ্কৃতিকারী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
 
বিরোধী জোটের সভা-সমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গে পুলিশের আইজি বলেন,‘৫ জানুয়ারী উভয় দল অনুমতি চেয়েছিল। যার কারনে কাউকে দেওয়া হয়নি। এরপর আওয়ামী লীগ চেয়েছে আমরা নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে তাদেরকে দিয়েছি। বিএনপিতো আর চায়নি। প্রত্যকটা সভা-সমাবেশের অনুমতি চাইলে আমরা নিরীক্ষা করে দেখি। যদি দেখা যায় কোন ধরণের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হবে না, তাহলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেই। নিরাপত্তাও দিয়ে থাকি। ’

পুলিশের জনবল বৃদ্ধি নিয়ে একেএম শহীদুল হক বলেন,‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত টার্মে ৩২ হাজার পুলিশের জনবল সৃষ্টি করেছেন। এই টার্মে তিনি ৫০ হাজার জনবল সৃষ্টি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকায় দেখেছেন ১০ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগের বিজ্ঞাপন আমরা দিয়েছি। ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ১০ হাজার পুলিশ নিয়োগ হয়ে যাবে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলে যাবে। এভাবে ধাপে ধাপে বিভিন্ন র‌্যাঙ্কে নিয়োগ দেওয়া হবে। সিএমপি’র পক্ষ থেকে ৫ হাজার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর কাছাকাছি সিএমপিতে জনবল বাড়ানো হবে। ডিএমপিতে আমরা ৭ হাজার দিচ্ছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।