ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিএনপি থাকুক, চান বাদল

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৫
বিএনপি থাকুক, চান বাদল ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: চলমান সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে যেখানে সরকারি দলের নেতারা প্রায়ই দলটিকে নিশ্চিহ্ন করার হুংকার দিচ্ছেন সেখানে ভিন্নমত এসেছে আলোচিত সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদলের কাছ থেকে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শীর্ষ নেতা, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন আছে।

চলমান সহিংসতার জন্য বিএনপির ভুল রাজনীতিকে দায়ী করলেও দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন তিনি।

দেশজুড়ে চলমান সংঘাত, নাশকতা-সহিংসতার মধ্যে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলতে সম্প্রতি বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে পরিচিত মঈনউদ্দিন খান বাদল।


পোড়খাওয়া এ রাজনীতিক বলেন, ‘আমি পার্লামেন্টে একটি কথা বলেছি, অনেক বন্ধুবান্ধব আমাকে ভুল বুঝেছেন। বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দল থাকুক, এটা আমি বলেছি। আমরা যে অপিনিয়ন হোল্ড করি সেটা তো প্রত্যেকটা মানুষের অপিনিয়ন না। তাহলে এ অপনিয়িনের বাইরে যা আছে সেটাও প্রকাশ পাওয়া উচিৎ। সেই প্রকাশের জন্য বিএনপির মত একটা পার্টি যেন থাকে, এটাই আমার কথা। এই পার্টিটা থাকা উচিৎ। ’

‘তবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে যে, গণতন্ত্রের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি দল অগণতান্ত্রিক এবং সন্ত্রাসী রাজনীতির খপ্পড়ে পড়ে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করতে যাচ্ছে। ’ বিএনপিকে নিয়ে এ হতাশার কথাও অকপটে বললেন বাদল।

আলাপকালে গণতান্ত্রিক সভা-সমাবেশের অধিকার খর্ব করা উচিৎ নয় বলেও মন্তব্য করেছেন এ সাংসদ। বালুর ট্রাক, ইটের ট্রাকও কোনো বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয় বলে মনে করেন তিনি। আবার এ পরিস্থিতি তৈরির জন্য বিএনপিকেই দায়ী করেন।

বাদল বলেন, ‘গাজীপুরে ছাত্রলীগ বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিল না, আমি বলব, গণতান্ত্রিক সভা-সমাবেশের অধিকার খর্ব করা উচিৎ না। এ কথার জন্য যদি আমার এমপিশিপ (সংসদ সদস্য পদ) চলে যায়, তাতেও রাজি। ’

‘কিন্তু আপনারা বড় বড় কথা বললেন, রক্তের বিনিময়ে সভা করবো, যে কোনো মূল্যে করব, কিন্তু কিছুই তো করতেছেন না। খালেদা জিয়াকে যেখানে বাধা দেওয়া হবে সেখানে তো ক্যামেরা থাকবে, সেখানে তো তিনি কথা বলতে পারতেন। এখনও যে খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন সেটাও তো বিকজ অব প্রেস (সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে)। ’ বিএনপিকে নিয়ে এই মন্তব্য বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের।

সমাবেশ করতে না দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরির জন্য বিএনপিকে দায়ী করে বাদল বলেন, ‘৮-৯টা সমাবেশ করেছেন, কেউ বাধা দেয়নি। বির্তক আসল তখন, ছেলে বলে বসল, বঙ্গবন্ধু রাজাকার পাকিস্তানপ্রেমী ও হত্যাকারী। তাহলে আপনার সঙ্গে কি বিদগ্ধ গণতান্ত্রিক আলোচনা হবে? বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা এটা তো সংবিধানে লেখা আছে। ছেলে বলেছে, কিন্তু মা একটা জবাব দিতে পারতেন। অথচ মা বললেন, ছেলে তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বলেছে। তাহলে বিএনপি কি বলতে চাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু রাজাকার, হত্যাকারী, পাকিস্তানপ্রেমী। এটাই যদি আপনার স্ট্যান্ড হয় কিভাবে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সহনশীল হয়?’

‘বালুর ট্রাক, ইটের ট্রাক-এগুলো বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রাজনীতি মনে করিনা’ এমন মন্তব্যের পর আবার খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘তার মধ্যে যদি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থাকতো তিনি কাঠের চেয়ার এনে আমরণ অনশনে বসতে পারতেন। তিনি ডায়াবেটিস রোগী। তিন ঘণ্টা অনশন করলে চুপসে যেতেন। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব অ্যালার্ট হয়ে যেত, বলত, খালেদা জিয়ার এই অবস্থা হয়েছে কেন? খালেদা জিয়া সেই পথে গেলেন না, গণতান্ত্রিক কোনো পথেই তিনি গেলেন না। ’

