ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নাশকতাকারীদের কাছে পাচার হচ্ছে তথ্য, বিপাকে সিএমপি

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫
নাশকতাকারীদের কাছে পাচার হচ্ছে তথ্য, বিপাকে সিএমপি

চট্টগ্রাম: অবরোধের মধ্যে ককটেল-পেট্রল বোমা, সহিংসতা নিয়ে সংকটময় সময়ে কিছু সদস্যের ‘বিতর্কিত’ ভূমিকার কারণে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। নগরীর বিভিন্ন থানায় কর্মরত এসব সদস্য বিএনপি-জামায়াতের আমলে নিয়োগ পেয়েছেন।



এসব সদস্যের কাছ থেকে পুলিশের গোপন তথ্য নাশকতাকারীরা পেয়ে যাচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজনকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যেও রাখা হয়েছে।


পুলিশের কাছ থেকে তথ্য ফাঁস হবার বিষয়টি স্বীকার করেছে নগর পুলিশ কমিশনার মোহা.আব্দুল জলিল মন্ডলও। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টেই কিছু ‘ব্ল্যাক শিপ’ থাকে। সিএমপিও এর ব্যতিক্রম নয়। কারা তথ্য পাচার করছে আমরা সেটা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধের মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করে পুলিশের কিছু সদস্যের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের যোগসাজশের তথ্য পেয়েছেন সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

তাদের কাছে এমনও তথ্য আছে, হরতাল-অবরোধের সমর্থনে মিছিলের আয়োজন করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আগে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কখনও থানা থেকে মিছিলে সহযোগিতা করা হয়। এরপর সেই মিছিল থেকে ককটেল হামলা, গাড়ি ভাংচুরসহ নাশকতার ঘটনা ঘটে।

আবার মিছিলের আয়োজনের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কোন একটি নির্দিষ্ট স্পটের বিষয়ে তথ্য দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট থানা থেকে পুলিশ আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিছিলের স্পট অন্য থানায় নির্ধারণ করে নিজের দায় সারছেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েকটি সহিংসতার ঘটনার পর কয়েকজন মূল নাশকতাকারীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। দেখা গেছে, প্রত্যেক নাশকতাকারীর কাছেই খবর চলে গেছে আগেভাগে।

নগর পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি চান্দগাও এলাকায় পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বিস্ময়কর হচ্ছে, এজাহার লেখার আগেই ওই কাউন্সিলরের কাছে তাকে আসামি করার খবর চলে যায়। ওই কাউন্সিলর এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরে তাকে বাদ দেয়ার জন্য তদবির শুরু করেন।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ শুরুর পর এ পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীতে কমপক্ষে ৮টি ‍মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলা সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য, অভিযোগ ছাড়া ঢালাওভাবে আসামি করে দায়ের করা হয়েছে। এমনও হয়েছে, ককটেল বিস্ফোরণ কিংবা গাড়ি ভাংচুর করেছে শিবিরের কর্মীরা আর আসামি করা হয়েছে বিএনপি নেতাদের।

সার্বিক এসব বিষয় পর্যালোচনা করেই সিএমপি’র শীর্ষ কর্মকর্তারা এখন নিজেদের ভেতরকার বিএনপি-জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল কর্মকর্তাদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর সদরঘাট ও ডবলমুরিং থানার ওসি বিএনপি’র ৯১ থেকে ৯৬ পর্যন্ত শাসনামলে নিয়োগ পেয়েছেন। তারা বিএনপি সমর্থক হিসেবেই পুলিশ প্রশাসনে পরিচিত। এছাড়া ইপিজেড, পতেঙ্গা ও কর্ণফুলী থানার ওসি বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে পরিচিত।

নগরীর কমপক্ষে আটটি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছাত্রজীবনে ছাত্রদল অথবা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। থানাগুলো হচ্ছে, বাকলিয়া, চকবাজার, পাচলাইশ, চান্দগাও, পাহাড়তলী, আকবর শাহ, ইপিজেড, পতেঙ্গা এবং কর্ণফুলী।

এসব কর্মকর্তা বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রশাসনে তারা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নামে ‘বাবর বাহিনীর’ সদস্য হিসেবে পরিচিত। তাদের অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অথবা কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায়।

নগরীর ১৬ থানার মধ্যে কমপক্ষে ১০ থানায় কর্মরত সেকেন্ড অফিসারও বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগর পুলিশের একটি নির্দিষ্ট ইউনিটে দায়িত্বরত একজন সহকারী কমিশনার বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা ও সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। একই ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা এলডিপি সভাপতি অলি আহমদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের রায়ের পর দক্ষিণ চট্টগ্রামে রক্তাক্ত সহিংসতার সময়ে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওই কর্মকর্তা বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেন।

এছাড়া নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও নগর পুলিশের বিশেষ শাখা মিলে কমপক্ষে ৬ জন পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন যারা বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

নগর পুলিশ কমিশনার মোহা.আব্দুল জলিল মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের সব সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে গোপন রাখার চেষ্টা করছি। কেউ যদি আমাদের সিদ্ধান্তে ব্যাঘাত ঘটায়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে বেঈমানি করে সেটা সহ্য করবনা। তবে সব তথ্যই যে পুলিশের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে তা নয়। অনেকভাবেই তথ্য পাচার হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭,২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।