ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পাক নাগরিকের রোহিঙ্গা কানেকশন

অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে বাংলাদেশে কিনা, জানতে চায় পুলিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪
অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে বাংলাদেশে কিনা, জানতে চায় পুলিশ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: মায়ানমারের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিও গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টারের (জিআরসি) পরিচালক পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ আলমের (৪৫) বাংলাদেশে আসার উদ্দেশ্য কি, রোহিঙ্গা কিংবা পাকিস্তানি নাগরিকদের মাধ্যমে গোপন তৎপরতায় বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা চলছে কি-না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টারের সঙ্গে মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) যোগসূত্র আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।



এছাড়াও স্পর্শকাতর বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে আটক হওয়া পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ আলমসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা কানেকশনধারী পাকিস্তানি নাগরিক চট্টগ্রামে অবস্থানের তথ্য পেয়েই আমরা অভিযান চালিয়েছি।
পাকিস্তানি নাগরিকের বাংলাদেশে আসার উদ্দেশ্য কি, রোহিঙ্গা বিদ্রোহি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক কি এসব বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আটক হওয়া পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে রোববার দুপুরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ানকে প্রধান করে একটি আট সদস্যবিশিষ্ট যৌথ সেল গঠন করা হয়েছে।

সেলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো.হাছান চৌধুরী ও সহকারি কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম, কোতয়ালি জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার শাহ মো.আব্দুর রউফ, সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সদীপ কুমার দাশ, সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আজিজ আহমেদ।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর খুলশী থানার জিইসি মোড়ে হোটেল লর্ডস ইন থেকে পাকিস্তানি নাগরিকসহ পাঁচজনকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। আটক হওয়া পাঁচজন হল, পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম (৪৫), মোহাম্মদ আমিন (৫০), আব্দুল মজিদ (৩০), ছালামত উল্লাহ(৪৫) এবং শফিউল্লাহ (৪০)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করা গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টারের (জিআরসি) সঙ্গে আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (এআরইউ) নামে একটি সংগঠন যৌথভাবে কাজ করে। মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গাদের সংগঠন উগ্রপন্থী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে এদের সম্পর্ক আছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

তবে জিআরসি ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, সুদান, বাহারাইন, তুরস্ক, সৌদিআরবের বিভিন্ন দেশে কাজ করে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। গত সেপ্টেম্বর মাসে জিআরসি সর্বশেষ ভারতে তাদের শাখা খুলেছে।

তবে মোহাম্মদ আলমের পাসপোর্ট থেকে তার বিষয়ে বেশকিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পাসপোর্টে তার বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এস আই) সন্তোষ কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আলমের পাসপোর্টে দেখা গেছে, সে বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছে। কোন দেশেই সে তিন-চারদিনের বেশি থাকতনা।

সূত্রমতে, পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিনের ছেলে মোহাম্মদ আলমের জন্ম ১৯৭০ সালের ৬ জুন। ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর ইস্যু হওয়া তার পাসপোর্টের নম্বর এএন ১৭৫২২২৩। আলম গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশে আসার ভিসা পান জেদ্দা থেকে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার বাংলাদেশে ভিসার মেয়াদ আছে।

২১ নভেম্বর শুক্রবার আলম শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আলম বাংলাদেশে প্রবেশ করে। শনিবার আলম চট্টগ্রামে এসে রাত ৮টার দিকে হোটেল লর্ডস ইনে উঠেন। একই সময়ে তার সঙ্গে বাকি চারজনও হোটেলে উঠেন।

আলম এর আগে গত মার্চেও একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। ২০ মার্চ বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিনি ২৪ মার্চ এদেশ ছেড়ে যান। দু’বার বাংলাদেশে আসার ভিসাই ইস্যু হয়েছে জেদ্দা থেকে।

খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আলমের বিভিন্ন দেশ সফরের প্রমাণ মিলেছে তার পাসপোর্টে থাকা ভ্রমণের তথ্যেও। আলম চলতি বছরের ১০ আগস্ট বাহারাইনে গিয়ে মাত্র দু’দিন পর ১২ আগস্ট ওই দেশ ত্যাগ করেন। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি ৭২ ঘণ্টার ট্রানজিট ভিসা নিয়ে তিনি বাহারাইন যান।

চলতি বছরের মধ্যেই আলম বাংলাদেশ, বাহারাইন, তুরস্ক, জেদ্দা, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, সুদান, মালয়েশিয়া সফর করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি দেশে তিনি একাধিকবারও গিয়েছেন।

আলমের সঙ্গে আটক হওয়া আব্দুল মজিদের জন্ম সৌদিআরবের মক্কায় ১৯৮৩ সালের ৩০ অক্টোবর। তার পিতার নাম আব্দুল আহাদ। তাদের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায়।

বাংলাদেশি পাসপোর্টধারি আব্দুল মজিদ থাকেন সৌদিআরবে। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি একবার বাংলাদেশে আসেন। এরপর গত ৬ আগস্ট আবারও তিনি দেশে আসেন।

আব্দুল মজিদ বাহারাইন, ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, কাতারসহ বিভিন্ন দেশ চলতি বছর সফর করেছেন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আটক বাকি তিনজন পুলিশকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। আটক হওয়া মো.আমিন জানান, তিনি হাটহাজারি উপজেলার দেওয়ান নগর গ্রামের আহম্মদের ছেলে। তিনি একটি মসজিদের ইমাম।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো.হাছান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যৌথ সেল গঠন করে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের পর সব বিষয় পরিস্কার হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪

** পাকিস্তানি নাগরিকসহ জঙ্গি সন্দেহে আটক ৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।