তিনি খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সরকার এখন একটা কথা বলতে পারছে, কার বিরুদ্ধে আপনার অবরোধ? কৃষকের বিরুদ্ধে। আপনি কার বিরুদ্ধে অবরোধ করছেন? কর্মজীবীর বিরুদ্ধে। আপনি তো তাকে খাওয়াচ্ছেন না। কোনো পয়সাওয়ালাকে অবরোধ আঘাত করে না। সে ঘরের মধ্যে চারটা টিভি চালাইয়া অবরোধ এনজয় করতেছে। ’ 

সম্প্রতি নাশকতাকারীর বুকে গুলি করার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম হন সাংসদ বাদল। তবে তিনি দাবি করেছেন, তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বাদল বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে আমি এতো পাগল হইনি যে গুলি করে দাও বলব। ১৪ দলের এক সভায় আমি বলেছি, খালেদা জিয়া আপনি যা করছেন তা গণআন্দোলন না। আপনি ভেবে দেখুন, এতে কোনো গণসম্পৃক্ততা নেই। ফিসপ্লেট তুলে ফেলা, ককটেল মারা, মানুষকে আক্রমণ করা, বাস জ্বালিয়ে দেওয়া, মানুষ জ্বালিয়ে দেওয়া এগুলো সন্ত্রাসী আচরণ। প্রত্যেকটা সন্ত্রাসী আন্দোলন। তখন সন্ত্রাসের মাত্রা অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নেয়।

‘সেটা কখনও টিয়ার গ্যাস হতে পারে, কখনও লাঠিচার্জ হতে পারে। মাত্রা অনুযায়ী পায়ের নিচে গুলি করতে পারে, বুকেও গুলি করতে পারে। ’ বলেন বাদল।

‘পুলিশের পেনাল কোডে লেখা আছে ৪৬৩তে ব্যাখা আছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে যদি কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়, যেই ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই ঘটনা সংঘটিত যারা করছে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন, পুলিশ ক্যান শ্যুট এট সাইট। তো আমি আমার মত করে বানিয়ে কোনো কথা বলিনি। আমি বাংলাদেশ পেনাল কোডকে ব্যাখা করেছিলাম। ’ নিজের সমালোচিত হওয়া বক্তব্যের ব্যাখাটি এভাবেই উপস্থাপন করলেন বাদল।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘দুঃখ এখানেই উনারা আমার কথাটা সঠিকভাবে না বুঝে অফিসেও মারলেন বোমা, বাড়িতেও মারলেন বোমা। এতে তো আমার কিছু যায় আসেনা। আই অ্যাম হ্যাপি। দেশে যে বোমাবাজি হচ্ছে আমিও একজন এর শিকার। ’

বাদল বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকান্ড যখন জনগণের সমর্থন পায় তখন সেটা মুক্তির আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হয়ে যায়। কিন্তু যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জনসমর্থন নেই সেটা যে কোনো মুভমেন্টের মাধ্যমে দমন করা সক্ষম। বাংলাদেশেও আপনারা সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সেটা দেখতে পাবেন। সামনে আরও কঠোর অবস্থান দেখবেন। ’

বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বলছি, খালেদা জিয়া, আপনার পার্টিটা তো ক্যাডারবেইজড পার্টি না, ইলেকশনবেইজড পার্টি। কিন্তু যে অ্যাকশনে আপনি কর্মীদের জড়িত করে ফেললেন এটা তো ক্যাডারবেইজড অ্যাকশন। আপনার ছেলেপেলেগুলো বেঘোরে মারা যাবে এবং এভাবেই কিন্তু আপনার পার্টি একটা নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে চলে যাবে। ’

মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে কিনা ‍এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যদি চায় তবে হবে। যদি জনগণ মনে করে আরেকটি নির্বাচন দরকার, সেক্ষেত্রে আমরা যতই ফুটানি করি যে আগামী নির্বাচন ২০১৯ এর আগে হবেনা, আমাদের ফুটানি তিনদিনও টিকবেনা। উদাহরণ চাইলে দিতে পারি। আমরা এয়ারপোর্ট করতে চেয়েছি, মানুষের চাপে বলেছি এয়ারপোর্ট করবো না। রূপগঞ্জে সেনানিবাস করতে চেয়েছিল না? সেখানে বিক্ষোভের মুখে হেলিকপ্টারে করে সৈনিকদের ফেরত আনতে হয়েছে।

জরুরি অবস্থা জারির কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জরুরি অবস্থার কথা জরুরি লোকেরা বলে, এগুলোতে আমি নাই। জরুরি অবস্থার মত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ’

চলমান সংঘাত প্রসঙ্গে বাদল বলেন, ‘এ দ্বন্দ্বের প্রকৃতি কি ? এটা এতো বেদনাদায়ক, রক্তাক্ত কেন ? এই জাতির উদ্ভব, যে ভিত্তির উপর রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে আছে সেটাতে যদি আমরা এক হতে না পারি তাহলে তো দ্বন্দ্ব সবসময় হবে। আমি একটা সেক্যুলার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য এখনও লড়াই করছি। আবার এমন রাজনৈতিক বিশ্বাসও কারও কারও আছে, এটাকে ইসলামিক দেশ, ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বানাবে। এ দুটো পোলারাইজেশনকে এক করা কখনও সম্ভব নয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।