ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গ্যাস সংকটে নাকাল বন্দরনগরী

ইফতেখার ফয়সাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৪
গ্যাস সংকটে নাকাল বন্দরনগরী ছবি: প্রতীকী

শীত মৌসুমের আগেই বন্দরনগরীতে তীব্র হয়ে উঠেছে গ্যাস সংকট।   আবাসিক থেকে শুরু করে শিল্প প্রতিষ্ঠান, সিএনজি ফিলিং স্টেশন সবখানেই এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।



কর্ণফুলী গ্যাস সরবরাহ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) দাবি, চাহিদার তূলনায় গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় তারা রেশনিং করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।   এ সংকট সমাধানে পেট্টোবাংলার কাছে আবেদন করেছে কোম্পানিটি।


গ্যাসের অভাবে এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র (ইউনিট-১) ও শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সারখানা সিইউএফএল’র উৎপাদন। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে হলিডে স্ট্যাগারিং (এলকাভিত্তিক পৃথক ছুটির দিন নির্ধারণ) করা হচ্ছে ১৮২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া, দৈনিক নির্ধারিত  ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখার পরও গ্যাসের চাপ না থাকায় রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে।

আবাসিক এলাকাগুলোর মধ্যে জামালখান, আন্দরকিল্লাহ, চকবাজার, সদরঘাট, মুরাদপুর, হামজার বাগ, বায়েজিদ, খুলশী এলাকায় গ্যাস সংকট তূলনামূলক বেশী বলে জানিয়েছে নগরবাসী। তাদের দাবি, এসব এলাকাগুলোতে দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস থাকছে না।

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে সরবরাহ করা হয় মাত্র ২০০ থেকে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট।

কেজিডিসিএলের আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০।   এছাড়া, প্রায় এক হাজার শিল্প ও আড়াই হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি।

নগরীর জামালখান এলাকার মো. ওয়াজেদ বাংলানিউজকে জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই জামালখান এলাকায় দিনে গ্যাস থাকছে না।

তিনি বলেন, “ভোর চারটা-পাঁচটার পর থেকেই গ্যাস চলে যায়, আবার আসে রাতে।   গ্যাস সংকটে এমনই অবস্থা যে বাসার ‍রান্না-বান্না পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। ”

আন্দরকিল্লাহ এলাকার গৃহিনী জোবাইদা আক্তার বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ থাকার পরও কেরোসিনের স্টোভ কিনে রান্না করতে হচ্ছে। ’

বাকলিয়া এলাকার মো. ফরহাদ জানান, রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস না পেয়ে কয়েকদিন ধরেই বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি মাহবুব চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হলিডে স্ট্যাগারিং চালানোর কোন মানে হয় না, এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান করা উচিত। শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস না দিয়ে শিল্পের উন্নয়ন করবেন কিভাবে?’

এসময় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূল্য বাড়িয়ে হলেও গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।   মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘যে সব ইন্ডাস্ট্রি গ্যাস  দিয়ে উৎপাদন করছে তাদের খরচ যদি আড়াই টাকা হলে, সেখানে যারা ক্যাপটিক জেনারেটরে উৎপাদন করছে তাদের খরচ হচ্ছে ১৬ টাকা ১৮ পয়সা।   এ কারণে বাজার সমতা যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি একটি অসম প্রতিযোগিতা দেখা দিয়েছে। ’

গ্যাস সংকট সমাধানে চট্টগ্রামের জন্য নতুন লাইন স্থাপন ও এলএনজি আমদানির উপর জোর দেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে জানতে কেজিডিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইউব খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) ফিরোজ আলম জানান, গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এ সংকট সমাধানে পেট্টোবাংলার সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এদিকে, আসন্ন শীত মৌসুমে গ্যাস সংকট আরো প্রকট রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেজিডিসিএল‘র প্রকৌশলীরা।   তারা বলছেন, নগরীর রিং মেইন লাইনসহ শাখা প্রশাখা দীর্ঘদিন পিগিং না হওয়ায় কনডেনসেট সমস্যা প্রকট হয়ে উঠতে পারে।

২০০৭ সালে বাখরাবাদ থেকে চট্টগ্রাম রিং মেইন লাইন পর্যন্ত একবার পিগিং করা হয়েছিল। নগরীর অভ্যন্তরীণ ডিস্ট্রিবিউশন লাইনগুলো পিগিং করা হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে নগরীর উচ্চ এবং মধ্য চাপের লাইনগুলো পিগিং না হওয়ায় কম্প্রেসার এবং ভাল্বগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। সদরঘাট, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, কালুরঘাট, ফৌজদারহাটসহ কয়েকটি পয়েন্টে পিগিং না হওয়ায় কনডেনসেটের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।

প্রকৌশলীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকায় লাইনের অভ্যন্তরে এক ধরনের কাদা এবং পানি জমে থাকে। আবার কূপ থেকে সরবরাহ করা গ্যাস প্রসেসিং প্লান্টে কনডেনসেট হিসেবে তরল পদার্থগুলো আলাদা করা হলেও তার একাংশ লাইনে চলে আসে। যা অকটেনের মতো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। শীতে তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় এ ধরনের তরল পদার্থের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে নগরীর প্রায় লাইনে।

গত কয়েক বছর আগে পিগিং সমস্যা তীব্র হয়ে ওঠায় কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে লাইন থেকে তরল জাতীয় জ্বালানি সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন রি-রোলিং মিল এবং শিল্প কারখানার লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত ভাল্ব থেকে ঘন ঘন তরল বের হয়েছিল। এসব তরল কনডেনসেট আকারে সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কনডেনসেট আধিক্যের কারণে দক্ষিণ পাড়ের বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানার ফার্নেসে মারাত্মক ত্রুটি দেখা দেয়।

শীত মৌসুমে তাপমাত্র হ্রাস পেলে উচ্চচাপের লাইন ছাড়াও নিম্নচাপের লাইনগুলোতেও গণহারে গ্যাসের চাপ অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যায়। যার কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।